লেট লতিফ

পাঁচ বছর বয়সে আব্বু আমাকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিল। স্কুলজীবনের প্রথম দিন ক্লাস করতে গিয়ে দেখি রাগী রাগী চেহারার একজন মহিলা ব্ল্যাকবোর্ডে সবাইকে ক, খ শেখাচ্ছেন। আমাকে দেখে মোটামুটি চিৎকার দিয়ে বললেন, ‘এই মেয়ে, তুমি লেট কেন?’

লেট শব্দের অর্থ বুঝতাম না আমি তখন। আমি কাঁদো কাঁদো গলায় বললাম, ‘মিস, আমার নাম তো টুম্পা।’

মিস আমার কথা শুনে হেসে ফেললেন। ইশ্! হাসলে সবাইকে কত্ত সুন্দর লাগে।

মিস আমাকে ক্লাসে গিয়ে বসতে বললেন।

সেই যে মিস আমাকে লেট নাম পরালেন; তার পর থেকে এই লেট নামটি আমার জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে গেল।

পাঁচ বছর ধরে লেট নাম নিয়ে প্রাইমারি শেষ করে হাইস্কুলে গিয়েও একই ঘটনা ঘটল। হাইস্কুলের প্রথম দিন ক্লাসে গিয়ে দেখি মিসের রোল কল শেষ। তড়িঘড়ি করে ক্লাসে ঢুকে হাত উঁচু করে বললাম, ‘মিস আমার প্রেজেন্টটা!’ মিস তাঁর চশমার ফাঁক দিয়ে আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললেন, ‘এই মেয়ে, ক্লাসের প্রথম দিনে তুমি লেট কেন?’

লজ্জায় আমার মুখ লাল হয়ে গেল। মিসকে তো আর বলতে পারি না—মিস, আমি জন্মই নিয়েছি লেট করে। মানে ডাক্তার আঙ্কেল আমার জন্মগ্রহণের যে তারিখটা দিয়েছিলেন, আমি ঠিক তার ১০ দিন পর জন্ম নিয়েছি। সেখান থেকেই আমি সবকিছুতে লেট। বন্ধুরা শুধু নামের শেষে লতিফ জুড়ে দিয়েছে। লেট লতিফ!