মন ছুঁয়ে যাওয়া ইরানি ৫ মুভি
আমরা সাধারণত হলিউড–বলিউডের মুভি দেখে থাকি। এর বাইরে দারুণ সব মুভি বানান ইরানি নির্মাতারা। খুব সাধারণ গল্পকে অসাধারণভাবে তুলে ধরায় তাঁরা দক্ষ। সামাজিক বাস্তবতা, মানবিক সম্পর্ক, শৈশবের নানা কথা ও জীবনের ছোট ছোট মুহূর্তগুলো খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা হয় ইরানের মুভিগুলোয়। মন্ত্রমুগ্ধ হয়ে যান দর্শক। অনেকের মতে, পুরস্কারজয়ী এই মুভিগুলো কেবল বিনোদনের জন্যই নয়; বরং জীবনকে এক নতুন দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখতে শেখায়। ইরানের জনপ্রিয় এই পাঁচ মুভি দেখে ফেলতে পারো।
মুভির নাম: ‘চিলড্রেন অব হেভেন’ ‘(Children of Heaven)’
পরিচালক ও লেখক: মাজিদ মাজিদি
ধরন: ফ্যামিলি ড্রামা
প্রকাশকাল: ১৯৯৭
ব্যাপ্তি: ১ ঘণ্টা ২৯ মিনিট
আইএমডিবি রেটিং: ৮.২/১০
পুরস্কার: ১৯৯৯ সালের অস্কারে সেরা বিদেশি ভাষার চলচ্চিত্র বিভাগে মনোনীত। এটিই ছিল অস্কারে মনোনীত প্রথম ইরানি চলচ্চিত্র।
আলী ও তার ছোট বোন জোহরাকে নিয়ে সাজানো হয়েছে মুভির গল্প। একদিন আলী ভুল করে জোহরার একমাত্র জুতা হারিয়ে ফেলে। জুতা কেনার সামর্থ্য না থাকায় তারা সিদ্ধান্ত নেয়, একই জুতা ভাগ করে পরে স্কুলে যাওয়ার। সকালে জুতা পরে স্কুলে যায় জোহরা, আর ছুটি হলে দ্রুত বাড়ি ফিরে আসে, যাতে আলী সেই জুতা পরে স্কুলে যেতে পারে। এই ছোট্ট ঘটনার মধ্য দিয়ে দারিদ্র্য, সংগ্রাম, দায়িত্ববোধ, ভাই–বোনের গভীর ভালোবাসা আর স্বপ্ন নিয়ে সাজানো হয়েছে ‘চিলড্রেন অব হেভেন’।
মুভির নাম: ‘দ্য কালার অব প্যারাডাইস’ ‘(The Color of Paradise)’
পরিচালক ও লেখক: মাজিদ মাজিদি
ধরন: ড্রামা, ফ্যামিলি, চিলড্রেন’স
প্রকাশকাল: ১৯৯৯
ব্যাপ্তি: ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট
আইএমডিবি রেটিং: ৮.১/১০
পুরস্কার: মন্ট্রিল ওয়ার্ল্ড ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গ্র্যান্ড প্রিক্স দে আমেরিকাস, ফজর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা চলচ্চিত্র, সেরা পরিচালক, সেরা চিত্রনাট্য, বোস্টন সোসাইটি অব ফিল্ম ক্রিটিকস অ্যাওয়ার্ডস।
মাজিদ মাজিদির আরেকটি মাস্টারপিস ‘দ্য কালার অব প্যারাডাইস’। এক অন্ধ শিশুর জীবন ও সৃষ্টিকর্তার প্রতি তার গভীর বিশ্বাসকে খুব যত্নের সঙ্গে দেখিয়েছেন পরিচালক। ছবির প্রধান চরিত্র মোহাম্মদ জন্ম থেকেই অন্ধ। তেহরানের অন্ধদের একটি বোর্ডিং স্কুলে পড়ে সে। গ্রীষ্মের ছুটিতে মোহাম্মদ ফেরে গ্রামের বাড়িতে। যদিও মোহাম্মদের বাবা তাকে সমাজের বোঝা মনে করেন। কিন্তু মোহাম্মদ তার দৃষ্টিহীনতা সত্ত্বেও নিজের মতো করে প্রকৃতিকে অনুভব করে। পাখির গান, ঝরনার শব্দ, ফুলের গন্ধ ও পাতার স্পর্শ দিয়ে পৃথিবীকে অনুভব করে সে। দৃষ্টি না থাকলেও তার অন্য ইন্দ্রিয়গুলো এতটাই প্রখর যে প্রকৃতির ছোট ছোট অনেক কিছুই বুঝতে পারে মোহাম্মদ। গল্প আর আবেগের পাশাপাশি দুর্দান্ত ফ্রেমিং মুভিটিকে আরও আলাদা করে তুলেছে। গ্রামীণ ইরানের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে অনবদ্যভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। মোহাম্মদের সংগ্রাম, তার বাবার মানসিক টানাপোড়েন এবং শেষ পর্যন্ত ভালোবাসায় সবার মন জয়—সব মিলিয়ে মুভিটি যেকোনো বয়সী দর্শকদের মন ছুঁয়ে যাবে।
মুভির নাম: ‘দ্য হোয়াইট বেলুন’ ‘(The White Balloon)’
পরিচালক: জাফর পানাহি
লেখক: আব্বাস কিয়ারোস্তামি
ধরন: ড্রামা, চিলড্রেন’স
প্রকাশকাল: ১৯৯৫
