বন্ধুত্বের গল্প

বন্ধু ছাড়া কি একটা মুহূর্তও ভাবা যায়! বন্ধু তো কা‌ছের মানুষ, আপন মানুষ, যা‌কে ‌খুলে বলা যায় সবকিছু। বন্ধু সে-ই, ‌যে সুখে দুঃখে সব সময় আমাদের পা‌শে থা‌কে সাহস হ‌য়ে। দেয় অনু‌প্রেরণা। বন্ধুত্ব নি‌য়ে নির্মিত অসাধারণ কিছু চলচ্চিত্র দে‌খে সময় পার কর‌তে পারো।

ব্রিজ টু টেরাবিথিয়া

মুক্তির সাল: ২০০৭

‌জে‌সি এমন একজন কি‌শোর, স্কু‌লে যাওয়া–আসা আর বা‌ড়ি‌তে ফি‌রে হোমওয়ার্ক করাতেই সীমাবদ্ধ যার জীবন। অনেকগুলো ভাইবোন তার, ফলে মা–বাবাও বে‌শি খেয়াল রাখ‌তে পা‌রেন না তা‌দের। ভীষণ একা হ‌য়ে প‌ড়ে জে‌সি। তবে একা থাক‌তে তার ভা‌লোও লা‌গে ‌তার। পছ‌ন্দের ড্রয়িং খাতায় আঁকিবুঁ‌কি ক‌রেই সময় কেটে যায়। স্কু‌লেও কোনো বন্ধু নেই জেসির। পড়াশোনায় অম‌নো‌যোগী হ‌লেও মিউ‌জিক ক্লাস আর দৌড়ে বেশ আগ্রহী সে। দৌড়ে তা‌কে হারা‌তে পা‌রে না কেউ। ত‌বে এক‌দিন দৌড় প্রতি‌যোগিতায় ছে‌লে‌দের লাইনে দাঁড়ি‌য়ে প‌ড়ে তা‌দেরই সমবয়সী এক‌টি লম্বা মে‌য়ে। সবাই বাধা দেওয়া স‌ত্ত্বেও ‌সে ছে‌লে‌দের সঙ্গেই দৌড়া‌বে। আর যথা‌রীতি, সব ছে‌লে‌কে পেছ‌নে ফে‌লে প্রথম হয় সেই মে‌য়ে‌টি। বারবার প্রথম হ‌য়ে আসা ‌জে‌সির ভীষণ রাগ হয় মে‌য়ে‌টির ওপর। জে‌সি প‌রে জান‌তে পা‌রে,‌ লেস‌লি না‌মের এই মে‌য়ে‌টি নতুন এসে‌ছে তা‌দের ক্লা‌সে। জে‌সি এড়ি‌য়ে যে‌তে চাইলেও লেস‌লিই জে‌সির সঙ্গে মেশার চেষ্টা ক‌রে। তারপর দুজন যখন ভা‌লো বন্ধু হ‌য়ে যায়, তখন জে‌সি আবিষ্কার ক‌রে এক অজানা জগৎ‌কে। লেস‌লি বাবা–মা‌য়ের একমাত্র সন্তান হওয়ায় তার কা‌ছে ছিল অনেক রকম বই, নতুন নতুন অনেক কিছু। বন্ধুর কাছ থে‌কে নতুন নতুন জি‌নিস জান‌তে পেরে জে‌সিও অ্যাড‌ভেঞ্চারপ্রিয় হ‌য়ে ওঠে। তারপর লেসলি তা‌কে নি‌য়ে যায় তা‌দের বাসার পেছ‌নের ব‌নে। যেখা‌নে লু‌কি‌য়ে ছিল অজানা এক জাদুর রাজ্য। নাম টেরাবি‌থিয়া। প্রতি‌দিন স্কুল শে‌ষে তারা ছু‌টে যেত জাদুর রা‌জ্যে। তারপর হঠাৎ বদলে গেল সব। এমন একটা ঘটনা ঘটল যা তছনছ করে দিল জেসির জগৎটাকে। অকল্পনীয় সেই ঘটনায় বদলে গেল জেসির জীবনটাই।

মার্কিন লেখক ক্যাথরিন প্যাটারসনের 'ব্রিজ টু টেরাবিথিয়া' উপন্যাসের উপর ভিত্তি করে নির্মিত এই ছবিটি দেখতে বসলে শেষ না করে উঠতেই পারবে না।

আলফা

মু‌ক্তির সাল: আগস্ট ২০১৮

অন্য রকম বন্ধুত্বের গল্প এটা। সভ্যতার শুরু‌তে মানুষ কীভা‌বে তার এক বন্ধু‌কে আবিষ্কার কর‌ল গল্পটা তা নিয়েই। আজ থেকে ২০ হাজার বছর আগের কথা, যে যুগে পশু শিকার কর‌ত মানুষ। খাবার কিংবা আত্মরক্ষায় পশুর সঙ্গে লড়াই করেই টিকে থাকতে হতো মানুষকে। লড়াইটা হতো দলবদ্ধ হয়ে। সে সময়ে দ‌লের সঙ্গে প্রথম পশু শিকা‌রে গেল এক কি‌শোর। তারপর এমন একটা ঘটনা ঘটল, যা কল্পনাও করেনি দলের কেউ। দল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল কিশোর। এবার শুরু হলো অন্য লড়াই। যেভাবেই হোক, ফিরে যেতে হবে নিজের ঠিকানায়। সঙ্গে তার শত্রু একটা আহত নেকড়ে! শুরু হলো দুজনের বেঁচে থাকার সংগ্রাম। বন্য প্রতিকূলতায় খাদ্যহীন এই ছে‌লে‌টি কি পারবে ফিরে যেতে? জানতে হলে দেখতে হবে আলবার্ট হিউজ পরিচালিত চলচ্চিত্রটি।

