বারো নিয়ে সত্যজিৎ
মাঝেমধ্যে আপাতদৃষ্টে ছোট্ট মনে হওয়া কোনো ঘটনা ঝট করে জীবনের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে। সত্যজিৎ রায়ের সঙ্গেও ঠিক তেমনটিই ঘটেছিল।
১৯৫০-এর এক বিকেলে সত্যজিৎ রায় নামের ঝকঝকে চোখের ছয় ফুট পাঁচ ইঞ্চি উচ্চতার ইয়া লম্বা ছেলেটা কী কুক্ষণেই (কিংবা আমাদের জন্য সুক্ষণে) দেখে ফেলল ‘দ্য বাইসাইকেল থিফ’ চলচ্চিত্রটা। সিনেমা হলে ঢুকেছিল এক মানুষ হয়ে, বের হলো একটা আলাদা মানুষ হয়ে। ঠিক করে ফেলল, যে করেই হোক, সে সিনেমাই বানাবে।
তারপর কত ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে সত্যজিৎ বানিয়েছিলেন তাঁর প্রথম সিনেমা ‘পথের পাঁচালী’, সেটা একটা অন্য গল্প। আর ‘পথের পাঁচালী’ বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে যে সেটা বিশ্বজুড়ে কেমন সাড়া ফেলে দিল, আর সত্যজিৎ রায় খ্যাতি পেলেন বরেণ্য পরিচালক হিসেবে, তা তো তোমরা নিশ্চয়ই জানো।
লেখালেখি নিয়ে কোনো ভাবনাচিন্তা কিন্তু কখনো সত্যজিতের মাথায় ছিল না। জীবনের শুরুর দিকে তিনি মাঝেমধ্যে খবরের কাগজে চলচ্চিত্র বিষয়ে ইংরেজিতে প্রবন্ধ লিখতেন। বাংলা ছবির চিত্রনাট্যও লিখেছিলেন দু–একটা, সেগুলো থেকে পরে আর সিনেমা করা হয়নি।
সত্যজিৎ রায়ের বাবা-দাদা দুজনই ছিলেন অসম্ভব দাপুটে লেখক। উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী আর সুকুমার রায়, দুজনেই ছিলেন বাংলা শিশুসাহিত্যের দিকপাল। ১৯১৩ সালে উপেন্দ্রকিশোর প্রকাশ করেন ছোটদের জন্য পত্রিকা, নাম রাখেন ‘সন্দেশ’। তাঁর মৃত্যুর পর এই জনপ্রিয় পত্রিকার গুরুভার কাঁধে তুলে নেন সুকুমার রায়। ‘সন্দেশ’ যখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে, সুকুমার রায় হঠাৎ পাড়ি দেন না–ফেরার দেশে। সত্যজিতের বয়স তখন আড়াই।
পরে সুকুমার রায়ের ভাই সুবিনয় রায় কিছুদিন চালানোর চেষ্টা করলেও নানা কারণে আর চালিয়ে নিতে পারেননি। বন্ধ হয়ে যায় ‘সন্দেশ’।
সত্যজিৎ যখন বড় হচ্ছেন, মা সুপ্রভা দেবী প্রায়ই বলতেন ‘সন্দেশ’ আবার চালু করার কথা। খুব ছোটবেলায় বাবা-দাদা দুজনকেই হারানোয় তাঁদের সঙ্গে সত্যজিতের একমাত্র যোগ ছিল তাঁদের রেখে যাওয়া লেখা আর ‘সন্দেশ’ পত্রিকাটা। তাই এই পত্রিকার প্রতি তাঁর টানটাও ছিল গভীর। বেশ কয়েকটা সিনেমা বানিয়ে অল্প কিছু টাকাপয়সা জমিয়ে সত্যজিৎ ঠিক করলেন, আবার ‘সন্দেশ’ চালু করবেন।
পয়লা বৈশাখ, ১৩৬৮। ১৯৬১ সাল। নতুন করে শুরু হলো ‘সন্দেশ’। সম্পাদক সত্যজিৎ ৪০ বছর বয়সে নতুন করে শুরু করলেন লেখালেখি। ছোটদের জন্য।
এতক্ষণ ধরে ‘সন্দেশ’–এর কথা বলছি কেন জানো? ‘সন্দেশ’ বের না করলে সত্যজিৎ রায় কখনো হয়তো লেখালেখিতেই আসতেন না। আমরাও তাঁর সিনেমাগুলো মুগ্ধ নয়নে দেখেই খুশি থাকতাম, আমাদের কখনো ফেলুদার সঙ্গে পরিচয় হতো না, পরিচয় হতো না প্রফেসর শঙ্কুর সঙ্গে, তারিণীখুড়োকেও কোনো দিন চিনতে পারতাম না।
সত্যজিৎ দুই হাতে লিখেছেন ‘সন্দেশ’-এ। নিজেই প্রচ্ছদ আঁকতেন, অলংকরণ করতেন, নিজেই সম্পাদনা করতেন প্রতিটি লেখা। নিজের মৌলিক ছোটগল্প, ধারাবাহিক উপন্যাস আর কমিকস্ট্রিপ তো আছেই, পাশাপাশি অনুবাদ করতেন বিদেশি সাহিত্যও।
সত্যজিৎ রায়ের উপন্যাসগুলো ‘সন্দেশ’–এ ধারাবাহিকভাবে প্রকাশের পর বছর শেষে আলাদা করে বই হিসেবে বের হতো। আর গল্পগুলো বের হতো সংকলন হিসেবে। প্রতিটি সংকলনে বারোটা করে গল্প। গল্পের সংখ্যা যে বারো, সেটা নাম শুনেই বোঝা যায়। সংকলনগুলোর নামগুলোই দেখো—এক ডজন গপপো, আরো এক ডজন, আরো বারো, একের পিঠে দুই, এবারো বারো, জবর বারো, বাছাই বারো, বা! ১২।
বারো-ই কেন, অন্য কোনো সংখ্যা কেন নয়?
