শেষ জাদু

অলংকরণ: আরাফাত করিম

রাত দশটা। মটুয়া গ্রামের জন্য বেশি রাত নয়। গ্রামের লোকজন রাতে আড্ডা দিতে বের হয়। চায়ের দোকান সরগরম।

আজ আকাশে মেঘ। রাতে জমিরের দোকানে লোকজন নেই। দোকানে একা বসে আছে চিকনচাকন এক লোক। গ্রামে নতুন। চোখ দুটো শান্ত। মানিব্যাগ নেই। টাকা রাখে বুকপকেটে।

চায়ে নিঃশব্দে টান দিয়ে দোকানির দিকে তাকিয়ে চওড়া হাসি দিল লোকটা। গলা নামিয়ে বলল—

‘আমার নাম জালু। জালু মিয়া।’

‘এইটা কেমন নাম!’

‘জাদুকর লু। ছোট করে জালু।’

‘ও।’

দোকানি বিস্মিত হলো না। আজকাল জাদুটাদু দেখে মানুষ অত বিস্মিত হয় না। ইউটিউবে সব জাদুর রহস্য ফাঁস হয়ে গেছে। লোকটার নাম শুনেও অবাক হয়নি সে।

‘কী জাদু দেখান?’

‘ছোটখাটো জাদু। ভ্যানিশ কইরা দিতে পারি।’

‘খুব ভালা। এই জগৎ–সংসার আর ভালো লাগে না। আমারে ভ্যানিশ কইরা দেন।’

‘আপনার ঘড়িতে কয়টা বাজে দেখেন তো।’

‘এগারোটা দশ।’

বিস্কুটের প্যাকেট ছিঁড়ে ডিব্বায় ঢোকানোর চেষ্টা করছে জমির।

জালু মিয়া চায়ে চুমুক দিয়ে চোখ বুজল। হিসহিস–জাতীয় একটা শব্দ করল কিছুক্ষণ। চোখ মেলে বলল, ‘দোকানদার ভাই।’

‘হায় হায়! বিস্কিট সব পইড়া গেল। দূর!’

‘এখন দেখেন তো কয়টা বাজে।’

‘এগারোটা বিশ। অ্যাঁ! একটু আগে না এগারটা দশ দেখলাম। ঘড়ি উল্টাপাল্টা করতাছে নাকি!’

‘ঘড়ি ঠিক আছে। আপনেরে দশ মিনিটের জন্য ভ্যানিশ কইরা দিছিলাম। এই দশ মিনিট আপনি টের পান নাই। টের পাইছে আপনার ঘড়ি। বিস্কিট ঢালার সময় ভ্যানিশ হইছিলেন, এ জন্য ওগুলা পইড়া গেছে।’

জালু হাঁটতে শুরু করল। হারমোনিয়ামের দ্রুত লয়ের সুর কানে আসছে। কাওয়ালি টাইপের গান গাওয়ার চেষ্টা করছে কেউ। কিন্তু কাওয়ালির টান ভাটিয়ালির দিকে মোড় নিচ্ছে বারবার। 

জালুর এ গ্রামে আসার পেছনে একটা মতলব আছে। গ্রামবাসীকে এক জায়গায় জড়ো করতে হবে। সবার চেহারা দেখতে হবে একসঙ্গে। এরপর ভয়াবহ ঘটনা ঘটানোর পরিকল্পনা তার। গোটা গ্রাম ভ্যানিশ করে দেবে!

বড় একটা ঘর। সম্ভবত ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র। জালু ভেতরে ঢুকতেই তাকে হাতের ইশারায় একজন বসে যেতে বলল। গানে কারও মনোযোগ নেই। সবাই গুটুরগাটুর আলাপ করছে। গান থামতেই সবাই চুপ।

জালুর দিকে তাকিয়ে গায়ক বলে উঠল, ‘আপনের পরিচয়?’

