শ খানেক মানুষ বসে আছে। সবার চোখেমুখে একধরনের বিস্ময়। সব কৌতূহল স্টেজের ওপর হুইলচেয়ারে বসে থাকা ১৫ বছর বয়সী এক কিশোরের ওপর। দর্শকদের মধ্যে প্রায় সবার মনেই একই প্রশ্ন, এ–ও সম্ভব?
তোমরা অনেকেই হয়তো এতক্ষণে একটা প্রশ্ন করে ফেলেছ। কার কথা বলা হচ্ছে? হুইলচেয়ারে বসে থাকা সেই ছেলেটা কে? কেউ কেউ হয়তো আন্দাজ করতে পারছ। বলছি গায়ক স্পর্শ শাহর কথা, যে কিনা এইটুকুন বয়সেই গান গেয়ে পুরো বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে।
স্পর্শ শাহর বেড়ে ওঠা আর দশটা স্বাভাবিক বাচ্চার মতো এতটা সহজ ছিল না। জন্ম থেকেই ও অস্টিওজেনেসিস ইম্পারফেক্টা রোগে আক্রান্ত। যারা এই রোগের সঙ্গে পরিচিত না তাদের জন্য বলছি, এই রোগ খুবই ভয়াবহ। এর ফলে অল্প চাপেই শরীরের হাড় ভেঙে যায়। এই রোগ হলে কখনো কখনো সামান্য করমর্দনেও হাড় ভেঙে যেতে পারে। দুঃখজনক হলেও সত্যি, স্পর্শ শাহর জন্মের পর ৩৫টি হাড় ভাঙা ছিল! ওর বয়স যখন ১৩, তখন এই সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১৩০–এ! ও কখনো কোনো ভারী জিনিস বহন করতে পারত না, এমনকি দৌড়ানোও নিষেধ ছিল ওর জন্য। তবে এত প্রতিবন্ধকতাও দমিয়ে রাখতে পারেনি স্পর্শ শাহকে। যার স্বপ্ন বিশ্বজয়, তাকে দমিয়ে রাখা একটু কঠিন তো হবেই।
স্পর্শ শাহর বয়স যখন ছয়, তখন থেকেই ও ভারতীয় শাস্ত্রীয় সংগীত শেখা শুরু করে। এ ছাড়া আমেরিকার ক্ল্যাসিক মিউজিক সম্পর্কেও শক্ত ধারণা নেয় ও। চার বছর ধরে ও অনুশীলন করছে। বুঝতেই পারছ, গানের প্রতি ওর অনুরাগটা কতখানি।
এখন পর্যন্ত ১০০টির বেশি লাইভ পারফরম্যান্সে গান কাভার করেছে স্পর্শ। শুধু গান গাওয়াতেই শেষ নয়, গান লেখায়ও দারুণ পারদর্শী ১৫ বছর বয়সী এই কিশোর। মাত্র ১০ বছর বয়সেই প্রথম গান লেখে ও। তাতে সুর বসিয়ে বেশ কিছু অনুষ্ঠানে গানটা গাওয়াও হয়েছে ইতিমধ্যে। গানের নাম ‘দিজ লাভ উইল নেভার ফেড’।
এমিনেমের ‘নট অ্যাফ্রেইড’ গানটি গেয়েই মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবার কাছে পরিচিতি পায় স্পর্শ। গানটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৬৫ মিলিয়ন মানুষের নজরে আসে!
তবে এমিনেমের ‘নট অ্যাফ্রেইড’ গানটি গেয়েই মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সবার কাছে পরিচিতি পায় স্পর্শ। গানটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ৬৫ মিলিয়ন মানুষের নজরে আসে! বর্তমানে ভারতীয় ক্ল্যাসিক এবং আমেরিকান হিপ হপের সংমিশ্রণে ‘রাগা র্যাপ’ নামের একধরনের সংগীত নিয়ে কাজ করছে।
এই গল্প হয়তো এত দূর আসত না যদি নিজের শারীরিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে ছোটবেলা থেকেই নিজেকে গুটিয়ে নিত স্পর্শ। ওর এই দৃঢ়তার গল্প শুনতে স্পর্শকে এখন অনেক অনুষ্ঠানেই আমন্ত্রণ করা হয়।
স্পর্শ শাহ মানুষকে দেখাতে চায় কীভাবে সমস্যা মোকাবিলা করতে হয়, কীভাবে জীবনের চাকা ঘুরিয়ে দিতে হয়। তোমাদের উদ্দেশে ওর ছোট্ট তিনটি উপদেশ রয়েছে,
১. নিজের অনুরাগের জায়গাটি খুঁজে বের করো।
২. কখনোই অতীত ধরে রেখো না।
৩. অন্যকে সাহায্য করো।