বাজারে গেল ক্যাঙারু

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

বনের ঠিক মাঝখানে সেই সকাল থেকে মিটিং চলছে।

মিটিংয়ে কে নেই! বাঘ, ভালুক থেকে শুরু করে ছোট পিঁপড়া পর্যন্ত সবাই আছে। মিটিং হচ্ছে বাজারে কে যাবে তা ঠিক করার জন্য। বনের পশুপাখিদেরও তো চা, কফি, চিপস, চকলেট খেতে ইচ্ছে করে। ওগুলো আবার মানুষের বাজার ছাড়া আর কোথাও পাওয়া যায় না। ওদের বাজারে গিয়ে কিছু কিনে নিয়ে আসা তো সহজ কাজ নয়। সবাই জানে, মানুষ অনেক চালাক। আর এ কারণেই বোধ হয় বনের কেউ বাজারে যেতে রাজি হচ্ছে না।

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে নামে। শিয়াল উঠে দাঁড়িয়ে বলল,

‘সমাধান পেয়ে গেছি।’

সবাই একসঙ্গে চিৎকার করে জানতে চাইল, ‘কী সমাধান? কী সমাধান?’

শিয়াল বলল, ‘বাজার করতে যাবে ক্যাঙারু।’

শুনে ক্যাঙারু হা হা করে উঠল, ‘আমি! এত এতজন থাকতে আমি কেন?’

নিচু গলায় সজারু জানতে চাইল, ‘তাই তো, ক্যাঙারু কেন?’

শিয়াল মুচকি হেসে বলল, ‘বাজার করতে গেলে সঙ্গে করে টাকা নিতে হয়। ক্যাঙারু ছাড়া আর কারও কি পকেট আছে?’

এবার বনের সবাই বলে উঠল, ‘না, না, নেই তো।’

তারপর আর কী! ক্যাঙারু মুখ কালো করে তার পেটের কাছে থাকা পকেটের দিকে তাকাল। তাকিয়ে মিনমিন করে রাজি হলো বাজারে যেতে।

পরদিন সকালে ক্যাঙারু পকেটে টাকা নিয়ে বাজারের দিকে রওনা হলো।

লোকালয়ের কাছাকাছি এসে ক্যাঙারুর ভয় ভয় করতে লাগল। চালাক মানুষের ভয়। বাজারে ঢুকে লিস্ট মিলিয়ে জিনিসপত্র কিনতে হবে। ক্যাঙারু ভাবল, আগে দোকানগুলো ঘুরে ঘুরে দেখা যাক। এত ভিড় দেখে ক্যাঙারু বুঝতে পারছে না সবাই বাজারে চলে এল কি না! অনেক ঘুরে ক্যাঙারু একটা দোকানের সামনে এসে দাঁড়াল। ক্যাঙারুর লিস্ট হাতে নিল দোকানি। চা-পাতা, কফি, মুড়ি, সন্দেশ, শিঙাড়া, সমুচা...কত কী! দোকানি গম্ভীর মুখে সব সদাই একটা ব্যাগে ঢোকাতে লাগল। শেষ করে বলল,

‘দাম হয়েছে মোট ১ হাজার ৩৮০ টাকা।’

টাকা দেবে বলে ক্যাঙারু পকেটে হাত ঢোকাল।

ক্যাঙারু আবার বাজারের দিকে রওনা হলো। পকেটে করে টাকা নিল। ক্যাঙারুর বাচ্চাটা পকেটের ভেতর লুকিয়ে বসে থাকল।

এ কী! পকেট তো ফাঁকা! তার মানে কোনো দুষ্ট মানুষ তার পকেট মেরে দিয়েছে। ক্যাঙারু মাথা ঘুরে পড়ে গেল।

একজন ভালো মানুষ ক্যাঙারুর মুখে পানির ছিটা দিল। তাতে ক্যাঙারুর জ্ঞান ফিরল। চোখ মেলে তাকানোর পর ভালো মানুষটি সান্ত্বনা দিয়ে বলল,