‘আমি জাদুকর জালু।’

সবাই খুশি।

‘বাহ। একটা জাদু দেখান না ভাই। এই পাথরের আংটিটারে সোনার কইরা দেন।’

জালু মিষ্টি করে হাসল। তার হাসি দেখে সবাই মুগ্ধ।

একসময় গান শেষ হলো। হালকা কেশে জালু বলতে শুরু করল, ‘আমার আসল জাদু আপনারা দেখবেন এক সপ্তাহ পর। এই গ্রামটারে ভ্যানিশ কইরা দিমু। আপনারাও ভ্যানিশ হইয়া যাইবেন। যারা ভ্যানিশ হইতে চান না, তারা সোনাদানা সব নিয়া এক সপ্তাহ পর স্কুলের মাঠে আইসেন।’

সবাই বিমর্ষ হয়ে গেল। ভয় পায়নি কেউ। হতাশ হয়েছে। লোকটাকে ভালো মানুষ ভেবেছিল। এখন দেখা যাচ্ছে ছিঁচকে প্রকৃতির। এ–ও ভাবল, এভাবে ভরা মজলিশে শুকনা একটা লোক সবাইকে হুমকি দেওয়ার সাহস পায় কী করে? সত্যিই কোনো ক্ষমতা নেই তো?

‘তোমার কথার গ্যারান্টি কী মিয়া?’

চা দোকানি জমিরকে ভ্যানিশ করার বিষয়টা সবাইকে বলল জালু। তারপর সবাইকে সামনে এসে এক কাতারে বসতে বলল। জাদুকরের কথায় সাধারণত কেউ না করে না। সবাই জাদুকরের চোখের সামনে এক সারিতে বসল। 

‘সময় দেখেন সবাই।’

সবাই দেখল রাত বারোটা। এরপর জালু চোখ বুজল। হিসহিস করে বিচিত্র শব্দটা করল। কোনো মানুষের পক্ষে এমন শব্দ করা সম্ভব নয়। চোখ খুলল সবাই।

‘এবার টাইম দেখেন।’

সবাই দেখল বারোটা দশ বাজে। জালু চুপচাপ। 

কারোরই বুঝতে বাকি রইল না, দশ মিনিটের জন্য ভ্যানিশ হয়ে গিয়েছিল তারা।

‘আপনার তো অনেক পাওয়ার! আমগোরে ভ্যানিশ কইরা লাভ কী!’

‘আমার এই গ্রাম পছন্দ। আর কোনো কারণ নাই। এখন আপনারা সোনাদানা জোগাড় করেন। না হয় মটুয়া গ্রাম আর থাকব না। পাশের ফুলচান্দ গ্রামের পর ধুড়ুম কইরা দেখবেন মুন্সীরহাট গ্রাম। মাঝখানের মটুয়া নাই। আপনাগো দাদার ভিটা, জমিজমা, গরু-ছাগল সব নাই, ঠুসসস!’

সবাই ভয় পেলেও একজন পেলেন না। তিনি গ্রামের স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক নেপাল চন্দ্র নাথ। সেদিন রাতে গানের আসরে তিনিও ছিলেন।

বাঘ–ভালুক পিটিয়ে মানুষ করেছেন নেপাল চন্দ্র। সবাই তাকে মহাজ্ঞানী মনে করে। কিন্তু জাদুকরের ভেলকিবাজি ধরতে পারছেন না। শুধু এটা মানছেন, এ জাদুতে ফাঁকি নেই। লোকটা হতে পারে অন্য মাত্রার প্রাণী। অন্য জগৎ থেকে এসেছে, যে জগতে সময় আটকে দেওয়া যায় বা সময়ের গতি বাড়িয়ে দেওয়া যায়।

বাড়িতে গিয়ে খাতায় আরও বিস্তর অঙ্ক করলেন নেপাল চন্দ্র। লোকটা অ্যান্টিম্যাটার দিয়ে তৈরি নাকি! লোকটার ভেতর টাইম–স্পেস বিষয়টা উল্টো করে চলে মনে হয়। স্পেস-টাইম বিষয়টা মুড়ির মতো। চিবিয়ে থেঁতলে দেওয়া যায়। ব্ল্যাকহোল যেমনটা করে। লোকটা আবার ব্ল্যাকহোলের বাসিন্দা নয় তো...। স্বর্ণের বিষয়টি পুরোটাই বানানো। লোকটা স্বর্ণ দিয়ে কী করবে? টাকার কোনো দরকার আছে বলে তো মনে হয় না। ভিন্ন মাত্রার প্রাণীটার সঙ্গে বোঝাপড়া করতে নেপাল চন্দ্রকে আরও ভাবতে হবে। ভাবার জন্য হাতে আছে এক সপ্তাহ।

