রবি-নজরুলের হাস্যকৌতুক

১.

রবীন্দ্রনাথ একবার ইউরোপে গেলেন। সেখানে বিজ্ঞানী আইনস্টাইনের সঙ্গে তাঁর সাক্ষাৎ ঘটে। আইনস্টাইন কবিগুরুকে উদ্দেশ করে ‘আপনাকে চিনেই ভারতবর্ষকে চিনলাম’ বলতেই কবিগুরু বলে উঠলেন, ‘ভুল হলো, ভারতবর্ষকে চিনতে পেরেছেন বলেই আমাকে চিনতে পারলেন।’ আইনস্টাইন এবার বললেন, ‘যথার্থই বলেছেন। আপনি হলেন ভারতবর্ষের মধ্যমণি, ভারতবর্ষের রবি।’

কবিগুরু হেসে বললেন, ‘আপনার দেশে কি রবির উদয় হয় না?’

‘আমার দেশে রবির প্রভাব সব সময়ই কম’, আইনস্টাইন হেসে জবাব দিলেন, ‘রবি দূরে এবং পাশে হেলে থাকেন কি না!’

কবিগুরু তখন মৃদু হাস্যে যোগ করলেন, ‘এবার থেকে দূরে নয়, পাশে পাশেই থাকব।’

২.

কলকাতায় গজেন্দ্রনাথ ঘোষের সাহিত্যিক আড্ডায় অনেকেই আসতেন। তো একদিন কাজী নজরুল ইসলামও এসেছেন। হঠাৎ বলা নেই-কওয়া নেই তিনি উঠে টেবিল থেকে বই, কাগজপত্র ইত্যাদি সরাতে লাগলেন; অতঃপর ধুলো ঝাড়তে শুরু করে দিলেন। সেখানে উপস্থিত পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় বলে উঠলেন, ‘এ আবার কী ধরনের পাগলামি?’

কাজী সাহেব গম্ভীর কণ্ঠে জবাব দিলেন, ‘এ হচ্ছে অহল্যা উদ্ধার।’

‘অহল্যা উদ্ধার?’ পবিত্র গঙ্গোপাধ্যায় সবিস্ময়ে প্রশ্ন করলেন।

‘হ্যাঁ’ কাজী সাহেব বলতে লাগলেন, ‘এর কোমল হৃদয় পাষাণ হয়ে গেছে। বিডগুলো পর্যন্ত টিপলে নামে না। কাজেই এই পাষাণীর মধ্যে প্রাণের সঞ্চার করতে হবে, যেমনটি ঘটেছিল পুরাকালে অহল্যার বেলায়।’

আসলে টেবিলটা ছিল একটা অর্গান, গজেনবাবু ওটিকেই টেবিল হিসেবে ব্যবহার করতেন। কাজী সাহেব যখন ওটি নাড়াচাড়া করছিলেন তখনই গজেনবাবু ঘরে ঢুকলেন। তিনিও কাজী সাহেবের কাণ্ড-কারখানা দেখে হতভম্ব হয়ে গেলেন। কতক্ষণ একে অন্যের মুখ চাওয়াচাওয়ি হলো। অতঃপর কাজী সাহেবকে উদ্দেশ্য করে গজেনবাবু বললেন, ‘ও যে অনেক দিন বোবা হয়ে গেছে, ওকে পিটিয়ে কোনো লাভ নেই ভায়া!’

কাজী সাহেব বিন্দুমাত্র ইতস্তত না করে জবাব দিলেন, ‘কী করব। গুরুর হুকুম, এইসব ম্লান মূক মুখে দিতে হবে ভাষা।’

আতাউর রহমানের বিশ্ব-বরেণ্যদের রম্য উপাখ্যান থেকে সংগৃহীত