শূন্যে ভাসে কেমন করে?

শুনেছি আজকে যেটা জাদু, কাল সেটাই নাকি বিজ্ঞান। ভাবছ—এমন কথা কেন বললাম? শোনো, তোমরা নিশ্চয় জানো যে উনিশ শতকের গোড়ার দিকেই উইলবার রাইট এবং অরভিল রাইট নামের দুই ভাই মিলেই আবিষ্কার করেছিলেন উড়োজাহাজ। যার সাহায্যেই মানুষ প্রথম শূন্যে ভাসতে শেখে। কিন্তু তারও আগে আঠারো শতকের মাঝামাঝি সময়ে ফরাসি জাদুকর র‌্যাবেয়ার উদ্যা একজন মেয়েকে কোনো রকম অবলম্বন ছাড়াই শূন্যে ভাসিয়ে বিশ্ববাসীর নজরে এসেছিলেন। এসব কথার অবতারণা এ জন্যই যে আজ তোমাদের শেখাব তুমি কেমন করে শূন্যে ভাসাবে!

জাদুকরের জাদু

রহস্যময় একটা হাসি ঝুলে আছে জাদুকরের মুখে। সাধারণ দুটি কাচের গ্লাসকে উপস্থিত দর্শকদের দিয়ে ভালোভাবেই পরীক্ষা করিয়ে নিলেন জাদুকর। এরপর গ্লাস দুটিকে পাশাপাশি টেবিলের ওপর উপুড় করে রাখলেন। এর সঙ্গে দর্শকদের কারও কাছ থেকে চেয়ে নিলেন একটি এক শ কিংবা যেকোনো মূল্যমানের কাগজের একটি নোট। টাকাটিকে দুই হাতে ধরে নিয়ে সমান্তরালভাবে ভাঁজ করলেন টাকার ঠিক মাঝখানটায় এবং সে অবস্থায় সেটিকে গ্লাস দুটির ওপর চিত্র-১-এর মতো করেই বসিয়ে দিলেন। এবার দর্শকদের উদ্দেশে ‘এর যেকোনো একটি গ্লাসকে সরিয়ে নিলেও টাকাটি সেই একইভাবে শূন্যে ভেসে থাকতে পারবে’ বলতে বলতেই এর যেকোনো একটি গ্লাস তিনি নিজ হাতেই সরিয়ে নিলেন, অনেকটা চিত্র-২-এর মতো। সত্যিই তো টাকাটি কেমন অবলীলায় শূন্যেই ভেসে রইল। চোখের সামনেই এমন ভুতুড়ে কাণ্ড ঘটতে দেখে উপস্থিত দর্শকেরা সত্যিই কেমন ‘থ’ বনে গেলেন।

পেছনের জাদু

কিছুই না, একটি কয়েন অর্থাৎ পয়সাকে তোমার হাতের ভেতর লুকিয়ে রাখতে হবে। বোঝার সুবিধার্থে চিত্র-৪ দেখো। হাতের তালুতে খুব কৌশলে একটি পয়সাকে লুকিয়ে রাখার কৌশল রপ্ত করতে পারলেই খুব সহজে এ জাদুটি তুমি তোমার দর্শক বন্ধুদের দেখিয়ে অবাক করে দিতে পারবে।

প্রদর্শন পদ্ধতি

দর্শকদের কাছ থেকে সাধারণ একটি কাগজের নোট বা টাকা চেয়ে নাও। এমনটি করার কারণ, দর্শকদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করা। এবার কাগজের নোটটিকে সমান্তরালভাবে মাঝখানে ভাঁজ করো। অনেকটা চিত্র-১-এর মতো করে ভাঁজ করা টাকাটিকে উপুড় করে রাখা গ্লাস দুটির ওপর এমনভাবে বসাও, যাতে দুটি গ্লাসের মাঝখানে খানিকটা ফাঁক থাকে এবং টাকার দুই দিকের প্রান্ত দুটি গ্লাস দুটির ঠিক মাঝখানে থাকে। এবার তোমার দর্শকদের বলো যে এর মধ্যে যদি যেকোনো একটি গ্লাস সরিয়ে নেওয়া হয়, তবে? কিছুটা সময় দিয়ে সত্যি সত্যিই একটি গ্লাসকে তুমি সরিয়ে নাও। তাতে করে টাকাটা ভারসাম্য বজায় রাখতে না পেরে নিশ্চিত নিচে পড়ে যাবে এবং দর্শকেরাও সেটি দেখবেন।

এবার তুমি তোমার ডান হাতের সাহায্যে টাকাটিকে তুলে নাও এবং তোমার বাঁ হাতে আগে থেকেই লুকিয়ে রাখা পয়সাটিকে চিত্র-৩-এর মতো করে কাগজের নোটটির সমান্তরাল ভাঁজের ভেতর যেকোনো একটি কোণে ঢুকিয়ে দাও। যেন প্রথমত কোনেভাবেই তোমার দর্শকেরা ব্যাপারটি টের না পান এবং দ্বিতীয়ত পয়সাসমেত কাগজের নোটের প্রান্তটিকে উপুড় করা যেকোনো একটি গ্লাসের ঠিক মাঝখানে বসিয়ে দাও।

বাকিটা জাদু! নিজেই চেষ্টা করে দেখো আর কয়েকবার করে চর্চা করে খুব ভালোভাবে বিষয়গুলো রপ্ত করে নিয়ে তবেই দেখাও তোমার বন্ধু কিংবা অন্যদের।

পাদটীকা: কেন এমনটি হচ্ছে বলতে পারো? ঠিকই ধরেছ। পয়সাটি কাগজের নোটের এক কোণে ভরের কাজ করেছে বিধায় আপাতদৃষ্টিতে টাকাটি নিজের ভারসাম্য বজায় রাখতে পেরেছে বলে মনে হচ্ছিল। আর অন্যদিকে দর্শকেরাও এটিকে জাদু বলে ভেবে নিয়েছেন।