বাহারি সাইকেল

শহর থেকে গ্রাম, পাহাড় থেকে নদী কিংবা বালুতে ঘেরা চর থেকে পিচঢালা পথ—আমাদের দেশের প্রতিটি প্রান্তের মানুষের জন্য এক অনবদ্য বাহন হলো সাইকেল। সাইকেলে চড়ে মানুষ যেমন পাহাড়ের চূড়ায় পৌঁছে গেছে, তেমনি নিত্যদিনের ব্যবহারেও মানুষের চিরসঙ্গী হয়েছে এই সাইকেল। সাইকেলের এত রকম ব্যবহার দেখে ইঞ্জিনিয়াররা বিভিন্ন রকম রাস্তায় চালানোর জন্য আলাদা ধরনের বাইসাইকেল বানিয়েছেন। কোনোটা চলে শক্তপোক্ত রাস্তায়। আবার কোনোটা চলে গরম বালুর ভেতরে। কিছু কিছু সাইকেল চালানো যায় পাহাড়ের বাঁক ধরে। আবার কিছু চলে মসৃণ সাইকেল রেসিং ট্র্যাকে। তাই সবকিছু মিলিয়ে চমৎকার নকশার সব সাইকেল পেয়েছি আমরা। চলো জেনে নেওয়া যাক এমন কিছু অভিনব সাইকেল নিয়ে।

রোড বাইসাইকেল

রোড বাইসাইকেল

সাধারণ রাস্তায় চালানোর কথা মাথায় রেখে ইঞ্জিনিয়াররা বিশেষভাবে নকশা করেছেন এই রোড বাইসাইকেলের। মসৃণ ফ্রেম আর সাধারণ মাপের চাকা দিয়েই বানানো হয় এই সাইকেল। অন্যান্য সাইকেলের তুলনায় এগুলোর ওজন অনেক কম। এগুলোর হ্যান্ডেল সামনের দিকে বাঁকানো থাকে। ফলে চালক নিজের ওজনের অনেকটাই সাইকেলের সামনের দিকে ছড়িয়ে দিতে পারে। সাধারণ রাস্তায় চালানোর পাশাপাশি হাইওয়েতে চালানোর জন্যও বেশ উপযোগী এ ধরনের সাইকেল।

ফিক্সড গিয়ার বাইসাইকেল

ফিক্সড গিয়ার বাইসাইকেল

আন্তর্জাতিক পর্যায়ে সাইকেল রেসিংয়ের ক্ষেত্রে বাঁকানো ট্র্যাক হিসেবে ব্যবহার করা হয় ভেলোড্রোম। ভেলোড্রোম চালানোর জন্য বিশেষভাবে বানানো হয় ফিক্সড গিয়ার বাইক। সাধারণ ফ্রেমে বানানো এই সাইকেলে ব্যবহার করা হয় একটি মাত্র গিয়ার। ফলে সাইকেল সামনে এগোতে হলে অবশ্যই চালককে প্যাডেলিং চালিয়ে যেতে হবে। এ জন্য অনেক চালক এ ধরনের সাইকেলে ব্রেকও ব্যবহার করে না। কারণ এর গিয়ারই সাইকেল থামাতে সাহায্য করে। চালকের কৌশলের ওপর নির্ভর করে সাইকেলের হ্যান্ডেলের গঠনও পরিবর্তন করা যায়।

ক্রুইসার বাইসাইকেল

ক্রুইসার বাইসাইকেল

হাইব্রিড বাইসাইকেলের মতোই চালকের আরামের কথা মাথায় রেখে বানানো হয়েছে ক্রুইসার বাইক। এগুলোর হ্যান্ডেল কিছুটা বাঁকিয়ে পেছনের দিকে রাখা হয়। যেন সাইক্লিস্ট সহজেই সিটে বসে হ্যান্ডল ধরে সাইকেল নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। পুরোনো সাইকেলগুলোর মতো এই সাইকেলের প্যাডেল পেছন দিকে ঘোরালে তা সাইকেলের ব্রেকের মতো কাজ করে। রৌদ্রোজ্জ্বল বিকেলে সমান রাস্তায় এই সাইকেলে চড়ে হাওয়া খেতে বের হতে পারে যে কেউ। আর রংবেরঙের ফ্রেমে সাজানো এই সাইকেলের সামনে ঝুড়ি লাগিয়ে তাতে তোমার পোষা প্রাণীকেও ঘোরাতে নিয়ে যেতে পারো।