একটা কারণ হতে পারে, ফর্মার বিন্যাস। বারোটা করে ছাপলে বইটা খুব বেশি মোটাও হয় না, আবার খুব বেশি চিকনও হয়ে যায় না। পাঠক-প্রকাশক দুদলেরই সুবিধা।
আর বারোটা গল্প নিয়ে সংকলন বের করাটা তখন বেশ স্ট্যান্ডার্ড। এর আগে শরৎচন্দ্র, বিভূতিভূষণ, প্রমথনাথ বিশী অনেকেই বারোটা করে গল্প নিয়ে সংকলন বের করেছেন।
সত্যজিতের এই বারোর সংকলনে ভরা থাকত সব রকমের গল্প—অবিশ্বাস্য সব সায়েন্স ফিকশন, গা ছমছম ভুতুড়ে গল্প, কিংবা হাহাহিহি করে হাসিতে ফেটে পড়া গল্প।
‘জবর বারো’ বইটার কথাই ধরো। এ বইয়েও গুনে গুনে ঠিক বারোটা গল্প। কিংবা বলা ভালো এগারোটা গল্প, একটা নাটিকা। ‘মহিম সান্যালের ঘটনা’, ‘গণৎকার তারিণীখুড়ো’, ‘শিল্পী’, ‘অভিরাম’, ‘ব্রজবুড়ো’, ‘মৃগাঙ্কবাবুর ঘটনা’, ‘গল্পবলিয়ে তারিণীখুড়ো’, ‘প্রতিকৃতি’, ‘পুরস্কার’ আর ‘বর্ণান্ধ’। আছে নাটিকা ‘হাউই’ আর ফেলুদার বড় গল্প ‘শকুন্তলার কণ্ঠহার’। সেটাকে অবশ্য সেমি-উপন্যাসও বলা যায়। মজার ব্যাপার হলো, এ বইয়ের বেশির ভাগ গল্পে কাকতালীয়ভাবে মূল চরিত্র বা পার্শ্বচরিত্র হিসেবে ফিরে ফিরে এসেছে আর্ট আর আর্টিস্টরা।
গল্পগুলোকে নিয়ে তোমাদের একটুখানি বলি।
গল্পগুলো নিয়ে বলছি বটে, কিন্তু আধখানা বলব। গল্পের মূল রহস্যটা আসলে কী, ইংরেজিতে যাকে বলে স্পয়লার, সেটা কিন্তু বলব না! শেষমেশ কী ঘটে সেটা জানতে তোমাকে পুরো গল্পটা পড়তেই হবে।
বইয়ের প্রথম গল্প ‘মহিম সান্যালের ঘটনা’। তারিণীখুড়োর বয়ানে এ গল্পটা শুনতে পাই আমরা। সত্যজিতের খুব জনপ্রিয় চরিত্র এই তারিণীখুড়ো। ইনি কিন্তু বেশ অদ্ভুত লোক। সারা জীবন দেশবিদেশ ঘুরে বেড়িয়েছেন, হাজার রকমের কাজ করেছেন আর ঝুলিভর্তি বিচিত্র রকমের অভিজ্ঞতা নিয়ে চুল-দাড়ি পাকিয়ে অবশেষে কলকাতায় ফিরে এসেছেন। প্রায়ই শোভাবাজারের বেনেটোলা থেকে বালিগঞ্জ আসেন, আর তাঁর ছোট্ট ছানাপোনাদের গল্প শুনিয়ে যান। এ গল্পের শুরুটাও সেভাবেই।
মহিম সান্যাল রিটায়ার্ড ম্যাজিশিয়ান। সারা ভারত ঘুরে ঘুরে জাদু দেখাতেন এককালে। যেসব অঞ্চলে যেতেন, সব জায়গার নিজস্ব ম্যাজিক শিখে আসতেন, নিয়েও আসতেন সঙ্গে করে। তাঁর শখ, এই হাজার রকমের ম্যাজিকের বিশাল সংগ্রহকে ছেপে বই বের করবেন। তাই হাতে লেখা বিশাল পাণ্ডুলিপি টাইপ করার জন্য সেক্রেটারি হিসেবে নিয়োগ দিলেন তারিণীখুড়োকে। সান্যাল আবার যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা বিদেশি জাদু এক্কেবারে দুচোখে দেখতে পারেন না।