দ্য বয় ইন দ্য স্ট্রাইপড পাজামাস

মু‌ক্তির সাল: ২০০৮

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নির্মিত হৃদয়স্পর্শী এই চলচ্চিত্রটি। তবে শুধু যুদ্ধের ভয়াবহতা নয়, বন্ধুত্বেরও গল্প এটি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলছে, নাৎসি বাহিনী নির্বিচারে হত্যা করছে ইহুদিদের। ব্রু‌নো না‌মের ৮ বছর বয়সী ছে‌লেটা‌কে বা‌র্লিন ছে‌ড়ে তার প্রিয় খেলার সাথি‌দের ছে‌ড়ে যে‌তে হচ্ছে। কারণ, বদলি করা হয়েছে তার বাবাকে। জার্মান সামরিক বাহিনীতে চাকরি করেন ব্রুনোর বাবা। খুব সুন্দর একটা বা‌ড়ি‌তে গিয়ে ওঠে তারা। কিন্তু সেখা‌নে খেলার সাথি ছিল না ব্রুনোর। এক‌দিন ঘুরতে ঘুরতে বা‌ড়ির পা‌শে তারকাঁটায় ঘেরা একটা এলাকা

আবিষ্কার করে সে।

সেখানকার সবার পরনে একই রকম স্ট্রাইপ দেওয়া পোশাক। তেমনই একটা ছে‌লে‌র সঙ্গে দেখা হয় ব্রুনোর। কাঁটাতা‌রের দুই পা‌শে থাকলেও ক্রমেই দুজনের মধ্যে বন্ধুত্ব গড়ে ওঠে। দুজন দুই পা‌শে ব‌সে খেলে, কিন্তু কেউই জানে না ‌কেন এমন অদ্ভুত পোশাক পরিয়ে রাখা হয়েছে তাদের। কেনই–বা একজন কাঁটাতারের বাইরে আর একজন ভেতরে। এক‌দিন ব্রুনো ঠিক করে, কাঁটাতার পে‌রি‌য়ে ঘুরে আসবে ওপারের জায়গাটা। একদিন সত্যি সত্যি কাঁটাতারের ওপাশটায় চলে গেল ব্রুনো। কিন্তু সে জানত না কী বিপদ অপেক্ষা করছে সেখানে। তোমরা নিশ্চয়ই জানতে চাও, তাহলে আজই দেখে ফেলো মার্ক হারম্যান পরিচালিত চলচ্চিত্রটি।

অ্যা‌লিস থ্রু দ্য লু‌কিং গ্লাস

মুক্তির সাল: ২০১৬

আমা‌দের মতোই স্বাভা‌বিক জীবন যাপন করা এক কি‌শোরী অ্যা‌লিস। কিন্তু জাদুর রাজ্যের রানি হোয়াইট কুইনের সঙ্গে অদ্ভুতভা‌বে প‌রিচয় হয়। সেই রা‌জ্যে তার কিছু সময় কাটা‌নোর গল্প দেখা‌নো হয় অ্যা‌লিস ইন ওয়ান্ডারল্যান্ড চলচ্চিত্রে। সেই প্রথম ওয়ান্ডারল্যা‌ন্ডে গিয়েই অ্যালিসের প‌রিচয় হয় হ্যাটারের সঙ্গে। যে খুব সুন্দর সুন্দর হ্যাট তৈরি কর‌তে পা‌রে। তা‌কে অনেক বিপদ থে‌কে রক্ষা ক‌রে হ্যাটার। তারপর খুব ভালো বন্ধু হয়ে যায় তারা। সেই বন্ধুর বিপ‌দের সময় তা‌কে সাহায্য কর‌তে অ্যা‌লিস আবার চ‌লে যায় সেই রা‌জ্যে, এক‌টি জাদুর আয়নার মধ্য দি‌য়ে। হ্যাটারের প‌রিবার‌কে এক‌টি কাচের ফ্রে‌মে ব‌ন্দী ক‌রে রা‌খে লাল রানি। এদি‌কে হ্যাটারও মৃত্যুপথযাত্রী। হ্যাটার‌ ও তার প‌রিবার‌কে বাঁচা‌তে হ‌লে অ্যা‌লিস‌কে যে‌তে হ‌বে সম‌য়ের বিপরী‌তে। এ জন্য সে যায় টাইম মে‌শি‌নের কা‌ছে। কিন্তু তার সব কথা শু‌নে টাইম মে‌শিন অতী‌তে ফি‌রে যে‌তে রা‌জি নয়। কারণ সম‌য়ের বিপরী‌তে গে‌লে, পৃ‌থিবী বে‌শিক্ষণ টি‌কে থাক‌বে না, ধ্বংস হ‌য়ে যা‌বে। কিন্তু অ্যা‌লিস তার বন্ধু ও তার প‌রিবার‌কে বাঁচা‌তে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। টাইম মেশিন কি রাজী হবে অ্যালিসের বন্ধুদের বাঁচাতে? অ্যা‌লিসও কি পারবে তার বন্ধু‌কে আর বন্ধুর পরিবারকে বাঁচাতে? জান‌তে হ‌লে দেখ‌তে হ‌বে অ্যা‌লিস থ্রু দ্য লু‌কিং গ্লাস চলচ্চিত্রটি। বিখ্যাত লেখক লুই ক্যারলের চরিত্রগুলোর ওপর ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে চলচ্চিত্রটি। পরিচালনা করেছেন জেমস ববিন।