মাউন্টেন বাইসাইকেল

মাউন্টেন বাইসাইকেল

নাম শুনেই বোঝা যাচ্ছে যে উঁচু–নিচু পাহাড়ের গা ঘেঁষে ছুটে চলতে ব্যবহার করা হয় মাউন্টেন বাইক। কম গিয়ার ব্যবহার করে বানানো এই সাইকেল দিয়ে পাহাড়ের ঢালুর বাঁক দিয়ে উঠে যাওয়া যায় অনায়াসে। উঁচু–নিচু রাস্তার ঝাঁকি সামলাতে সাইকেলগুলোর সামনে ও পেছনে থাকে সাসপেনশন। সাসপেনশন ছাড়া মাউন্টেন বাইকগুলোকে বলা হয় রিজিড। সাসপেনশন যুক্ত থাকায় চালক এবড়োখেবড়ো রাস্তায় বেশি ব্যথা পাবে না। সাধারণ রাস্তায় ব্যবহার করা গেলেও অন্য সাইকেলগুলোর তুলনায় বেশ ভারী হয় মাউন্টেন বাইক।

ফ্যাট বাইসাইকেল

ফ্যাট বাইসাইকেল

ভেজা স্যাঁতসেঁতে এলাকায় চালানোর জন্য সবচেয়ে উপযোগী হলো ফ্যাট বাইসাইকেল। মাউন্টেন সাইকেলের আরেকটু শক্তপোক্ত সংস্করণ এটি। প্রায় ২ থেকে ৩ ইঞ্চি মোটা হয় এই সাইকেলের চাকা। ফলে ভেজা স্থানেও সাইকেলের ভারসাম্য হারানোর সুযোগ কম থাকে। তা ছাড়া ফ্যাট বাইসাইকেলের ফ্রেমের ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা হয় আলাদা নকশা। ওজনে তুলনামূলক একটু বেশি হওয়ায় ব্যায়ামের জন্যও অনেক সাইক্লিস্ট এটি ব্যবহার করেন। ফ্যাট বাইসাইকেলের হ্যান্ডেল সমান থাকে। ফলে চালক সহজেই তার ওজন গোটা সাইকেলের ওপরে ছড়িয়ে দিতে পারে।

হাইব্রিড বাইসাইকেল

হাইব্রিড বাইসাইকেল

রোড বাইসাইকেল আর মাউন্টেন বাইসাইকেলের বিভিন্ন সুবিধা এক করে বানানো হয়েছে হাইব্রিড বাইসাইকেল। উঁচু সিট আর সমানভাবে বসানো হ্যান্ডেল মিলিয়ে অনবদ্য এক বাইসাইকেল এটি। কম দূরত্বের রাস্তায় ব্যবহারের জন্য বেশ আরামদায়ক এই হাইব্রিড বাইসাইকেল। তবে উঁচু–নিচু বা পাহাড়ি রাস্তায় চালানোর জন্য মোটেও এটি ব্যবহার করা যাবে না। কম দৈর্ঘ্যের চাকা ব্যবহারের ফলে এই সাইকেলে দ্রুতগতিতে ব্রেক চেপে ধরলেও সাইকেল থামানো বেশ মুশকিল। তবে সামান্য ঝাঁকি সামলে নিতে কিছু কিছু হাইব্রিড বাইসাইকেলে সাসপেনশন ব্যবহার করা হয়।