হঠাৎ একদিন তাঁর কাছে এসে হাজির হন তরুণ এক জাদুশিল্পী। অনুরোধ করেন তাঁর ম্যাজিক শোতে একবার যেতেই হবে মহিম সান্যালকে। তারপরে কী হলো? জানতে তোমাকে গল্পটাই পড়তে হবে।
পরের গল্পের নাম ‘গণৎকার তারিণীখুড়ো’। এ গল্পটা আমার নিজের খুব পছন্দের।
তারিণীখুড়োর তো এক পেশায় মোটেও বেশি দিন মন বসে না। অনেক ঘাটের জল খেয়ে তখন তিনি থিতু হয়েছেন বম্বেতে। হাত দেখেন। জ্যোতিষী হিসেবে বেশ নামডাকও হয়েছে। একদিন একজন তাঁর মৃত বাবার হাতের ছাপ দেওয়া কাগজ নিয়ে এসে জানতে চাইলেন, তাঁর বাবা আসলেই খুন হয়েছিলেন কি না। গল্প সেখান থেকে মোড় নেয় অন্যদিকে।
এর পরের গল্প ‘শিল্পী’। অবিনাশ পুরোনো ঘরানায় ছবি আঁকে। পোর্ট্রেট আঁকে। মডার্ন আর্টের ধ্বজাধারী সমালোচকদের সে আর্ট পছন্দ হয় না। খবরের কাগজে আনন্দ বর্ধন ছদ্মনামের এক সমালোচক তার এক্সিবিশনের ছবি দেখে চোখা-চোখা সব মন্তব্য ছোড়ে। মনঃক্ষুণ্ন অবিনাশ তারপর লেগে পড়ে মডার্ন আর্ট বুঝতে। আঁকতে আঁকতে আধুনিক ছবি আর পুরোনো ঘরানার ছবি দুটোতেই যখন সে সিদ্ধহস্ত, জীবন একদিন একবিন্দুতে এনে দেয় এই দুটো মুখোমুখি লোককে।
পরের গল্প ‘অভিরাম’। শঙ্করবাবু ভূতে খুব ভয় পান। তাই দিনে-রাতে থাকবে, এমন এক চাকর রেখেছেন। চাকর অভিরাম দিনে কাজটাজ করে, আর রাতে ভূতের ভয় কাটাতে সঙ্গ দেয়। একদিন বাড়ি থেকে তার ডাক এল, অবশ্যই বাড়ি যেতেই হবে। তারপর শঙ্করবাবু ভূতের খপ্পরে পড়লেন কি না, তা নিয়ে এই গল্প।
এরপর ‘ব্রজবুড়ো’। এ গল্পের নায়ক ব্রজকিশোর ব্যানার্জি নিজের দোতলা বাড়ির বারান্দায় বসে থাকেন আর হাতছানি দিয়ে বাচ্চাকাচ্চাদের ডেকে বেড়ান। তিনি নাকি মন্ত্রতন্ত্রও জানেন। মাঝরাতে তাঁর বাড়ি থেকে শোনা যায় পিস্তলের আওয়াজ।
এরপর ‘মৃগাঙ্কবাবুর ঘটনা’। এটা একটা ভারি বিদঘুটে গল্প। মৃগাঙ্কবাবু হঠাৎ একদিন অফিসে গিয়ে প্রথমবার জানতে পারেন মানুষ বাঁদর থেকে এসেছে। এই নতুন তথ্য জেনে তাঁর জীবন ঝট করে পাল্টে যায়।
এরপর ‘গল্পবলিয়ে তারিণীখুড়ো’। তারিণীখুড়ো তখন পত্রিকার এডিটরের চাকরি ছেড়ে গুজরাটি এক ব্যবসাদারের কাছে চাকরি নিয়েছেন। কাজটা খুব সোজা, ওই ব্যবসাদারের যখনই গল্প শুনতে ইচ্ছা করবে, তখনই তারিণীখুড়োকে বসে পড়তে হবে গল্প শোনাতে। যে-সে গল্প নয়, কখনো বলা হয়নি, কখনো শোনা হয়নি, কখনো কোথাও ছাপা হয়নি, এমন খাঁটি মৌলিক গল্প। কিন্তু গল্পে যদি বিদঘুটে কোনো মোড় না থাকে তাহলে গল্পটা তারিণীখুড়োর গল্প হয় কী করে?
