বইমেলায় যাচ্ছ তো!

বইমেলায় গিয়ে এত্ত এত্ত বইয়ের মাঝে খুঁজে নিতে পারো তোমার প্রিয় বইটি।

মার্কিন লেখক মার্ক টোয়েনের ছিল ঘরভর্তি বই। একবার এক বন্ধু এল তাঁর বাড়িতে। ঘর দেখে সে তো অবাক! ঘরজুড়ে বই, কিন্তু বই রাখার জন্য কোনো শেলফ নেই! বন্ধুটি টোয়েনকে বলল, তোমার ঘরে এত বই, তবে কোনো শেলফ নেই কেন? তখন মার্ক টোয়েন উত্তর দিলেন, বইগুলো যেভাবে জোগাড় করেছি, শেলফ তো আর সেভাবে জোগাড় করতে পারব না। ঘটনাটা হলো মার্ক টোয়েন বইগুলো বিভিন্নজনের কাছ থেকে ধার নিয়ে আর ফেরত দেননি।

তবে অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আমরা এবার মার্ক টোয়েনের সেই ঘরভর্তি বইয়ের চেয়ে আরও অনেক বই একসঙ্গে দেখতে পাব—কমিকসের বই, ছড়া-ছবি কিংবা মজার মজার গল্পের বই, বিজ্ঞান কল্পকাহিনি আর অ্যাডভেঞ্চারের বই। তোমাদের সবার জন্য বিচিত্র সব বইয়ের পসরা সাজিয়ে আবারও শুরু হয়েছে বইমেলা। এবারের মেলায়ও তোমাদের দেখা হবে প্রিয় লেখকদের সঙ্গে। বই কিনে তাঁদের অটোগ্রাফ নেবে তোমরা, ছবি তুলবে তাঁদের সঙ্গে—আরও কত পরিকল্পনা যে গিজগিজ করছে মাথায়! তবে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পরের বছর ১৯৭২ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি এ মেলা যখন প্রথম শুরু হয়, আজকের মতো এমন সুন্দর স্টল ছিল না তখন, ছিল না এত চাকচিক্যও। এখন যেখানে মেলা বসে, সেই বাংলা একাডেমির বর্ধমান হাউসের সামনের বটতলায় একটি চট বিছিয়ে এবং মাত্র ৩২টি বই নিয়ে মুক্তধারা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী চিত্তরঞ্জন সাহা শুরু করেছিলেন মেলাটি।

অমর একুশে গ্রন্থমেলায় আমরা এবার মার্ক টোয়েনের সেই ঘরভর্তি বইয়ের চেয়ে আরও অনেক বই একসঙ্গে দেখতে পাব—কমিকসের বই, ছড়া-ছবি কিংবা মজার মজার গল্পের বই, বিজ্ঞান কল্পকাহিনি আর অ্যাডভেঞ্চারের বই।

হ্যাঁ, ভাষা আন্দোলনের মাসে শুরু হওয়া এ বইমেলার ইতিহাস অনেকটা রূপকথার মতো। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা সাহিত্য পরিষদ, পরবর্তীকালে যার নাম হয় মুক্তধারা প্রকাশনী, সেই প্রকাশনা সংস্থা থেকে বাংলাদেশি শরণার্থী লেখকদের বই প্রকাশ করেছিলেন চিত্তরঞ্জন সাহা। পরে এ বইগুলো দিয়েই বইমেলার শুরু। ১৯৭৬ সাল পর্যন্ত মেলা চলল চিত্তরঞ্জন সাহার একক প্রচেষ্টায়। এরপর ধীরে ধীরে আগ্রহী হলেন অন্য প্রকাশকেরাও। ১৯৭৮ সালে মেলা আয়োজনের সঙ্গে যুক্ত হলো বাংলা একাডেমি। ১৯৭৯ সালে মেলার সঙ্গে আরও যুক্ত হলো বাংলাদেশ পুস্তক প্রকাশনা সমিতি। সেই সময় থেকে বাংলা একাডেমি ও পুস্তক প্রকাশনা সমিতি মিলেই প্রতিবছর বইমেলা আয়োজন করে আসছে। দিনে দিনে এখন এটি হয়ে উঠেছে লেখক-প্রকাশক-পাঠকের মিলনমেলা।

খোশ দিলে ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বইমেলায় যাওয়ার জন্য তুমি তো এক্কেবারে প্রস্তুত, তাই না?