বন্ধুর ডাকে বন্ধু

অনেক সময় এমন হয় না, বন্ধুরা আমাদের বিদঘুটে এবং অদ্ভুত নামে ডাকে? আর নামটা শুনলেই বেশ রাগ হয়? শুধু তোমার ক্ষেত্রে এমন হয়, ব্যাপারটা তা নয়। স্বয়ং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোকে তার বন্ধুরা উদ্ভট নামে ডাকত! খেলার সময় বল না পেলেই রোনালদো নাকি কান্না জুড়ে দিত, তাই তাকে সবাই ডাকত ‘ক্রাইবেবি’ নামে। বন্ধুদের এ রকম নাম দিয়ে খ্যাপানোর অত্যাচার মেনেই নিতে হয় কিছুটা। আর যা–ই হোক, বিপদে–আপদে বন্ধুরাই এগিয়ে আসে সবার আগে। আচ্ছা, ভেবে দেখো তো, মানুষ যেমন একে অপরকে নাম ধরে ডাকে, প্রাণীরাও কি নিজেদের কোনো নামে ডাকে? যদি ডেকেই থাকে, তবে সে নামটা কেমন?

প্রাণীদের ভাষা জানা থাকলে সেটা অবশ্য বলে দেওয়া যেত। তবে ইউনিভার্সিটি অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়ার জীববিজ্ঞানী স্টিফেনি কিংয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, ডলফিনরা একে অপরকে বিশেষ সংকেতে ডাকে। ‘বটলনোজ’ ডলফিনের বিভিন্ন সংকেত বা হুইসেল রেকর্ড করে এই পরীক্ষণ চালান কিং। ডলফিনরা যে শুধু বিশেষ সংকেত দিয়ে বন্ধুদের বিপদে-আপদে ডাকে, এমন নয়। তারা শত্রুদেরও আলাদা সংকেতের মাধ্যমে চিহ্নিত করে। এমনকি কোনো দলের প্রতিটি ডলফিনের জন্য নির্দিষ্ট সংকেত থাকে। এই সংকেতগুলোই মূলত নাম। ডলফিনের ভাষা বোঝা গেলে হয়তো দেখা যেত, মানুষ যখন ডলফিনদের নিজেদের দেওয়া নামে ডাকে, তখন কোনো ডলফিন এসে বলত, ‘এক্সকিউজ মি! আপনি আমাকে এ নামে ডাকছেন কেন? বন্ধুরা আমাকে অমুক বলেই ডাকে, আপনিও আমাকে সেটিই ডাকতে পারেন।’

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেইলি সুইফট গবেষণা করে দেখেছেন, কাকেরা অন্য কাকের মৃত্যুতে সবাই জড়ো হয় এবং বিকট শব্দে কা কা করে ডাকতে থাকে।

সর্বদা হাসিমুখে থাকা এই প্রাণী শুধু যে একে অপরকে নাম ধরে ডাকতে পারে, এমন নয়। ডলফিনকে মনে করা হয় পশু–প্রাণীদের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান। ২০ বছর কিংবা তারও বেশি সময় তারা মনে রাখতে পারে একে অপরের নাম। তাদের আরেকটি অদ্ভুত ব্যাপার হলো, তারা এক চোখ খোলা রেখে ঘুমায়। চোখ খোলা রাখার উদ্দেশ্য হলো, বিপদ–আপদের ব্যাপারে নজরদারি করা। আর অন্য চোখ দিয়ে ঘুমাতে ঘুমাতেই তারা অর্ধেক মস্তিষ্ককে বিশ্রাম দেওয়ার কাজটা সেরে নেয়। আবার যথাসময়ে বাকি অর্ধেক মস্তিষ্কও একইভাবে বিশ্রাম নেয়। যদি কোনো বিপদ আঁচ করতে পারে, তখন বন্ধুদের ডাকতে শুরু করে নাম ধরে!

ডলফিন ছাড়াও বন্ধুর বিপদে সাড়া দেয় আরেকটি প্রাণী। কাকের কথা বলছি। ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের কেইলি সুইফট গবেষণা করে দেখেছেন, কাকেরা অন্য কাকের মৃত্যুতে সবাই জড়ো হয় এবং বিকট শব্দে কা কা করে ডাকতে থাকে। সুইফটের ধারণা, অন্য কাকেরা কোনো কাকের মৃত্যু থেকে মূলত বিপদ সম্পর্কে ধারণা নেয়, যেন নিজেরা সেই বিপদটি এড়াতে পারে।

কাক কিংবা ডলফিন যেভাবেই ডাকুক না কেন, মূল বিষয় বন্ধুর বিপদে এগিয়ে আসা। মানুষের বিপদে এগিয়ে আসার চর্চাটা চাইলে তুমিও করতে পারো কিন্তু।

তথ্যসূত্র: ন্যশনাল জিওগ্রাফিক ডটকম, এনবিসি ডটকম, বিবিসি ডটকম, হাউ স্টাফ ওয়ার্কস ডটকম।