বিএমএক্স বাইসাইকেল

বিএমএক্স বাইসাইকেল

ছোট ছোট চাকা আর সমান গঠনে বানানো ফ্রেমে এই বাইসাইকেল দেখলে যে কেউ ভাববে যে এটি বাচ্চাদের সাইকেল। তবে বাচ্চাদের পাশাপাশি বড়দের কাছেও সমান জনপ্রিয় এই বিএমএক্স বাইসাইকেল। আকারে ছোট হওয়ায় সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা যায় এই সাইকেল। শক্ত গঠনের কারণে স্টান্ট ও নানা রকম কসরতের জন্য বড় বড় সাইক্লিস্টের প্রিয় বিএমএক্স সাইকেল। ফ্যাট বাইসাইকেলের মতো মোটা চাকা আর রিজিড মাউন্টেন বাইসাইকেলের অনুকরণে বানানো এটি।

ট্যান্ডেম বাইসাইকেল

ট্যান্ডেম বাইসাইকেল

ব্যস্ত শহরগুলোর এত এত যানবাহনের ভিড়ে সাইকেল নিরাপদে পার্ক করে রাখা বেশ দুষ্কর। আর সাইকেল নিয়ে দূরে কোথাও ঘুরতে গেলে খাবারের দোকানে ঢোকার আগে সাইকেল কোথায় রাখতে হবে, সেটা খোঁজাও আরেক সমস্যা। ভ্রমণপিয়াসী সাইক্লিস্টদের কথা মাথায় রেখে তৈরি করা হয়েছে ফোল্ডিং বাইসাইকেল। কোথাও পৌঁছে ভাঁজে ভাঁজে গুটিয়ে নিয়ে ব্যাগে পুরে ফেলা যায় এই ফোল্ডিং সাইকেল। ছোট আকারের চাকা আর একটু লম্বাটে ধরনের হ্যান্ডেল হওয়ায় স্বাভাবিকের তুলনায় এই বাইসাইকেল চালাতে একটু বেশিই খাটনি হয় সাইক্লিস্টদের। তবে যেখানে খুশি সেখানে নিয়ে যাওয়ার এই অভিনব উপায়কেই সেরা বলে মনে করেন ফোল্ডিং বাইসাইকেলের সাইক্লিস্টরা।

ট্যান্ডেম বাইসাইকেল

ট্যান্ডেম বাইসাইকেল

একা একা বাইসাইকেল চালাতে কার ভালো লাগে বলো? তাহলে সঙ্গী কাউকে সঙ্গে নিলেই হয়। উঁহু, তাহলে তো আবার আরেকটি বাইসাইকেল লাগবে। তাহলে বন্ধুকেও পেছনেই বসিয়ে নাও না বাপু! সেটাতেও তো আর দুজনে সাইকেল চালানো হলো না। এসব সমস্যার সমাধান করতে ইঞ্জিনিয়াররা বানিয়েছেন দুজন একসঙ্গে চালাতে পারে এমন বাইসাইকেল। যার নাম ট্যান্ডেম বাইসাইকেল। মূল চালকের পেছনেই আবার সিট বসিয়ে দেওয়া হয়েছে দ্বিতীয় চালকের জন্য। দুটি আলাদা প্যাডেল চাকায় চেইন লাগিয়ে দেওয়া আছে। ফলে দুজনের প্যাডেলের জোরেই সমানতালে এগিয়ে চলে ট্যান্ডেম সাইকেল। প্রশস্ত ফ্রেমে বানানো এই সাইকেল চালানো যায় যেকোনো স্বাভাবিক রাস্তায়। সাইকেলের প্যাডেল ঘোরানোর ব্যবস্থা দুই চালকের থাকলেও সাইকেলের হ্যান্ডল কিন্তু নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে শুধু সামনে বসা চালকই। তাই পেছনের চালককে সামনের চালকের মর্জিমতোই এগোতে হবে গন্তব্যের দিকে।