ছাত্রজীবনের শুরু থেকে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত আমি একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ালেখা করতাম। এই প্রথমবার ন্যাশনাল কারিকুলামে পড়ালেখা করছি। নতুন পরিস্থিতিতে শুরুতে একটু অস্বস্তি বোধ করলেও এখন পরিস্থিতি আগের চেয়ে ভালো আছে। কিন্তু একটা সমস্যা কখনোই আমার পিছু ছাড়ছে না। সেই সমস্যাটি হলো সহপাঠীদের সঙ্গে আমার অমিল। ছোটবেলা থেকে জীবনে অনেক কিছু দেখেছি, সহ্য করেছি, যার অন্যতম হচ্ছে আমার মা-বাবার বিচ্ছেদ এবং তাঁদের দ্বিতীয় বিয়ে। পরিবারেও অনেক সমস্যা আছে। সব সময় একটি মানসিক চাপ বোধ করি। এ কারণে বন্ধুরা বা সহপাঠীরা যদি আমার সঙ্গে ফাজলামি বা দুষ্টুমি করে, তা আমি সহ্য করতে পারি না। অতি সহজেই রেগে যাই। এ কারণে তারা আমাকে নিয়ে আরও বেশি মজা করে এবং এসব কারণে আমার পড়ালেখায়ও ক্ষতি হচ্ছে। আমি তাদের সঙ্গে মিশতে পারি না। তারা আমার থেকে আলাদা। আমি অনেক সহজ-সরল। কিন্তু তারা একদমই অন্য রকম। তাদের মতো না চলতে পারার কারণেই আমার এই সমস্যাগুলোর সম্মুখীন হতে হচ্ছে। ভেবেছিলাম নতুন স্কুলে যাওয়ার পরে পরিস্থিতি বদলাবে, কিন্তু তা হয়নি। সামনে বোর্ড পরীক্ষা এবং সেটিতে আমাকে যেকোনোভাবে ভালো করতেই হবে। আমি এখন কী করব? অন্যের জন্য নিজেকে বদলে ফেলব?
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক
উত্তর: প্রথম কথা হচ্ছে, কখনোই অন্যের জন্য নিজেকে বদলাবে না, তবে নিজের জন্য নিজেকে বদলাতে পারো। এই নিজের ভালোটা বুঝতে পারাটাই দায়িত্ববোধ। তুমি অষ্টম শ্রেণিতে পড়ছ, এখনই কিন্তু দায়িত্ববোধ তৈরির বয়স। তবে এই বয়সে তুমি বেশ কিছু বিরূপ পরিস্থিতিতে পড়েছ। মা-বাবার মধ্যে বিচ্ছেদ, ইংরেজি মাধ্যম থেকে হঠাৎ করে বাংলা মাধ্যমে চলে আসা (কেন পড়ার মাধ্যম পাল্টাতে হলো তা কিন্তু বলোনি!) এবং নতুন স্কুলে খাপ খাইয়ে নিতে সমস্যা হওয়া। তবে আমি বলব, এই বিরূপ পরিস্থিতিগুলোর প্রতিটাই কিন্তু তোমার মধ্যে দায়িত্ববোধ তৈরির জন্য এবং তোমার মনকে পরিণত করতে সহায়ক হতে পারে। প্রতিটি নেতিবাচক বিষয়কে ইতিবাচকভাবে কাজে লাগানোটাই বুদ্ধিমানের লক্ষণ। তুমি এত সুন্দর করে গুছিয়ে তোমার সমস্যা লিখেছ, তাতে আমি মনে করি, তুমি অবশ্যই একজন বুদ্ধিমান। বন্ধুদের দুষ্টুমিতে খেপে না গিয়ে সহজ থাকার চেষ্টা করো, তাদের বলো যে তুমি ইংরেজি মাধ্যম থেকে এসেছ। তারা যেন তোমাকে সাহায্য করে। যে বিষয়গুলো তুমি ভালো পারো সেগুলোতে তাদের তুমি সাহায্য করো। তুমি নিজেই বুঝতে পেরেছ যে তুমি রেগে যাও বলেই তারা তোমাকে নিয়ে মজা করে। তাই রাগ নিয়ন্ত্রণে রাখো, পড়ায় মন দাও, বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটাও। তাদের এড়িয়ে চলবে না। তারা যত তোমাকে নিয়ে মজা করবে, তুমি তত সাবলীলভাবে তাদের সঙ্গে মিশতে থাকো।
এই বিভাগে তোমরা তোমাদের মানসিক নানা সমস্যা, যা তোমার শিক্ষক, মা-বাবা বা অন্য কাউকে বলতে পারছ না, তা আমাদের লিখে পাঠাও। পাঠানোর ঠিকানা—মনোবন্ধু, কিশোর আলো, ১৯ কারওয়ান বাজার, ঢাকা। ইমেইল করতে পারো [email protected]-এই ঠিকানায়। ইমেইলে পাঠাতে হলে সাবজেক্টে লিখবে - ‘মনোবন্ধু’, তারপর তোমার সমস্যাটি ইউনিকোড ফরম্যাটে লিখে পেস্ট করে দেবে মেইলের বডিতে। নাম, বয়স লিখতে ভুলবে না। তোমার সমস্যা বোঝার ক্ষেত্রে এগুলো গুরুত্বপূর্ণ।