হেয়ার স্টাইল

অলংকরণ: রাকিব রাজ্জাক

ছোটবেলায় আমার মাথায় অনেক লম্বা চুল ছিল। অন্তত আমার সমবয়সী বান্ধবীদের চেয়ে আমার চুল ছিল লম্বা। এই নিয়ে আমার আনন্দের সীমা ছিল না। সব সময় আমার সেই লম্বা চুল দুলিয়ে ঘুরে বেড়াতাম। প্রতি দু-তিন মাসে একবার আমার বাবা আমার চুল ছেঁটে দিতেন। একবার বাবা আমাকে ডেকে কেমন যেন একটু ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এবার আমি তোমাকে নাড়ু করে দিই?’

‘নাড়ু কী, বাবা?’ আমি উৎসাহী হয়ে জিজ্ঞেস করলাম।

একটু ভেবেচিন্তে বাবা বললেন, ‘নাড়ু হচ্ছে চুলের একধরনের স্টাইল।’

এই কথা শুনে তো আমি একেবারে অভিভূত হয়ে গেলাম। ভাবলাম, না জানি কত সুন্দর ‘স্টাইল’ করে আমার চুল কেটে দেওয়া হবে। আবার জিজ্ঞেস করলাম, ‘তুমি নাড়ু করে দিতে জানো, বাবা?’

‘হ্যাঁ, জানব না কেন? খুব সহজ।’ বাবা হাসিমুখে বললেন।

তারপর থেকেই আমি বাবার পেছনে ঘুর ঘুর করতে লাগলাম। আর কখন আমাকে নাড়ু করে দেবে এই বলে বাসার সবার প্রায় মাথা খারাপ করে দিলাম। পরদিন বাবার সঙ্গে আনন্দে লাফাতে লাফাতে ছাদে গেলাম নাড়ু হওয়ার জন্য। আমার উৎসাহ দেখে বাবাও মহা আনন্দে কাঁচি চালাতে লাগলেন। আমিও উদ্‌গ্রীব হয়ে রইলাম আমার নাড়ু করা চুল আয়নায় এক পলক দেখার জন্য। বাবার কাজ শেষ হতেই দৌড় দিলাম নিচে। কিন্তু হায়! আয়নায় আমি একি দেখলাম! আমার মাথাটা পুরো গোপাল ভাঁড়ের টাকের মতো চকচক করছে। গোপাল ভাঁড়ের তো তাও গোটা কয়েক চুল আছে, আমার তো তাও নেই। রাগে–দুঃখে কেঁদেকেটে একেবারে একাকার হয়ে গেলাম। আমার বান্ধবীরা আমার টাকে টোকা মারতে লাগল।

এই ঘটনার পর আমি আর কোনো দিনও ‘নাড়ু’ করিনি। আর আমার এত সাধের চুলগুলো নাড়ু করে দেওয়ার এত ‘বড়’ অপরাধে অপরাধী আমার বাবাকে ক্ষমা করে দিতেও বেশ কিছুদিন লেগেছিল।

লেখক: শিক্ষার্থী, নওগাঁ সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, নওগাঁ