হারিয়ে যাওয়ার দিন

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

২০১৭ সাল। আমার মাধ্যমিক স্কুলের প্রথম দিন। নতুন শহরে এসেছি। নতুন স্কুলে ভর্তি হওয়ার আনন্দটা পুরোনো বন্ধু হারানোর কারণে তেমন ছুঁতে পারেনি। বাস্তবতা মেনে ১ জানুয়ারি আব্বুর সঙ্গে স্কুলের উদ্দেশে রওনা দিলাম। বাসা থেকে স্কুলের দূরত্ব ৫-৭ মিনিট। আব্বুর সঙ্গে শীতের সকালে ঘুম ঘুম চোখ নিয়ে স্কুলের পথে রওনা দিলাম সকাল সাতটায়। প্রভাতি শাখার ছাত্রী হওয়ায় স্কুল শুরু হবে সাড়ে সাতটায়। সব ক্লাস শেষ। স্কুলের ছুটির ঘণ্টা বাজার পর গেটের বাইরে এসে দেখি আব্বু এখনো নিতে আসেনি। স্কুল ছুটি হয়েছে ১২টায়। আব্বু তো জানে স্কুল ছুটি হবে সাড়ে ১২টায়। এদিকে সবাই নিজ নিজ বাড়িতে ফিরে যাচ্ছে। কিছুক্ষণ মন খারাপ করে থাকার পর একা একা বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নিলাম। একা একাই আসছিলাম, কিছু দূর আসার পর মনে হলো, আরে আমার তো বাড়ি ফেরার রাস্তাই মনে নেই। সকালে কুয়াশার কারণে রাস্তাঘাট ভালো করে দেখতে পারিনি। ততক্ষণে আমি স্কুল থেকে বেশ দূরে চলে এসেছি। কী করব কিছু ভেবে পাচ্ছিলাম না। মনের অজান্তেই চোখ থেকে পানি গড়িয়ে এল। আমাকে কান্না করতে দেখে এগিয়ে এল আমাদেরই স্কুলের এক ছাত্রী। আমি খুলে বললাম কী হয়েছে। সে আমাকে স্কুলে ফিরে গেটের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকার পরামর্শ দিল। আমিও তা–ই করার সিদ্ধান্ত নিলাম। কিন্তু হায়! আমি স্কুলে ফেরার রাস্তাও হারিয়ে ফেলেছি। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম ওখানেই। তবে এবার শিক্ষার্থীরা যে পথ ধরে আসছে, আমিও তার উল্টো পথ ধরে বেশ কিছু বাঁক নিয়ে আবার স্কুলে পৌঁছে গেলাম। আরও কিছুক্ষণ স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার পর আব্বু নিতে এলে আব্বুকে দেখেই আমি জড়িয়ে ধরে আবার কান্না শুরু করলাম। আব্বু আমার মনে সাহস ঢুকিয়ে বাড়ি নিয়ে এলেন। বাড়ি আসার পর দেখলাম হায়রে আমি তো বাড়ির ঠিক সামনে এসে আবার ফিরে গেছি।

লেখক: শিক্ষার্থী, ফরিদপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ফরিদপুর