পরের দিন আচমকা রাত এগারোটার দিকে জাদুকর জালু চলে এল নেপাল চন্দ্রের বাড়িতে। নেপাল চন্দ্রের পরিবারের লোকজন ভয়ে জড়সড় হয়ে একটা রুমে দরজা বন্ধ করে রেখেছে। তবে তার মেয়ে নীলিমা একটুও ভয় পায়নি। সে পড়ে ক্লাস নাইনে। সে অন্য আরেকটা রুম থেকে উঁকিঝুঁকি দিচ্ছে।

‘স্যার, আপনে অযথা চিন্তা করতেছেন। চিন্তার কারণ নাই। আমি ছোটখাটো জাদুকর। খুকি এদিকে আসো। তোমারে জাদু দেখাই।’

আড়াল থেকে বেরিয়ে এলো নীলিমা। নেপাল চন্দ্র অস্বস্তিতে পড়ে গেছেন। বিজ্ঞানের মানুষ হয়েও তিনি মনে মনে ভয় পাচ্ছেন, তার মেয়েটাকে যদি আবার জাদুমন্ত্র দিয়ে ভ্যানিশ করে দেয়!

‘আমার হাতে এইটা কী? একটা আলু? এই যে হাত মুঠ করলাম। আর খুললাম। কী হইল? শিঙাড়া। আলুর শিঙাড়া। নাও, খাও।’

‘তুমি কোন ডাইমেনশন থেকে এসেছ, বলো তো? তোমার স্পেস-টাইম বাঁকানোর ক্ষমতা আছে? তুমি...।’

‘কী কইতাছেন স্যার? কিছুই তো বুঝি না।’

‘তুমি হয়তো আমাদের বিজ্ঞানের ভাষা বুঝতে পারছ না। কারণ, তুমি অন্য কাঠামো থেকে…মানে তোমার স্পেস-টাইম আলাদা। তুমি সাব অ্যাটমিক লেভেল ওলটপালট করে দিতে পারো। আমি সব বুঝতে পেরেছি।’

‘স্যার বেহুদা টেনশন করতেছেন। আমি আমার গুরুর কাছে জাদুমন্ত্র তুকতাক শিখেছি। এখন আমার দরকার সোনাদানা।’

‘তুমি সোনাদানা দিয়ে কী করবা?’

নেপাল চন্দ্র নিশ্চিত লোকটার উদ্দেশ্য স্বর্ণ নয়। কারণ গোটা গ্রাম খুঁজেও এত স্বর্ণ বের হবে না। এ গ্রামে মানুষজন কম। সবাই গরিব। এটা নিশ্চয়ই জাদুকর ব্যাটার জানার কথা।

‘আপনি আমার পুতুলটারে ভ্যানিশ করে দেখান দেখি। আপনার পেছনে চেয়ারে আছে।’

নীলিমার কথা শুনে জাদুকর জালু মিষ্টি হাসি দিল। তার হাসি দেখে অস্বস্তিতে পড়ে গেলেন নেপাল চন্দ্র। মায়াময় হাসি। এরপর জাদুকর পেছন ফিরে পুতুলের দিকে তাকাল। চোখ বুজে হিসহিস শব্দটা করল। চোখ খুলতেই পুতুল ভ্যানিশ।

‘নীলিমা! ভেতরে যা!’

‘আমি আরও জাদু দেখব, বাবা।’

‘খুকি তুমি ভেতরে যাইবা কেন? বাইরে ফকফকা চাঁদ। যাও একটু খেলাধুলা করো। জোনাকির পেছনে দৌড়াও। উঠানে তোমার পুতুলটা বইসা আছে। তবে বেশি দূর যাইও না। পেছনে একটা গভীর ডোবা আছে। ওই ডোবায় যদি পইড়া যাও...তাইলে মা রিমা তোমারে আর ওঠানো যাইব না।’

নেপাল চন্দ্রের মাথায় আবারও প্যাঁচ লেগেছে। লোকটা তার মেয়েকে রিমা ডাকল কেন?

পরের দিন। আবারও জাদুকর এসে হাজির নেপাল চন্দ্রের বাড়িতে। নেপাল চন্দ্র ঘুরিয়ে–ফিরিয়ে তার সঙ্গে মাত্রা, স্থান-কাল, কোয়ান্টাম থিওরি এসব নিয়ে আলাপ জমাতে চান। জালু যথারীতি বসে বসে হাতের মুঠোয় পাথর নিয়ে আঙুর-বেদানা বের করে। সেটা মজা করে খায় নীলিমা।

‘তোমার মতলবটা কী মিয়া, কও তো।’

‘ভ্যানিশ কইরা দিমু গ্রামটা।’

‘কেন?’

‘আমার ইচ্ছা।’

‘রিমা কে?’

উত্তর দিল না জালু। তবে বিমর্ষ হয়ে গেল।

এর মধ্যে নীলিমার সঙ্গে মোটামুটি খাতির জমেছে জালুর। পুরোটা সময় নেপাল চন্দ্র চোখে চোখে রেখেছেন জালুকে। জাদুকরের মতলব ধরতে পারছেন না তিনি। ধরতে পারবেন কাল। কারণ, আগামীকাল এক সপ্তাহ শেষ হবে।

রাতে নীলিমাকে দেখলেন বসে বসে ড্রেসিং টেবিলের সামনে চুল আঁচড়াচ্ছে আর ভাবছে। মেয়েটাও তার মতো ভাবুক হয়েছে। বিজ্ঞানের অনেক কিছু জানে। গ্রামের ছেলেমেয়েদের পড়ায়। ভেতরে ভেতরে খুব চালাক। তবে সেটা প্রকাশ করে না।

নেপাল চন্দ্র মেয়েকে দেখলেন। জাদুকরের জন্য মায়া লাগল তার। লোকটার নিশ্চয়ই রিমা নামের একটা মেয়ে ছিল, যে মেয়েটা দেখতে নীলিমার মতো। সেই মেয়েটা বাড়ির পেছনের ডোবায় পড়ে…।

‘বাবা আমার মাথায় একটা বুদ্ধি এসেছে।’

‘তোর মাথাভর্তি বুদ্ধি। একটা কেন, এক শটা বুদ্ধি আসবে।’

‘জাদুকরের মতলব আমি জানি। আমারে বলেছে সে।’

‘কী বলিস!’

‘উনি গ্রামের সবাইরে ভ্যানিশ করবে না। কারোরে কারোরে করবে। আমারেও করবে। ভ্যানিশ করে আমাদের উনি উনার দুনিয়াতে নিয়ে যাবে। সেই জগতে আমি উনার কন্যা হব। আমার নাম হবে রিমা।’

‘খুব ভালো কথা। হারামজাদার ক্ষমতা বাইর করব কালকে। আমার পুরানা বেতগুলা কই!’

‘উনার গ্রহের নাম উইলুকুলিয়া। পৃথিবীর মতো দেখতে। উনাদের গ্রহের সবার অনেক ক্ষমতা। মজার বিষয় হলো উনাদের সবার নাম লু। তবে আমি একটা বুদ্ধি পেয়েছি বাবা।’

‘খবরদার ঘর থেকে বাইর হবি না কালকে!’

নীলিমা দুষ্টুমি মার্কা হাসি দিল।

যথারীতি জাদুকর চোখ বুজল। শুরু হলো হিসহিস সেই শব্দ। নেপাল চন্দ্র নিজেকে মনেপ্রাণে বোঝাতে চেষ্টা করছেন, তাঁর মেয়ের অনেক বুদ্ধি। সে একটা কিছু করবেই!

