হারানো দিনগুলো ফিরে পাওয়া

অলংকরণ: সব্যসাচী চাকমা

‘স্কুলের সামনে এসেই থমকে গেলাম আমি। কমপক্ষে ১০ ফুট উঁচুতে একটি মাত্র বাঁশ দিয়ে তৈরি করা সাঁকোর নিচে একহাঁটু কাদা। এই সাঁকো পেরিয়েই নাকি স্কুলে যেতে হবে। ছোট ছোট গলি, কর্দমাক্ত রাস্তা, নদী—এমন অনেক জায়গা একা একা পেরিয়ে এসে দেখি স্কুলের এই অবস্থা। সবাই ভেতরে গেছে। শুধু আমিই পারছি না। তাই কান্না শুরু করলাম।’

এ রকম একটা বাজে স্বপ্ন দেখে ঘুম ভেঙেছিল আমার। মেজাজটাই খারাপ হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু স্কুলে যাওয়ার আনন্দে মেজাজ ভালো হয়েছিল পরক্ষণেই। সকাল সাড়ে ১০টায় স্কুল আমাদের। আম্মু নাশতা তৈরি করে রেখে আমায় খেতে বলে চলে গেছেন (আম্মু স্কুলশিক্ষক)। আমি আমার আগের স্বভাবে ফিরে গেলাম।

স্কুলে গিয়ে দেখি কত্ত ভিড়! কত দিন যে স্কুল গেটের সামনে ভিড় দেখিনি! স্কুলে পৌঁছামাত্রই বৃষ্টি শুরু হয়েছিল। প্রায় দেড় বছর স্কুল বন্ধ থাকার পরেও ছাতা নিতে ভুলে যাওয়ার অভ্যাসটি যায়নি আমার। ক্লাসে ঢুকে দেখি বেশির ভাগই অচেনা! আসলে চেনা ছিল, কিন্তু ভুলে গেছি অনেককেই। কিছুক্ষণ পর ক্লাস শুরু হলো। স্যার রোল কল করলেন। নিজের রোল কলের সময় যে দাঁড়াতে হয়, সেটাও ভুলে গেছিলাম আমরা (লজ্জার কথা)। একজন গণিতের সূত্র ভুল করায় স্যার বললেন, ‘বেত আনতে হবে দেখছি!’ এই চেনা বাক্যটা শোনার জন্য আমরা কত দিন যে অপেক্ষা করেছি! বোরিং ক্লাসগুলো যে হঠাৎ এত প্রিয় হয়ে উঠবে ভাবিনি কখনো। কখন যে ক্লাসগুলো শেষ হয়েছে টেরই পাইনি! একটু পর শুনতে পেলাম এমন এক শব্দ, যা শুনে নিজের কানকেই বিশ্বাস হচ্ছিল না। সেই পরিচিত স্কুলের ঘণ্টা শুনে মনে প্রশান্তি অনুভব করলাম। ছুটির পর নিচে নেমে দেখি নোশিন (আমার এক বেস্ট ফ্রেন্ড) দাঁড়িয়ে। আমাকে বলল, ‘আমি তোকে মেসেজ করেছি, দেখিস নাই। ফোন করলাম, তোর আম্মু বলল, তুই চলে আসছিস। আমার খুব খারাপ লেগেছিল।’ আসলে দেরি করে আসায় ওপরের রুমে সিট পায়নি ও। করোনার জন্য তো এক রুমে অল্প কয়েকজন ক্লাস করতে পারবে। আমি বললাম, ‘পরেরবার আমরা কাছাকাছি বসব।’ বাসায় ফিরে দেখলাম ওর মেসেজগুলো। লেখা আছে, ‘কখন আসবি? স্কুলড্রেস পরবি না, ওকে?’ আমি লিখে দিলাম, ‘কেন?’, ও বলল, ‘আমি পরি নাই তো, তাই।’ এ রকম যে কত করেছি আগে! এখন আবার করার সুযোগ পেয়ে খুবই খুশি আমি। মনে হচ্ছে, হারিয়ে যাওয়া দিন ফিরে পেলাম।

লেখক: অষ্টম শ্রেণি, নাগেশ্বরী আদর্শ পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, কুড়িগ্রাম