রিয়ানো

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

আমার এখনো মনে আছে সেদিনের কথা। সে রাতে মা-বাবার সঙ্গে রাগ করে ছাদের একটা বেঞ্চের ওপর বসে ছিলাম আমি। আসলে মা-বাবা আমাকে সচরাচর সে রকম কিছুই বলে না। কিন্তু সেদিন একটু বেশিই রাগ করেছিল। তাদের অভিযোগ, লেখাপড়ার চেয়েও বিজ্ঞানের প্রতি ঝোঁক বেশি আমার। হঠাৎ বকাঝকা খেয়ে মন খারাপ করে বসে ছিলাম ছাদে। ছলছল চোখে আকাশের দিকে তাকাতেই দেখি একটা অদ্ভুত নীল আলো। প্লেনের আলো হবে হয়তো। কিন্তু পেছনের ঝোপ থেকে কেমন একটা অদ্ভুত ঘড়ঘড় আওয়াজ আসছিল। ভাবলাম, একবার গিয়ে দেখব নাকি? কিন্তু এত রাতে যাওয়া কি ঠিক হবে? তবে যা-ই ভাবি না কেন, নেমেই পড়লাম। যা ভেবেছিলাম ঠিক তা-ই! পেছনের ঝোপের দিকেই হয়েছে গন্ডগোলটা। আর একটু এগোতেই দেখলাম, ধোঁয়ায় ভরে গেছে ঝোপটা। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমি ধোঁয়ার উৎসটাও খুঁজে পেলাম। একটা ভাঙাচোরা স্পেসশিপ। মানে ইউএফও!

ইউএফও যখন আছে, নিশ্চয়ই এলিয়েনও আছে। দৌড়ে যেতেই হোঁচট খেয়ে পড়ে গেলাম। কী যেন একটা ঠেকল পায়ে। তাকিয়ে দেখি, ছয় পা-ওয়ালা অদ্ভুত একটা এলিয়েন। এসবে আবার আমার খুব আগ্রহ। তবু ভয়ে একটা চিৎকার দিলাম। মনে হচ্ছে, এলিয়েনটাও ভয় পাচ্ছিল আমাকে দেখে। চুপ করে গেলাম আমি। খানিক পর ও মুখ খুলল।

—তুমি কে?

—অহিন হাওলাদার। আর তুমি?

— X204।

—কী! ও আচ্ছা।

—প্লিজ, আমায় একটা হেল্প করবে?

—বলো কী করতে পারি।

—আমার ইউএফও খারাপ হয়ে গেছে। আমার গ্রহে খবর দিতে হবে।

—তো আমি কী করব?

—আসলে গ্রহে সিগন্যাল পাঠাতে একটা টিটিএম লাগবে।

—সেটা কোথায় পাব?

—না না, এটা আমার কাছেই আছে। কিন্তু এটা অ্যাকটিভ হতে ৩০ দিন লাগবে। এই কটা দিন তুমি কোথাও আমাকে থাকার একটা ব্যবস্থা করে দাও।

—বেশ। এই কটা দিন তুমি আমার সঙ্গেই থাকবে। তবে মা-বাবা যেন টের না পায়।

—ওকে।

এই ৩০ দিন কত স্মৃতিই না জমে ছিল ওর সঙ্গে। আস্তে আস্তে আমরা একে অপরের বন্ধু হয়ে উঠলাম। ওসব X204 বলে আমার ওকে ডাকতে ইচ্ছে করছিল না। ওর একটা নতুন নামও দিলাম আমি—রিয়ানো। ৩০ দিন পর ও আবার আমাকে বিদায় জানিয়ে চলে গেল।

এখনো আমার মনে পড়ে ওকে। কে জানে কেমন আছে ও? আই মিস ইউ রিয়ানো। ছলছল চোখে আকাশের দিকে তাকিয়ে দেখি, একটা নীল আলো। ওটা কি সত্যিই প্লেনের আলো? তাহলে পেছনের ঝোপ থেকে আসা ওই ঘড়ঘড় আওয়াজটা কিসের?