ভক্ত

আমি যখন ছোট ছিলাম তখন জাফর ইকবাল স্যারকে চিনতাম না। অথচ আমার আপু ওনার অন্ধ ভক্ত। সারা দিন জাফর ইকবাল, জাফর ইকবাল। আমি ভেবে পেতাম না এই জাফর ইকবাল মানুষটি আসলে কে? কেনই বা আমার আপু ওনার এত বড় ভক্ত? একটু বড় হওয়ার পর জানতে পারলাম এই জাফর ইকবাল মানুষটি আসলে একজন লেখক। তাঁর লেখা পড়েই আমার আপু তাঁর এত বড় ভক্ত। আমি তাও বুঝতাম না। একজন মানুষ লেখক ভালো কথা। তাঁর জন্য এত পাগল হওয়ার কী আছে? আসলে তখন আমি মাত্র স্কুলে ভর্তি হয়েছি। এত কিছু আমার বোঝার কথাও না।

একদিন আমি গেলাম বইমেলায়। সেখানে দেখলাম জাফর ইকবাল স্যারের একটা বই ভূতের বাচ্চা কটকটি। নামটা আমার কাছে বেশ মজার বলে মনে হলো। আমি বইটা কিনলাম। এটাই ছিল জাফর ইকবাল স্যারের লেখা আমার পড়া প্রথম বই। বইটা পড়ে আমি ওনার এমনই ভক্ত হয়ে গেলাম যে আপুর মতোই সারা দিন জাফর ইকবাল, জাফর ইকবাল করি। আপু আমাকে ওনার লেখা বাচ্চা ভয়ঙ্কর কাচ্চা ভয়ঙ্কর বইটা মুখে বলে শোনাল। আমি খুবই মজা পেলাম। এমনিতে আমি ছোটবেলা থেকেই অনেক বই পড়ি। কিন্তু জাফর ইকবাল স্যারের বই-ই সবচেয়ে বেশি পড়ি।

আট বছর বয়সের মধ্যেই আমি আমাদের বাসার জাফর ইকবাল স্যারের দুইটা কিশোর উপন্যাসসমগ্র পড়ে ফেললাম। দোকানে যাই। সবার আগে খোঁজ করি জাফর ইকবাল স্যারের বইয়ের। আমরা গাইবান্ধা জেলায় থাকতাম। ওখানের একটা দোকানের নাম ‘সংকলন’। সেখানে গিয়েই বলতাম, ‘আঙ্কেল, জাফর ইকবালের নতুন কোনো বই এসেছে?’ খুব অল্প সময়ের মধ্যেই আমি আপুর থেকেও বড় ভক্ত হয়ে গেলাম।

আরও একটা মজার ব্যাপার। আমি একদিন একটা কিশোর উপন্যাসসমগ্রের শেষে জাফর ইকবাল স্যারের ছবিটা দেখেই চমকে উঠলাম। অবিকল আমার বাবার মতো চেহারা। মনে হলো বাবারই ছবি। এমনকি আমার বান্ধবীরাও এই কথা বলে।

আজও আমি জাফর ইকবাল স্যারের বই পড়ছি। আজ পর্যন্ত আমার জীবনে অনেক কিছুই হওয়ার শখ আছে। তার মধ্যে একটা হলো জাফর ইকবাল স্যারের মতো লেখক হওয়া। এমনিতে আমি অনেক লেখকেরই অনেক বড় ভক্ত। কিন্তু জাফর ইকবাল স্যার তার মধ্যে অন্যতম। আশা করি, আমার এই শখটা পূরণ করতে কিআ ভাইয়া আমাকে সাহায্য করবে।