ছোটবেলায়, মানে স্কুলে পড়ার সময় তেমন একটা বই পড়ার অভ্যাস ছিল না আমার। সে সময় ব্যাডমিন্টন, ক্রিকেট এসব খেলা নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম। বই যে খুব গুরুত্বপূর্ণ কিছু তা তখন মনে হতো না। খেলার মাঠই ছিল সব। তবে এই মুহূর্তে খুব বেশি মন পড়ছে রবিনহুড বইটির কথা। তাঁকে নায়ক মনে হতো। মাঝে মধ্যে দুটা একটা যা বই পড়তাম সেগুলো গোয়েন্দানির্ভর। আংকেল টমস কেবিন, লে মিজারেবল বইও স্কুলে পড়ার সময় পড়েছিলাম।
তবে কলেজে উঠে প্রথম বই পড়ার নেশার বৃষ্টিতে ভেসে গেলাম। সারা বছরের ঝিরঝির বৃষ্টির মাঝে আষাঢ়ের মূল বৃষ্টি নেমে এল যেন! শেলির কবিতা, বিশেষ করে অ্যাডোনিস পড়ে ভালো লাগা শুরু হলো। মনের ভেতরে তোলপাড় শুরু হয় টু আ স্কাইলার্ক পড়ে। শেলির সব কবিতা তখন পড়ে ফেললাম। একই সময়ে শেকসপিয়ারের অ্যাজ ইউ লাইক ইট পড়লাম। মিলটনের সনেটও বেশ টানত আমাকে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় অবশ্য প্যারাডাইস লস্ট পড়েছিলাম। শুধু কবিতায় নয়, আমার ঝোঁক ছিল প্রবন্ধতে। কবিতা যেমন পড়েছি, একইভাবে প্রবন্ধও পড়েছি। নাটকও আগ্রহের বিষয় ছিল আমার কাছে। ইংরেজি সাহিত্য দিয়ে পড়া শুরু আমার সাহিত্যের জাহাজডুবি যেন হলো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পড়ার সময়। একেকটা লেখনিতে ডুবে গেলাম ধীরে ধীরে। প্রথম পড়া বই ছিল বিসর্জন। এরপর হাত বাড়ালাম গীতাঞ্জলির দিকে। এখনো গীতাঞ্জলির অর্ধেকের বেশি কবিতা আমার মুখস্ত। বলাকা বইটিও অসাধারণ।
ছোটবেলায় আমার এক বড় আপা উপন্যাস পড়তে নিষেধ করেছিলেন। উপন্যাসে প্রাপ্তবয়স্কদের কথা থাকে, প্রেম থাকে। সেই কারণে উপন্যাস পড়া কম হয়েছে। সেটা অবশ্য এখন পুষিয়ে দিয়েছি। এক বছর সময় পেলে যা যা পড়া হয়নি, তা পড়তাম। এখনো সময় পেলে রবীন্দ্রনাথের আগে পড়া কবিতা, প্রবন্ধ, গল্প, উপন্যাস আবার পড়ি। রবীন্দ্রনাথের ঋষিতুল্য সাদা দাঁড়ি আর শান্ত মুখশ্রী দেখে তাঁকে সাধারণ মানুষ হিসেবে ভ্রম হয়, তবে তিনি আসলে একজন শক্তিশালী লেখক। রবীন্দ্রনাথকে নিয়ে প্রভাত মুখোপাধ্যায়ের সোয়া দুই হাজার পৃষ্ঠার একটি বই পড়ছি এই মুহূর্তে। প্রতিদিনই যেন নতুন করে রবীন্দ্রনাথকে আবিষ্কার করছি, নতুন রূপে ধরা দিচ্ছেন আমার কাছে।