‘কী করব বলো! বাজারে কয়েকটা দুষ্ট পকেটমার আছে। ওদের যন্ত্রণায় আমাদেরও জীবন অতিষ্ঠ। ধরতে পারলে সোজা পুলিশের কাছে দিয়ে দেব।’

ক্যাঙারু আর কী করবে! মন খারাপ করে খালি হাতে বনে ফিরে এল। ঘটনা শুনে বনের সবাই বলল, ‘আহহা ক্যাঙারু, তুমি আরও সাবধান হলে না কেন? মানুষ যে চালাক, সেটা তুমি জানো না?’

পরদিন আবার টাকা দিয়ে ক্যাঙারুকে পাঠানো হলো বাজার করতে।

ক্যাঙারু আজ খুব সাবধান। প্রায় সারাক্ষণই হাত দিয়ে পকেট ঢেকে রেখেছিল। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। চালাক মানুষ কীভাবে যেন আবারও তার পকেট মেরে দিল।

পরপর দুই দিন টাকা খোয়ানোর কারণে বনে আবার জরুরি মিটিং ডাকা হলো।

ক্যাঙারু কীভাবে পকেটমারের হাত থেকে বাজারের টাকা বাঁচাবে? সবাইকে জিজ্ঞেস করা হলো। সবাই মাথা চুলকাল। কিন্তু কেউই সমাধান দিতে পারল না। সিদ্ধান্ত ছাড়াই মিটিং শেষ হয়ে গেল। বাসায় ফিরে ক্যাঙারু মন খারাপ করে বসে আছে। ক্যাঙারুর বাচ্চা এগিয়ে এসে বলল,

‘আমি একটা বুদ্ধি দিতে পারি।’

বাচ্চাটি তার পরামর্শ বলল। শুনে ক্যাঙারু বলল,

‘এই বুদ্ধি কি কাজে লাগবে? মানুষগুলো যা চালাক!’

পরদিন ক্যাঙারু আবার বাজারের দিকে রওনা হলো। পকেটে করে টাকা নিল। ক্যাঙারুর বাচ্চাটা পকেটের ভেতর লুকিয়ে বসে থাকল।

ক্যাঙারু চোখ-কান খোলা রেখে খুব সাবধানে বাজারে ঘুরছে। জিনিসপত্র দেখছে। হঠাৎ একটা ভিড় তৈরি হলো ওর চারপাশে। ক্যাঙারু কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখল একটা লোক ‘বাবাগো মাগো, গেলাম গো’ বলে চিত্কার করছে। আর লোকটার হাতের আঙুলে শক্ত করে কামড় দিয়ে ঝুলে আছে ক্যাঙারুর বাচ্চাটা।

আশপাশের মানুষজন সঙ্গে সঙ্গেই বুঝতে পারল ব্যাপারটা। আরে! এই লোকই তাহলে পকেটমার! প্রায়ই এর-ওর পকেট মারে! পুলিশ এসে পকেটমারকে ধরে নিয়ে গেল। যাওয়ার আগে ক্যাঙারুর বাচ্চার বুদ্ধির অনেক প্রশংসা করল আর বাহবা দিল। ক্যাঙারু আর ক্যাঙারুর বাচ্চা সেদিন অনেক বাজার করে বনে ফিরল।

এরপর থেকে ক্যাঙারু শুধু বাজারে নয়, যেখানেই যায় বাচ্চাটাকে পকেটে পুরে সঙ্গে নিয়ে যায়। শুধু একটা ব্যাপার নতুন। এখন আর বাচ্চাটা পকেটে লুকিয়ে থাকে না। পকেট থেকে সারাক্ষণই মাথা বের করে আশপাশের সবকিছু দেখতে দেখতে যায়। আর কুটুর কুটুর করে গল্প করে।