স্বাতী আর গোল্ডফিশ

আমার বান্ধবী স্বাতী। আত্মার বন্ধুত্ব। ইংরেজিতে যাকে বলে সোল মেট। একবার গ্রামের বাড়ি যাওয়ার সময় স্বাতী আমাকে ওর প্রিয় গোল্ডফিশটাকে দিয়ে গেল দেখাশোনা করার জন্য। মাত্র তো পনেরো দিনের ব্যাপার। আমি যেন ঠিকমতো খেতে দিই, নিয়মিত গোল কাচের জারের পানি বদলে দিই আর সময় পেলে যেন গোল্ডফিশের সঙ্গে একটু গল্প করি।

সবকিছু ঠিকমতো চলছিল। গোল্ডফিশের সঙ্গে ভালোই বন্ধুত্ব জমে উঠেছে। স্বাতী প্রায়ই ফোন করে মাছটার খোঁজ নেয়। এক সপ্তাহ পর হঠাৎ দেখি গোল্ডফিশটা মরে ফুলে ভেসে আছে। প্রচণ্ড ভয় পেলাম আমি। এখন কী হবে? আমি স্বাতীকে কী করে বলব ওর গোল্ডফিশটা মরে গেছে? অনেক ভেবে বুদ্ধি বের করলাম। জার থেকে মৃত মাছটা বের করলাম। মেজারিং টেপ দিয়ে মাপলাম পুরো মাছের দৈর্ঘ্য, ফুলকা থেকে লেজ পর্যন্ত দৈর্ঘ্য, শুধু মাথার দৈর্ঘ্য সব। তারপর কাঁটাবনে গেলাম মাছ কিনতে। একটা করে মাছ বের করে দৈর্ঘ্য মাপি কিন্তু কিছুতেই মেলে না। অবশেষে কাছাকাছি দৈর্ঘ্যের একটা মাছ পেলাম। সুযোগ বুঝে দোকানদারও দাম নিল দ্বিগুণ। বাসায় এসে মাছটাকে রেখে দিলাম জারে। ওমা! দুদিন যেতে না যেতেই এই মাছটাও মরে গেল। ধুর! আর পারব না। স্বাতী এলে সত্যি কথা বলে দেব। সাত দিন পর স্বাতীর ফোন, ‘দোস্ত, আমি ঢাকায়, কখন তোর বাসায় আসব?’ আমি ভয়ে ভয়ে বললাম বিকেলে আসতে। আবার ছুটলাম কাঁটাবনে। এবারও দ্বিগুণ দাম দিয়ে কিনলাম আরেকটা গোল্ডফিশ। তবে এই মাছটা স্বাতীর মাছের সঙ্গে পুরোপুরি মিলে যায়। এখন অপেক্ষার পালা। ভয়ও পাচ্ছিলাম স্বাতী যদি বুঝে ফেলে। নাহ্! ও কিছুই বুঝল না, নিয়ে গেল মাছসহ জারটা খুশিমনে। আমিও হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। এক মাস পর স্বাতীর ফোন। ও খুব কাঁদছে। কারণ, স্বাতীর গোল্ডফিশটা মারা গেছে। আমি সান্ত্বনার কিছু কথা বললাম। কিন্তু যে কথাটা আমি স্বাতীকে কখনোই বলতে পারিনি, আজ বলতে চাই ‘স্বাতী, তোর মাছটা অনেক আগেই মারা গিয়েছিল। আমি মাছটার অনেক যত্ন করেছিলাম, তবু মরে গিয়েছে, প্লিজ আমাকে তুই মাফ করে দিস।’