এরপর ‘প্রতিকৃতি’। এ গল্পটাও আর্ট আর আর্টিস্ট নিয়েই। ইনি আবার পোর্ট্রেট, আধুনিক ছবি—দুটোতেই বেশ পটু। একটা পোর্ট্রেট আঁকতে গিয়ে যিনি আঁকছেন আর যাঁর ছবি আঁকা হচ্ছে, দুজনের জীবনেই বিশাল ওলটপালট ঘটে যায়।
এরপর একটা নাটক। ‘হাউই’। ‘হাউই’ শিশু-কিশোরদের একটা পত্রিকা। চার হাজার কপি স্টলে বিক্রি, তেরো হাজার সাবস্ক্রিপশন—সব মিলিয়ে রমরম করে চলছে জনপ্রিয় এই পত্রিকা। সব লেখকই এ পত্রিকায় লেখা ছাপানোর জন্য কমবেশি ব্যাকুল। তিনকড়ি ধাড়ারও খুব ইচ্ছা তার উপন্যাস এ পত্রিকায় ছাপা হবে। কিন্তু তার এই পুরোনো দিনের নামের জন্য সম্পাদক তার লেখা খুলেও দেখেন না। অন্যদিকে নবারুণ চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস নিয়ে পত্রিকা অফিসে ব্যাপক মাতামাতি। নবারুণ আর তিনকড়ির মধ্যকার ধাঁধা নিয়ে এই ছোট্ট নাটিকা।
এর পরের ‘পুরস্কার’ ও ‘বর্ণান্ধ’ গল্প দুটি সত্যজিতের মূল ইংরেজি কাহিনি ‘Abstraction’ আর ‘Shades of Grey’-এর অনুবাদ। মূল গল্প দুটি প্রকাশিত হয়েছিল ‘সন্দেশ’ বের হওয়ার অনেক আগে, ১৯৪১ সালে, অমৃতবাজার পত্রিকার ‘রবিবাসরীয়’তে। পরে বিজয়া রায়ের সহযোগিতায় ১৪০২ বঙ্গাব্দে বাংলায় ছাপা হয় গল্প দুটি। এ দুই গল্পকে অনেকখানি বড়দের গল্পই বলা চলে।
সাইলেন্ট ছবির একদা ডাকসাইটে অভিনেত্রী ছিলেন শকুন্তলা। চমৎকার পারফরম্যান্সের জন্য উপহার পেয়েছিলেন একটা মহামূল্যবান নেকলেস। সেই হারানো নেকলেস আর ফেলুদার মগজাস্ত্রের ঝিলিক নিয়ে লক্ষ্ণৌতে ফেলুদা, জটায়ু আর তোপসের জমজমাটি অভিযান, ‘শকুন্তলার কণ্ঠহার’।
এই গল্পগুলোর মধ্যে কোনোটা একটু রহস্য-রহস্য গন্ধের গল্প, কোনোটা অদ্ভুতুড়ে ননসেন্স জনরার গল্প, কোনোটা একেবারেই ছোটদের জন্য ছোটদের গল্প, আর দুটো একটুখানি বড়সড়দের গল্প। ফেলুদা তো আছেনই, সঙ্গে তিন-তিনটি গল্পে হাজির রয়েছেন সত্যজিৎ রায়ের অন্যতম জনপ্রিয় চরিত্র তারিণীখুড়ো।
কী বিচিত্র রকমের ভিন্ন ভিন্ন ঘরানার গল্পের সম্ভার তাঁর এই বারো সিরিজের বইগুলো—নিশ্চয়ই বুঝতে পারছ? বারো সিরিজের আটটা বইয়ের মোট ৯৬টা গল্পের সঙ্গে আরও পাঁচটা গল্প নিয়ে পরে প্রকাশিত হয়েছে সত্যজিতের সব গল্পের সংকলন, ‘গল্প ১০১’। চাইলে তোমরা পড়ে নিতে পারো এখান থেকেও।
এবার আমি তাহলে এই বারোটারোর বকবকানি থামাই। আর আসল বারোর খবর তো তোমরা জানোই। এই অক্টোবরে কিশোর আলো পূর্ণ করেছে বারোতম বছর। কিআকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা। কিআর সব পাঠককে ভালোবাসা। ভালো থেকো!