হিপনিক জার্ক কি আসলেই ভয়ানক

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শেষ করে তখন বাজে প্রায় বিকেল পাঁচটা। শাহবাগে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর অবশেষে বাসে সিট মিলল। সিটে বসতে পেরে যেন ক্লান্তিতে বাসের সিটে পুরো শরীর এলিয়ে দিতে চাইল মন। কানে হেডফোন গুঁজে বাসে বসে থাকতে থাকতে কখন যে চোখ দুটো লেগে এল, টেরই পেলাম না৷ ১০ বা ২০ মিনিট পর হঠাৎ মনে হতে লাগল, আমি হয়তো কোনো উঁচু পাহাড় বা ছাদ থেকে নিচে পড়ে যাচ্ছি। ঠিক যেন রোলারকোস্টার রাইডে বসে আছি আর সেটা আচমকা নিচে নেমে যাচ্ছে। পুরো শরীরে বিদ্যুতের মতো একটা ঝাঁকুনি দিয়ে ঘুম ভেঙে গেল।

আমরা সবাই জীবনের কখনো না কখনো এমন পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছি। এটাকে বলে হিপনিক জার্ক (Hypnic Jerk) বা মায়োক্লোনিক জার্ক (Myoclonic Jerk)। এখন আমরা জানব, হিপনিক জার্ক কেন হয়।

গ্রামাঞ্চলে দাদি-নানিরা প্রায়ই বলতেন,

‘ঘুমিয়ে পড়লে, তো অর্ধেক মরে গেলে।’ হিপনিক জার্ক মূলত কোনো স্নায়বিক সমস্যার কারণে হয় না। অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, অবসাদ বা নিত্যদিনের ঘুমের শিডিউলের অনিয়ম ঘটলে এটি বেশি দেখা দেয়। শরীরে তন্দ্রাচ্ছন্ন ভাব এলে পেশিগুলো ধীরে ধীরে অবশ হতে থাকে। কিন্তু মস্তিষ্ক পেশিগুলোর এ কার্যক্রম বুঝে উঠতে না পেরে প্রক্রিয়াটিকে থামানোর চেষ্টা করে। ফলে মস্তিষ্ক ও পেশিগুলোর মধ্যে একটা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয় আর আচমকা শরীরে একটা ঝাঁকুনি সৃষ্টি করে। এ ছাড়া অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা, কায়িক পরিশ্রম, বেশি রাত অবধি জেগে থাকা, শরীরে ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও আয়রনের ঘাটতির ফলেও হিপনিক জার্ক (Hypnic Jerk) বা মায়োক্লোনিক জার্ক (Myoclonic Jerk) হতে পারে।

যখন কোনো ব্যক্তির হিপনিক জার্ক (Hypnic Jerk) বেশ ঘন ঘন হতে থাকে, তখন সে ধীরে ধীরে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে, তার ভেতরে সব সময় অস্থিরতা বিরাজ করে, সে স্বপ্নে আছে, না বাস্তবে আছে, বুঝে উঠতে পারে না, কোনো বিষয়ে মনোযোগ তৈরি করতে বেশ সময় লাগে। এ জন্য এ সমস্যা প্রতিহত করা বেশ জরুরি। আর তার জন্য জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনা আবশ্যক।

রাতে পরিমিত ঘুমের অভ্যাস করলে, দুশ্চিন্তামুক্ত থাকলে, বেশি বেশি ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রনসমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ করলে এ সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব।

তবু যদি হিপনিক জার্ক থেকে পরিত্রাণ না মেলে, তাহলে অবিলম্বে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের কাছ থেকে পরামর্শ নেওয়া উচিত।

লেখক: স্নাতক দ্বিতীয় বর্ষ, ঢাকা কলেজ