পরীক্ষায় ভালো করতে এই ৭টি জিনিস লাগবে, আর দুনিয়ায় সফল হতে বেশি দরকার ৮ নম্বরটি
ছাত্রজীবনটা কেমন হতো, যদি পরীক্ষা না থাকত! আহা, চিন্তা করলেই মনে গান ভাসে, আহা কি আনন্দ আকাশে-বাতাসে!
কিন্তু বলা হয়ে থাকে, জীবনের প্রতি পদে পদে পরীক্ষা। জীবনের পরীক্ষার কথায় পরে আসি। প্রথমে আসি স্কুল-কলেজের পরীক্ষায় ভালো করার জন্য যে ৭টি জিনিস লাগে।
জিনিস মানে বলা যেতে পারে, যে ৭টি গুণ, বৈশিষ্ট্য, সম্পদ বা অস্ত্র লাগবে ছাত্রজীবনের পরীক্ষায় ভালো করার জন্য।
আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির (ইউটিসি) একটি ওয়েবসাইটে আমি একটি লেখা দেখতে পাচ্ছি। শিরোনাম ‘সফল ছাত্রদের সাতটি গুণ’। লিখেছেন মারাহ হুইটেকার। তিনি বলছেন, ভালো ছাত্রদের থাকে সাতটি গুণ।
১. দায়িত্ববান হওয়া
যেমন ধরো, তুমি যদি নিজের দায়িত্ব না বোঝো, পড়া সময়মতো না করো, তাহলে পড়ালেখায় ভালো করাটাই কঠিন হয়ে যাবে। আবার তুমি যদি নিজে থেকেই কিছু করতে না চাও, কেউ না বললে না পড়ো, তাহলেও সমস্যা।
২. নিজে থেকে ভালো করতে চাওয়া
তোমার নিজে থেকেই অনুপ্রাণিত থাকতে হবে। অর্থাৎ ভালো করতে তুমি নিজেই চাও। অন্য কেউ জোর করে বলে বলে তোমাকে ভালো করাতে পারবে না। আমি ভালো ছাত্র হব—এই জিনিসটা তোমার নিজের থেকে আসতে হবে। সেলফ মোটিভেশন লাগবে।
৩. লেগে থাকা আর সহ্য করা
জীবনে সব সময়ই তো সবকিছু ঠিকঠাক যাবে না। তখন দরকার সহ্যশক্তি। ধৈর্য রাখতে হবে।
৪. জিনিসটা কী, বোঝা
বুঝে বুঝে পড়তে হবে। আর কেবল মুখস্থ করলে হবে না, বোঝার চেষ্টা করতে হবে। চিন্তা করতে হবে। তখনই শেখাটা কাজে লাগবে।
৫. নানা উপায় ও উৎস ব্যবহার করা
বইপত্র, অনলাইন ক্লাস, বন্ধুদের সাহায্য—এসব ঠিকভাবে কাজে লাগাতে জানতে হবে।
৬. গোছানো থাকা, গুছিয়ে রাখা
সময়মতো কাজ করা, গুছিয়ে পড়া—এগুলোও অনেক জরুরি।
৭. প্রশ্ন করা, অংশ নেওয়া
আর ক্লাসে শুধু চুপ করে বসে থাকলে হবে না, প্রশ্ন করতে হবে, বোঝার চেষ্টা করতে হবে।
এগুলো গেল ভালো ছাত্র হওয়ার উপায়। পরীক্ষায় ভালো করতে হলে ওপরের জিনিসগুলো তোমার লাগবে।
কিন্তু জীবনের পরীক্ষাই আসল। ক্লাসের পরীক্ষায় ফার্স্ট হলে আর জীবনের পরীক্ষায় খারাপ করলে, তাহলে তো হবে না। জীবনের পরীক্ষায় ফার্স্ট হতে হলে নিচের গুণগুলো লাগবে।
১. সততা
আমার শিক্ষক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী বলতেন, ‘তোমার সততা থাকলে আর কোনো গুণ বড় নয়। আর সততা না থাকলে কোনো গুণ বড় নয়।’ মনে রেখো, মিথ্যা বলে কেউ বেশি দূর যেতে পারে না।
২. পরিশ্রম
সফল ফুটবলার ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো বলেছেন, ‘প্রতিভা বা সৌভাগ্য কোনো ব্যাপার নয়। একমাত্র জিনিস হলো পরিশ্রম।’ কেউ জন্মেই সব পারে না। যারা পারে, তারা অনেক ঘাম ঝরিয়েছে।
৩. একাগ্রতা
পড়াশোনা হোক বা খেলাধুলা—যে কাজে মন দেবে, একাগ্রভাবে চেষ্টা করবে, সেই কাজেই সফলতা আসবে। ফোকাস ঠিক করো, লক্ষ্য স্থির করো।
৪. সুস্বাস্থ্য
শরীর ভালো না থাকলে কিছুই ভালো লাগে না। নিয়মিত খাওয়া, ঘুম, খেলাধুলা—সবই দরকার। সুস্থ দেহে থাকে প্রাণ। আর দরকার মাদকমুক্ত থাকা। যেকোনো বাজে নেশা, যেমন অতিরিক্ত ডিভাইস-আসক্তিও খারাপ। ঠিকভাবে ঘুমাতে হবে। ঠিকভাবে ব্যায়াম বা খেলাধুলা করতে হবে।
৫. বাস্তবতা মেনে নেওয়া
জীবন সব সময় তোমার মতো চলবে না; কিন্তু সেটিকে মেনে নিয়েই এগোতে হবে। যে খাপ খাওয়াতে পারে, সে–ই টিকে থাকে।
৬. বদান্যতা
নিজে ভালো থেকো; কিন্তু অন্যের জন্যও ভালো চাও। বন্ধু, পরিবার, সমাজ—সবাইকে নিয়ে ভাবো। উদার হৃদয়ের মানুষকে সবাই ভালোবাসে। তার সাফল্য আসার সম্ভাবনা বাড়ে। অন্যের সাফল্যে খুশি হতে পারতে হবে। তাহলে মন ভালো থাকবে। তখন তোমার জীবনটা আনন্দময় হয়ে উঠবে।
৭. লেগে থাকা
তোমার কাজ তুমি করে যাও। কষ্ট হলেও দমে যেয়ো না। অনেকেই মাঝপথে হাল ছেড়ে দেয়; কিন্তু যারা শেষ পর্যন্ত লেগে থাকে, তারাই বিজয়ী হয়।
এই সাতটি গুণ যদি তোমার মধ্যে থাকে, তাহলে জীবনের সব পরীক্ষায় তুমি কৃতকার্য হবে—এটা আমি বলতেই পারি।
এই ৭টি গুণের পরে আরেকটি জিনিস আজকের দুনিয়ায় সফল হওয়ার জন্য খুব দরকার।
৮. তা হলো কানেকটিভিটি। যোগাযোগ। তুমি যত মানুষের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করবে, তা তোমার তত কাজে লাগবে। বড় মানুষ, দূরের মানুষ, কাছের মানুষ, ছোট মানুষ—সবার সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়ে তোলো। আর সেটি বজায় রাখো। চর্চা করো। মানুষদের জন্মদিনে শুভেচ্ছা জানাও। ই–মেইল করো। টেক্সট মেসেজ দাও। ফোন করো। তাদের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করো। এসব জীবনে খুব কাজে লাগে।