বেলুনওয়ালা

অলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

‘বাবা! দেখো, কত সুন্দর বেলুন! আমাকে একটা কিনে দাও না।’

‘তুমি বেলুন নেবে? চলো।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ক্যাম্পাসটা খুবই সুন্দর। অপরূপ সৌন্দর্যে ঘেরা। রাস্তার ধারে একটি বড় গাছের নিচে দাঁড়িয়ে আছে জীর্ণশীর্ণ পোশাক পরা একজন বেলুনওয়ালা। তার হাতে রঙবেরঙের বেলুন। সে হাঁকিয়ে যাচ্ছে,

‘বেলুন নেবে! বেলুন!’

বাবা বেলুনওয়ালার কাছে এসে বললেন,

‘কত?’

‘বিশ টাকা।’

‘কোনটা নেবে, সোনা?’

‘ওই যে...ওই লালটা।’

বেলুনওয়ালা মেয়েটির হাতে একটি লাল বেলুন দিল। বেলুনওয়ালাকে টাকা দিয়ে সেখান থেকে চলে গেল ওরা। একে একে অনেক ছোট বাচ্চা লোকটার কাছ থেকে বেলুন কিনল। দেখতে দেখতে লোকটার হাতের সব বেলুন ফুরিয়ে গেল। বেলুনগুলোর বদলে তার হাতে থাকল কতগুলো টাকা। সন্ধ্যা প্রায় হয়ে এসেছে। তাই সে হাতের টাকাগুলো দিয়ে চাল-ডাল ও অল্প কিছু শুকনো খাবার কিনে বাড়ির উদ্দেশে রওনা দিল। বাড়িতে আছে তার একটি ছয় বছরের মেয়ে। পথে চলতে চলতে তার মেয়ের মুখটি তার মনে পড়তে থাকে। প্রতিদিন কত বাবা-মা তাদের শিশুদের বায়নায় ও আনন্দের জন্য তার কাছ থেকে বেলুন কেনে। কিন্ত সে নিজের মেয়েকে কোনো দিনও একটি বেলুন দিতে পারেনি। অবশ্য সে কখনো বায়নাও করেনি। সে–ও জানে তাদের অভাবের সংসার। গরিব মানুষদের এত বায়না করতে নেই। এসব ভাবতে ভাবতে বেলুনওয়ালার চোখে জল এল। নিমেষেই সে সেই জলটাকে আবার অদৃশ্য করে ফেলল। অন্য শিশুরা যখন বেলুন পেয়ে হাসে, তখন সে যেন নিজের মেয়েটির হাসি দেখতে পায়। তখন বেলুনওয়ালা মনের মধ্যে পায় এক প্রশান্তি।

লেখক: দশম শ্রেণি, রেডিও কলোনি মডেল স্কুল, সাভার, ঢাকা