শুভ্র সমুদ্র

ছবি: সরদার আকিব লতিফ

আজ তোর কথা খুব মনে পড়ছে শুভ্র। আজ ২০ বছর পর আমি আবার সেই জায়গায় এসেছি, কক্সবাজারে। যেখান থেকে তুই চিরদিনের জন্য আমাদের কাছ থেকে চলে গিয়েছিলি। আমার এখনো মনে আছে ২০ বছর আগে এই দিনে ছিল তোর জন্মদিন। তোর মা-বাবা তোর জন্মদিন কক্সবাজারে পালন করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তুই তো নাছোড়বান্দা, আমাদের ছাড়া জন্মদিন পালন করবি না। তাই তোর সঙ্গে আমরা চারজনও (আমি অয়ন, তীব্র, সৌমিক আর তুষার) এসেছিলাম। আমরা পাঁচজন খুবই কাছের বন্ধু ছিলাম। তুই ছিলি আমার খুব ভালো বন্ধু। সেদিন কেক কাটা শেষে সবাই এসেছিলাম সমুদ্রস্নান করতে। তুই ছিলি একেবারে নির্ভীক দুঃসাহসী। কোনো কিছুতেই তোর ভয় ছিল না। বন্ধুদের জন্য তুই ছিলি নিবেদিতপ্রাণ। আমরা চারজন মিলে তোকে ভয় দেখানোর ফন্দি আঁটলাম। আমরা সবাই সাঁতার জানতাম। শুধু তুই-ই জানতিস না। তাই তুই সমুদ্রে নামিসনি। আমরা সবাই এমন ভান করলাম যে সমুদ্রের পানিতে ডুবে যাচ্ছি। তুই সেটাই সত্যি ভাবলি আর আমাদের বাঁচাতে সমুদ্রের পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লি। আমরা তো সাঁতার কেটে বেঁচে গেলাম। কিন্তু তুই? তুই চলে গেলি না ফেরার দেশে। তোকে আর কোনো দিন দেখতে পাইনি। সেদিন খুব অনুতাপ হয়েছিল। তোর নিথর দেহটা দেখে আংকেল-আন্টি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। তাঁরা এখন মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তীব্র, সৌমিক ও তুষার ওরা তিনজনই এখন বিদেশে বসবাস করছে। আমার সঙ্গে ওদের কোনো যোগাযোগ নেই। আমি দেশেই রয়ে গেছি। অফিসের কাজে আবার এসেছি কক্সবাজারে। তোর কথা খুব মনে পড়ছে আজ। এখনো আমার মনে আছে তুই আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজের কাঁধে দোষ চাপিয়েছিলি। আমাকে বাঁচাতে গিয়ে নিজে সাইকেলের নিচে পড়ে পা ভেঙেছিলি। আমি অসুস্থ থাকায় পরীক্ষা দিতে পারিনি, কিন্তু তুই তোর পরীক্ষা ফেলে আমার পরীক্ষা দিয়ে দিয়েছিলি। তুই তো আমার জন্য তোর জীবনটাই দিয়ে দিলি। অথচ আমি তোকেই মেরে ফেললাম? আমি খুনি। এখন জোরে চিত্কার করে বলতে ইচ্ছে করছে ফিরে আয় শুভ্র, ফিরে আয়।