যে কাজ করছে কিশোর আলো

নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে কিশোর আলোর খুদে স্বেচ্ছাসেবকেরাফাইল ছবি

কিশোর আলো ছোটদের কাগজ। ছোটদের পত্রিকা কেনই–বা বলি, প্রায় সব বয়সের মানুষের প্রিয় এক কাগজ। সাত থেকে আট বছরে পদার্পণ করছে। যেদিন পত্রিকাটি প্রথম প্রকাশিত হয়, সেদিনটির কথা আমার খুব মনে পড়ে। একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কিশোর আলো প্রকাশিত হয়েছিল। কিন্তু তখনই কেন জানি আমার মনে হয়েছিল, যদিও খ্যাতনামা প্রথম আলোর ব্যানার থেকে বেরোচ্ছে, তবু এমন একটি কিশোর কাগজকে টিকিয়ে রাখা আমাদের দেশে খুব খুব কঠিন ব্যাপার। এটা মনে হওয়ার কারণ, ছোটদের কাগজ নিয়ে আমার দীর্ঘদিনের কাজ করার অভিজ্ঞতা, যা ছোটদের সংগঠনে সক্রিয় থাকা থেকে আহরিত। ছোটদের পত্রিকা দীর্ঘদিন ধরে টিকে থাকবে, এমন ইতিহাস খুব কম এ দেশে। বলা যায়, বিরল।

সেই কম ইতিহাসের নজিরের মধ্যেও নজর কেড়েছে কিশোর আলো। নজর কেড়ে নিয়েই তার আট বছরে পদার্পণ। গুণ বিচারেই সাতটি বছর পেরিয়ে এল পত্রিকাটি। একটা কথা শুরুতে বলেছি, কিশোর আলো শুধু ছোটদের নয়, বড়দেরও পাঠ্য বহু কিছুই আছে এর পাতায় পাতায়। শুধু নির্দিষ্ট একটা বয়সের জন্য পাঠযোগ্য কিছু সংযোজন করাই নয়, কিশোর আলোতে এমন অনেক কিছু আছে, যেটা বড়দেরও আকর্ষণ করে চট করে। এ ছাড়া অনেক খুদে পাঠককে যেটি মন ভোলাচ্ছে, সেটি মাঝবয়সীদেরও টেনে নিয়ে যাচ্ছে বিষয়বস্তুর গভীরে। শুধু কিশোর আলো নামাঙ্কিত বলে এর পরিমণ্ডলে কোনো সীমাবদ্ধতা আনা সমীচীন হবে না।

বড়, মাঝবয়সী, কিশোর—সবার আকর্ষণের কেন্দ্র কিশোর আলো। মূলত এটি একটি পারিবারিক কাগজ। আগেই বলেছি, এখানে এমন অনেক কিছু রয়েছে, যা যেকোনো বয়সের পাঠককে টানতে পারে।

আর আমি যদি একটু পেছন ফিরে তাকাই, এ দেশে কচি ও কাঁচা বলে একটি কাগজ বেরোত। টাপুর টুপুর নামেও বেরোত একটা কাগজ। অসম্ভব সুন্দর ছিল এসব পত্রিকা। সেই আমলেই পুরো আর্ট পেপারে ছাপা হতো টাপুর টুপুর। তাও ঢাকা থেকে নয়, বেরোত চট্টগ্রাম থেকে।

তারপর দৈনিক ইত্তেফাক-এর ‘কচি-কাঁচার আসর’কে কেন্দ্র করে প্রতিষ্ঠিত হলো কচি ও কাঁচার সংগঠন। তারপর প্রকাশিত হলো কচি ও কাঁচা পত্রিকা। এসব এখন ইতিহাস। আমি এগুলোর সঙ্গে খুব ঘনিষ্ঠভাবে জড়িত ছিলাম। এখন যাঁরা ছোটদের জন্য লিখছেন, তাঁদের অনেকেরই মূল প্ল্যাটফর্ম ছিল কচি ও কাঁচা পত্রিকা। রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই অসম্ভব যত্ন নিয়ে পত্রিকাটি প্রকাশ করতেন। পরম মমতায় পত্রিকার পাতায় ছাপতেন লেখাগুলো। সব কটি দৈনিক পত্রিকায় ছোটদের পাতা তো ছিলই, এখনো আছে। তবে এখন সেগুলো কতটা পাঠককে কাছে টানতে পারে, তা নিয়ে আমার সন্দেহ আছে।

আকাশসংস্কৃতিতে এখন বিনোদনের সম্ভার। অনেক রকম বাতায়ন খুলে গেছে। হাওয়া লেগেছে। টেলিভিশনে চলছে একের পর এক কার্টুন, অ্যানিমেশন। সিনেমা হলে প্রদর্শনের জন্য ছোটদের উপযোগী ছবি তৈরি হচ্ছে দেদার। দেখা যাচ্ছে নানা প্ল্যাটফর্মে। সেখানে পত্রিকার পাতা একজনকে কতটুকুই-বা টানতে পারে! এ অবস্থায় কিশোর আলো যেভাবে পাঠক ধরে রেখেছে এবং পাঠকদের সামনে রেখে প্রতি মাসে নতুন নতুন বিষয় পত্রিকার মধ্যে আনছে, সেটা অবশ্যই প্রশংসনীয়।

শুধু পত্রিকার পাতা দিয়েই নয়, কিশোর আলো নানা সজ্জায় নানা অনুষ্ঠান করে। দেশের কিশোর-কিশোরীদের নানাভাবে শিক্ষণীয় কথা বলার চেষ্টা করেছে। জানাতে চেষ্টা করেছে।

এই সময়ে তোমরা তোমাদের চোখে তোমাদের পৃথিবীটাকে দেখো। পৃথিবীটা অনেক আনন্দময়, আশ্চর্য আর বৈচিত্র্যে ভরপুর। সেটা যদি তুমি তোমার মনের মণিকোঠায় ঢোকাতে পারো, তবে হয়তো তোমার বয়সটাই বাড়বে। কিন্তু শৈশব হারিয়ে যাবে না। যে মানুষের শৈশব হারায় না, সে মানুষ বরাবরই প্রাণবন্ত থাকে। হয় মননশীল, সেই সঙ্গে সৃজনশীলও। কিশোর আলো সে কাজটিই করে যাচ্ছে।

ফরিদুর রেজা সাগর: শিশুসাহিত্যিক ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক