সূত্র-নায়ক

তখন ক্লাস সেভেনে পড়ি। স্কুল হোস্টেলেই থাকতাম। একদিন আকাশ মেঘাচ্ছন্ন থাকায় রুমের ভেতরেই কাপড় শুকানোর ব্যবস্থা করা হলো। একটা দড়ি জানালা থেকে নিয়ে বুকশেলফের সঙ্গে টান টান করে বাঁধা হলো। শেলফটা স্টিলের এবং বিশাল আকৃতির। ছাদ ছুঁই ছুঁই উঁচু। উত্তর পাশের দেয়ালজুড়ে ছিল ওটার অবস্থান।

সেদিন আমাদের এক ক্লাসমেট মোকাররম শেলফটার সামনে দাঁড়িয়ে বই পড়ছিল। এমন সময় হঠাৎ দড়িটায় আমার টান পড়ল। ব্যস, সূত্রানুসারে দড়ির ওপর আমার প্রযুক্ত বল দড়ির অপর প্রান্তের বিশাল শেলফটার সরণ ঘটাতে দেরি করল না। দেখছি শেলফ কাত হচ্ছে। ধরব, না ওকে ডাক দেব, কিছু বুঝে ওঠার সময় দিল না দানবটা। মনে হলো, বিশাল আকৃতির একটা দৈত্য দুই হাত ছড়িয়ে ওকে জাপটে ধরার জন্য ঝুঁকছে। দেখতে দেখতে পড়েই গেল ওর ওপর।

তাড়াতাড়ি সবাই মিলে শেলফটা তুলে ওকে টেনে বের করি। নিচে একটা বাক্স পড়ায় ওর মাথা আর বুকটা নিরাপদই থাকে। তবে পা’টা থেঁতলে যায়। ওর পা ভাঙায় খুব দুঃখ হলো। আবার ভয়ও পেলাম খুব। তাই সবাই যখন ওকে নিয়ে ব্যস্ত, সেই সুযোগে আমি ওখান থেকে সটকে পড়ি।

ঘণ্টা খানেক পরে এসে দেখি, বাংলা প্রবাদের পুনর্ঘটন, উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে রীতিমতো বসিয়ে দেওয়া হয়ে গেছে। সবাই সাদিক আর আলমকে দোষারোপ করছে। আর এতে ওদেরও কোনো দ্বিমত নেই। কারণ, দড়িটা যে ওরাই টানিয়েছিল। ঘটনায় মকবুল স্যার শারীরিক কিছু শাস্তিও দিয়েছিলেন ওদের। তবে ওরা সবচেয়ে বেশি ভুগেছিল মানসিক যন্ত্রণায়। যেহেতু ওদের কারণে একজনের...

আজও কেউ জানে না ঘটনার মূল নায়ক কে। আজও সাদিক আর আলম নিজেদেরই অপরাধী ভাবে। ভাবে সবাই। সত্যি বলছি মোকাররম, আমি ইচ্ছে করে করিনি রে। মাফ করে দিস। ক্ষমা চাই সাদিক ও আলমের কাছেও।