হাসির কাণ্ড

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

ঘটনাটি ঠিক কবে ঘটেছিল, তা মনে নেই। তবে তখন ছিল হালকা শীত। স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষা সবে শেষ হয়েছে। ফলাফলের জন্য অপেক্ষা। এমন সময় মা ঘোষণা দিলেন, এবার ছুটিতে আমরা নানাবাড়ি যাচ্ছি। আমি তো খুশিতে আত্মহারা। যথাসময়ে নানাবাড়িতে এসে উপস্থিত হলাম। অন্য কাজিনরাও এসেছিল। আমরা কাজিনরা বেশ দুষ্টু। সারাক্ষণ আমার পেছনে লেগে থাকত তারা, আর জ্বালাতন করত আমাকে। তাতে আমি বেশ মজাই পেতাম। বরং তাদের আশপাশে না দেখলে চারপাশটা কেমন যেন খালি খালি লাগত।

তখন আমি একটু বোকা ছিলাম। যে যা বলত, তা-ই আমি বিশ্বাস করতাম। কাজিনরা সব সময় আমাকে বোকা বানানোর চেষ্টা করত। এক রাতে খাওয়াদাওয়ার পর্ব শেষ করে বারান্দায় বসে জোছনা দেখছিলাম। চাঁদটা মেঘেদের সঙ্গে কেমন লুকোচুরি খেলছে। এমন সময় আমার এক কাজিন (রাফাত) এসে উপস্থিত।

আমি বললাম, ‘কী ভাইয়া, কিছু বলবে?’

ভাইয়া হেসে উত্তর দিল, ‘না। এমনি তোকে দেখতে এলাম।’

আমি একটু দেরি করে মুচকি হেসে বললাম, ‘ও আচ্ছা।’

তারপর ভাইয়া নিচু গলায় বলল, ‘রাতে সাবধানে থাকিস। কি–না–কি হয় কে জানে।’

আমি মনোযোগ দিয়ে চাঁদের খেলা দেখছিলাম। এ কথা শুনেই আঁতকে উঠে তার দিকে তাকাতেই দেখি সে দুই হাতে মুখ চেপে হাসছে। সেই হাসার কোনো শব্দ নেই, শরীরটা শুধু খানিক দোলে। আমার চোখে চোখ পড়তেই এক দৌড়ে চলে গেল সে। আমি কিছু বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছিলাম না। শুধু বুঝতে পারছিলাম আজ রাতে কিছু একটা ঘটবে।

কিছুক্ষণ পর আমি সেখান থেকে উঠলাম। আমার দুই চোখ ঘুমে বন্ধ হয়ে আসছিল। আমি বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লাম। একটু পরই মাথার নিচে একটা ঠান্ডা অনুভূতি পেলাম আমি। ঘুমে ঢুলু ঢুলু চোখে মাথার নিচে তাকাতেই চমকে উঠলাম। একটা বাদামি রঙের সাপ মাথার নিচে কুণ্ডলী পাকিয়ে শুয়ে আছে!

প্রথমে ভাবছিলাম আমি স্বপ্ন দেখছি। নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। তারপর আমি ‘সাপ! সাপ! বাঁচাও! বাঁচাও’ বলে চিৎকার করলাম। তাড়াহুড়া করতে গিয়ে মশারির সঙ্গে শরীর পেঁচিয়ে আছাড় খেলাম মাটিতে। চিৎকার শুনে সাপটার কাছে যেতেই হাসিতে ফেটে পড়ল সবাই। আমি শুধু অবাক হয়ে তাদের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। ঘটনাটা কী বুঝতে পারছিলাম না।

আসলে সাপটা ছিল রাবারের। আমার কাজিনরা সাপটা ডিপ ফ্রিজে রেখে ঠান্ডা করে বালিশটা বদলে তার জায়গায় রেখে দিয়েছিল।

লেখক: অষ্টম শ্রেণি, ময়মনসিংহ জিলা স্কুল, ময়মনসিংহ