সকাল দশটা। আজ গ্রাম ভ্যানিশ হওয়ার দিন। সবাই স্কুল মাঠে জমায়েত হয়েছে। কারও মুখে দুশ্চিন্তা নেই। সবাই জাদু দেখতে চায়। গ্রাম থাকুক না–থাকুক, তাতে কিছু যায় আসে না।

জাদুকর উঠে দাঁড়িয়েছে একটা উঁচু ঢিবির ওপর। হাতে হ্যান্ডমাইক। বক্তৃতা দেবে।

‘গ্রামবাসী। আপনাদের ভ্যানিশ করব ঠিক কথা। তবে ভ্যানিশ হওয়ার পর আপনারা যাইবেন এক আজব জগতে। যেই জগতে কোনো অভাব নাই। টেকা আর টেকা। পুকুরভর্তি মাছ আর সোনাদানা। কোনো কামকাজ নাই। আপনারা খাইবেন দাইবেন ঘুমাইবেন। আপনারা সেই দেশে যাইতে চান?

সবাই চিত্কার দিয়ে বলল ‘চাই!’

‘তা হইলে আপনারা সবাই এক জায়গায় এক সারিতে জড়ো হন। কেউ যেন বাদ না যায়। কেউ আমার চোখের আড়ালে থাইকেন না।’

নেপাল চন্দ্র এদিক–ওদিক তাকাচ্ছেন। গ্রামবাসীর বোকামি নিয়ে তার মাথাব্যথা নেই। তিনি ভিড়ের মধ্যে মেয়েকে খুঁজছেন। তিনি নিশ্চিত মেয়েটা পালিয়ে চলে আসবে এখানে। 

সন্দেহ সঠিক প্রমাণ হলো। দেখতে পেলেন মেয়েকে। নীলিমা একটা ব্যাগ হাতে এগিয়ে যাচ্ছে জাদুকরের দিকে! 

নেপাল চন্দ্রের মনে হলো তার পা দুটো এভারেস্ট হয়ে গেছে। নড়তে পারছেন না। জাদুটাদু না, বেশি টেনশনে পড়লে নার্ভ উল্টোপাল্টা আচরণ করে। তিনি শুধু চিঁ চিঁ করে ডেকে যাচ্ছেন, ‘মা নীলিমা! ও নীলি! যাইস না মা।’

নীলিমা জাদুকরের সামনে এসে দাঁড়াল। 

‘খুকির জন্য একটা হাততালি দেন সবাই। রিমার অনেক সাহস। সে সবার আগে ভ্যানিশ হইতে চায়।’

গ্রামবাসী হাততালি দিল। নীলিমা বা রিমাকে নিয়ে তাদের চিন্তা নেই। তারা চায় জাদু দেখতে।

যথারীতি জাদুকর চোখ বুজল। শুরু হলো হিসহিস সেই শব্দ। নেপাল চন্দ্র নিজেকে মনেপ্রাণে বোঝাতে চেষ্টা করছেন, তাঁর মেয়ের অনেক বুদ্ধি। সে একটা কিছু করবেই!

জাদুকরের হিসহিস শব্দ একটু পরই বন্ধ হবে। তার আগেই নীলিমা তার ব্যাগ খুলে গোলগাল একটা বস্তু বের করল। পেছন ফিরে আছে বলে বোঝা যাচ্ছে না। তবে নেপাল চন্দ্র পরিষ্কার দেখলেন, জিনিসটাকে ঠিক জাদুকরের মুখের সামনে ধরল তার মেয়ে। হিসহিস শব্দ শেষ। জাদুকর চোখ খুলল। 

এরপর গ্রামবাসী যা দেখল, তাতে তারা অবাক হবে নাকি হতাশ হবে, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গেল। জাদুকর জালু নেই! আচমকা গায়েব হয়ে গেছে চিকনচাকন লোকটা! নীলিমা ঘুরে দাঁড়াল। তার হাতের গোলগাল জিনিসটা একটা আয়না। বৈশাখী মেলায় বাবা ওটা কিনে দিয়েছিল তাকে। হাসি হাসি মুখে ভিড়ের মধ্যে নীলিমা খুঁজতে লাগল তার বাবাকে।