ব্যাপ্তি: ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট (৮৫ মিনিট)
আইএমডিবি রেটিং: ৭.৮/১০
পুরস্কার: ১৯৯৫ সালে কান ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা চলচ্চিত্র, ফজর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা পরিচালক ও সেরা চিত্রনাট্য, টোকিও ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল, সিঙ্গাপুর ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সেরা এশিয়ান ফিচার ফিল্ম।
মুভির প্রধান চরিত্র রাজিয়া। নববর্ষের আগের দিন তার একমাত্র চাওয়া, একটি সোনালি মাছ কেনা। সে তার মায়ের কাছ থেকে একটি নোট পায়। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত সেই নোট পথে হারিয়ে ফেলে। মাছ কেনার জন্য রাজিয়া সেই নোটের সন্ধানে বের হয়। তার এই যাত্রা তাকে তেহরানের ব্যস্ত রাস্তা ও বিচিত্র সব মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেয়। সে এমন সব মানুষের মুখোমুখি হয়, যাদের জীবন তার নিজের চেয়েও জটিল। এমনই সব ঘটনা নিয়ে ‘দ্য হোয়াইট বেলুন’ মুভিটি।
মুভির নাম: ‘হয়ার ইজ দ্য ফ্রেন্ড’স হাউস?’ ‘(Where Is the Friend’s House?)’
পরিচালক ও লেখক: আব্বাস কিয়ারোস্তামি
ধরন: ড্রামা, চিলড্রেন’স
প্রকাশকাল: ১৯৮৭
ব্যাপ্তি: ১ ঘণ্টা ২৩ মিনিট
আইএমডিবি রেটিং: ৮.১/১০
পুরস্কার: ১৯৮৯ সালে লোকার্নো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে ব্রোঞ্জ লেপার্ড, ১৯৮৭ সালে ফজর ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে গোল্ডেন প্লেট।
আব্বাস কিয়ারোস্তামির ক্ল্যাসিক মুভি ‘হয়ার ইজ দ্য ফ্রেন্ড’স হাউস’। আহমেদ নামের একটি ছোট্ট ছেলে ও তার বন্ধু মোহাম্মদ রেজার গল্প নিয়েই এই মুভি। অসাবধানতাবশত একটি হোমওয়ার্কের খাতা নিজের ব্যাগে চলে আসে। স্কুলে নিয়ম হলো, যদি কেউ হোমওয়ার্কের খাতায় বাড়িতে স্বাক্ষর না করিয়ে আনে, তবে তাকে স্কুল থেকে বের করে দেওয়া হবে। মোহাম্মদের এই খাতা যদি তার মা–বাবা স্বাক্ষর না করে দেন, তাহলে তার স্কুলজীবন শেষ। আর তখনই শুরু হয় আহমেদের দুঃসাহসিক অভিযান। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসছে আর আহমেদ তার বন্ধুর বাড়ি খুঁজে বের করার জন্য বেরিয়ে পড়ে। সে জানে না তার বন্ধুর বাড়ি কোথায়, শুধু জানে পাশের গ্রামেই তার বন্ধু থাকে। ছোট আহমেদ গ্রাম থেকে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়, অপরিচিত লোকদের কাছে তার বন্ধুর বাড়ির ঠিকানা জানতে চায়। সে পথে বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে কথা বলে, কেউ তাকে সাহায্য করে, কেউ ভুল তথ্য দেয়, আবার কেউ তার কথা পাত্তাই দেয় না। সাধারণ কাহিনি মনে হলেও অসাধারণ একটি মুভি এটা।
মুভির নাম: ‘দ্য এলিফ্যান্ট কিং’ ‘(The Elephant King)’
পরিচালক: হাদি মোহাম্মদিয়ান
ধরন: অ্যানিমেটেড, অ্যাডভেঞ্চার, কমেডি, ফ্যামিলি
প্রকাশকাল: ২০১৪
ব্যাপ্তি: ১ ঘণ্টা ৩০ মিনিট
আইএমডিবি রেটিং: ৪.৮/১০
‘দ্য এলিফ্যান্ট কিং’ একটি ইরানি অ্যানিমেটেড মুভি। সাধারণত আমরা ইরানি মুভি বলতে যা বুঝি, তার চেয়ে বেশ ভিন্ন। মুভিটির গল্প আফ্রিকার এক বনের রাজা হাতির ছেলেকে নিয়ে। সে জন্ম থেকেই একটু ভিতু। সে মোটেও তার বাবার মতো শক্তিশালী বা সাহসী হতে পারেনি, যা তাকে সব সময় হতাশ করে। তার একমাত্র স্বপ্ন হলো, তার বাবার মতো শক্তিশালী হয়ে ওঠা। কীভাবে সে তার বাবার মতো বনের রাজা হয়ে উঠবে, তার একটি মজার কাহিনি এটা।