আমি বরাবরই ভিতু, ছোটবেলা থেকেই। তাই বলে আমি সাহসী হওয়ার চেষ্টা একবারের জন্যও ছেড়ে দিইনি। প্রতিবার প্রতি ক্ষেত্রে চেষ্টা করেছি সাহসী হওয়ার। ছোটবেলায় ঠাকুরমার ঝুলি ছিল আজকালকার হলিউড ভূতের সিনেমার মতো। যেদিন দেখতাম, সেদিন আমার রাতের ঘুম তার মামাবাড়ি বেড়াতে যেত। অন্যদিকে ভয় হানা দিত আমার মনের বাড়িতে। সারা রাত ঘুম আসা দূরে থাক, চোখ দুটো বড় বড় করে পাহারা দিতাম। ভূতগুলোও নাছোড়বান্দা। চোখ বন্ধ করলেই সব ভূত মিলে একত্রে ভয় দেখাবে মনের ভেতর। চোখ খুলে তাকালেই তারা উধাও। পরদিন ভাইয়ের পচানি তো নিত্যদিনের ব্যাপার। ‘তুই থাকতে বাসায় দারোয়ানের কী দরকার? বরং বিনা মূল্যে তুই পাহারা দিবি আর আমাদের মাসে মাসে টাকাটাও বেঁচে যাবে।’ এভাবে চলতে থাকল আমার প্রাত্যহিক জীবনযাপন। একদিন মনে হলো ব্যস, আর না। অনেক হয়েছে। আমাকে সাহসী হতেই হবে। যে করেই হোক। ভাবলাম ভূতের গল্প পড়ব। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলা যাকে বলে। অনেক বলার পর মা রাজি হলেন একটি বই কিনে দিতে। এই কথা আমার ভাইয়ের কানে পৌঁছাতে বেশিক্ষণ সময় নিল না। শুরু হলো তার মহান উক্তির নিঃসরণ।
‘কাকের কিনা কোকিল হওয়ার শখ’, ‘পারো না তুমি মাটি কাটতে ইচ্ছা তোমার পাহাড় কাটার’ ইত্যাদি। এগুলো অবশ্য কাবু করতে পারল না আমাকে। কিনলাম বই। নিজের কেনা প্রথম বই দিয়েই শুরু করলাম ভিতুর ডিম থেকে সাহসী হওয়ার কার্যক্রম। ধীরে ধীরে ভূতের গল্প বই বেশি করে পড়তে থাকলাম, যাতে সাহস বাড়তে থাকে। রেডিওতেও শুনলাম ভূতের গল্প। ভূতের সিনেমাগুলো দেখতে লাগলাম।
এখন আমি এমন সাহসী হয়েছি যে আমাকে যদি ভূতের বাড়িতে একা রাত কাটাতে বলে কেউ, তা-ও আমি নির্দ্বিধায় রাজি হব। ভূতের ভয় আমাকে কাবু করতে পারবেই না। উল্টো ভয় দেখাব ভূতকেই। যদিও আমার ভূতের সঙ্গে এখনো দেখা হয়নি। তোমরা দেখলে আমাকে জানিয়ো।