তাপমাত্রা ৩৮, কিন্তু মনে হয় ৪২ ডিগ্রি! এর কারণ কী?

তীব্র গরমে প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়ে বেশি তাপ অনুভূত হয়। মডেল: সারাকাখালেদ সরকার

একটু পরপর আবহাওয়া বার্তা দেখা এখন অনেকের অভ্যাস। কারণ, বাইরে প্রচণ্ড গরম। আজকের দিন বা এই সপ্তাহে কতটা গরম পড়বে, আজকে বৃষ্টি হবে কিনা, কেমন যাবে আগামী দিন—বারবার দেখতেই হচ্ছে। এই তথ্য মোবাইলের অ্যাপ থেকে হোক বা নোটিফিকেশনে থাকুক, গরমের খোঁজ নেওয়ার সময় তুমি কি খেয়াল করেছ আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এখন অনেক কিছুই দেখায়? এর মধ্যে রয়েছে সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বাতাসের গতিসহ আরও বেশকিছু অনেক পূর্বাভাস। তাপমাত্রা কত ডিগ্রি, তা তো দেখা যায়ই; সঙ্গে দেখায় ‘ফিলস লাইক’ বা কত তাপমাত্রা অনুভব করবে, তার মান।

শুনতে সহজ মনে হলেও নির্দিষ্ট সময় তাপানুভূতি কত হবে, তা নির্ধারণ করতে কয়েকটি কারণ বিবেচনা করতে হয়। বছরের বিভিন্ন সময়ের ওপরও এটি নির্ভর করে। আমাদের শরীর কতটা গরম বা কতটা ঠান্ডা অনুভব করবে, তা মূলত নির্ভর করে বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা, বাতাসের গতি ও রোদ কতটা তীব্র—তার ওপর। এই তথ্যগুলো সব সময় পরিবর্তনশীল। এগুলোর ওপর নির্ভর করে বাতাসের তাপমাত্রা ওঠানামা করে।

গ্রীষ্মকালে ‘ফিলস লাইক’ তাপমাত্রাকে হিট ইনডেক্স বা তাপ সূচক বলে। তাপ সূচক হলো, বায়ুর তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতা বা জলীয় বাষ্পের মিশ্রণ বিবেচনা করে আমাদের দেহে আবহাওয়া কতটা গরম অনুভব করাবে তার পরিমাপ। এর মানে, গ্রীষ্মের এমন দিনে বাতাসে আর্দ্রতা বেশি থাকলে তাপ সূচক প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়ে বেশি হবে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের মতে, তাপমাত্রা ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস হলে ৪০ শতাংশ আর্দ্রতায় অনুভব হতে পারে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

হিট ইনডেক্স ব্যবহার করে অনুভব করা তাপমাত্রা বের করা যায়
এসসিআরআই বিডি

ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস সহজে তাপ সূচক নির্ধারণ করার জন্য তালিকা ও ক্যালকুলেটর তৈরি করেছে। তাপমাত্রা ও আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ক্যালকুলেটরে নির্ধারিত ঘরে বসিয়ে দিলে তাপ সূচক কত অনুভব হবে, তা বের করতে পারো। উপরে তালিকা ও এখানে ক্যালকুলেটর পাওয়া যাবে।

এই তাপ সূচকের মান ছায়াযুক্ত ও হালকা বাতাস আছে এমন জায়গার জন্য তৈরি করা। কিন্তু সাধারণ বা তীব্র রোদে গেলে, তাপ সূচকের মান অনেক বেড়ে যায়। এমনকি কখনো কখনো প্রকৃত তাপমাত্রার চেয়ে ১৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত বেশি অনুভব হতে পারে।

আরও পড়ুন

তাপ সূচক তালিকার লাল অংশ চরম বিপদের আভাস দেয়। এর অর্থ এমন তাপমাত্রায় বাইরে বের না হওয়াই ভালো। খুব সাবধানে থাকা প্রয়োজন। কারণ হিটস্ট্রোকের খুব বেশি ঝুঁকি আছে। কমলা রঙের তাপমাত্রায় পেশিতে খিঁচুনি হতে পারে। আবার খুব বেশি সময় বাইরে থাকলে তাপে ক্লান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। শারীরিক পরিশ্রম—যেমন দৌড়ানো বা মোটরসাইকেল চালালেও হিটস্ট্রোকের আশঙ্কা থাকে। তাই এ সময় সাবধানে চলাফেরা করতে হবে, পান করতে হবে প্রচুর তরল। হিটস্ট্রোক থেকে বাঁচার নিয়মগুলো মেনে চলতে হবে।

তাপানুভূতির এ ঘটনা কিন্তু শীতকালেও দেখা যায়। বাতাসের তাপমাত্রা যত থাকে, শরীরে অনুভূত হয় তার চেয়ে বেশি শীত। তবে এই আলাপ না হয় শীতের দিনেই করা যাবে।

আরও পড়ুন