৭১ বছরের মধ্যে প্রথমবার দেখা যাবে ডেভিল কমেট

এক বিশাল এবং বিরল ধূমকেতু ১২পি/পন্স-ব্রুকস। প্রায় ৭১ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো পৃথিবীর পাশ ঘেঁষে যাবে এই ধূমকেতু। ২০২৪ সালের ৮ এপ্রিল বিরল এক সূর্যগ্রহণের সাক্ষী হতে চলেছে বিশ্ব। এটিই ২০২৪ সালের প্রথম সূর্যগ্রহণ, যা হবে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ। এই পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণের সময় দৃশ্যমান হতে পারে ১২পি/পন্স-ব্রুকস ধূমকেতুটি। যখন এই দুই ঘটনা একসঙ্গে ঘটবে, তখন এটি একটি অভূতপূর্ব দৃশ্য তৈরি করবে। সম্প্রতি এমনই তথ্য প্রকাশ করেছে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা।

পন্স-ব্রুকস ধূমকেতুটি মহাজাগতিক ধূলিকণা, জমে থাকা গ্যাস, শিলা, পাথর ও বরফের মিশ্রণে তৈরি হয়েছে। পৃথিবীর সর্বোচ্চ পর্বত মাউন্ট এভারেস্টের চেয়ে বড় এই ধূমকেতু। এর আকৃতি কিছুটা ‘ক্রায়োভোলক্যানিক’। যার অর্থ দাঁড়ায়, ঠান্ডা আগ্নেয়গিরি। ধূমকেতুটি প্রায় ২৯ কিলোমিটার বা ১৮ দশমিক শূন্য ২ মাইল প্রশস্ত। এতে প্রচুর পরিমাণে গ্যাস ও বরফ রয়েছে। বরফ ও গ্যাসের জন্যই একে কিছুটা সবুজ দেখায়। এটি সূর্যের কাছাকাছি আসায় সূর্যের উত্তাপে একটি লেজ তৈরি করে। ধূমকেতুটি দেখতে কিছুটা শিংয়ের মতো। এ জন্য অনেক জ্যোতির্বিজ্ঞানী নাম দিয়েছেন ‘শিংওয়ালা ধূমকেতু’ কিংবা ‘ডেভিল কমেট’।

আরও পড়ুন

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, ‘ডেভিল কমেট’ দেখার সুযোগ জীবনে একবার বা দুইবার আসবে অনেকের। কারণ, এই বিশাল ধূমকেতু প্রতি ৭১ বছর পর পৃথিবীর পাশ দিয়ে যায়। ২০২৪ সালের এপ্রিল মাসে ডেভিল কমেট দেখার সুযোগ হাতছাড়া না করা ভালো। কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, মেক্সিকো, পশ্চিম ইউরোপ, উত্তর ইউরোপ, উত্তর এশিয়া, পূর্ব এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা, উত্তর-দক্ষিণ আমেরিকার অঞ্চলগুলোতে দেখা যাবে ধূমকেতুটি। ধূমকেতু দেখার সম্ভাবনা নির্ভর করে এর উজ্জ্বলতার ওপর। ২০২৩ সালের জুলাইয়ে এই ধূমকেতুতে বিস্ফোরণ ঘটেছিল। তখন বিজ্ঞানীরা এর উজ্জ্বল কিছু নিখুঁত ছবি তুলতে সক্ষম হন।

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, ৩০ এবং ৩১ মার্চ যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় সন্ধ্যায় ধূমকেতুটি মেষ রাশির কাছাকাছি গেলে দুরবিন বা টেলিস্কোপ ব্যবহার না করেই খালি চোখে দেখা যাবে। তবে স্পষ্ট দৃশ্যের জন্য টেলিস্কোপ ব্যবহার করার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকেরা। ২১ এপ্রিল ধূমকেতুটি এর সর্বোচ্চ উজ্জ্বলতায় পৌঁছাবে। আর ২ জুনের পর এটিকে আর পৃথিবী থেকে দেখা যাবে না।

১২পি/পন্স-ব্রুকস ধূমকেতুটির নামকরণ করা হয়েছে দুটি বিখ্যাত ধূমকেতু অনুসন্ধানীর নামানুসারে। জিন-লুই পন্স, যিনি একজন ফরাসি জ্যোতির্বিজ্ঞানী। ১৮১২ সালে তিনি ধূমকেতুটি আবিষ্কার করেছিলেন। আর একজন ব্রিটিশ-আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী উইলিয়াম রবার্ট ব্রুকস। যিনি ১৮৮৩ সালে ধূমকেতুটির কক্ষপথ পর্যবেক্ষণ করেছিলেন।

আরও পড়ুন

জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা হ্যালির ধূমকেতুর সঙ্গে তুলনা করে জানিয়েছেন, ১২পি/পন্স-ব্রুকস হলো একটি স্বল্পকালের ধূমকেতু। হ্যালির ধূমকেতুর সূর্যের চারপাশে কক্ষপথ সম্পন্ন করতে ৭৬ বছর সময় লাগে। ধূমকেতুটি শেষবার ১৯৫৪ সালে দেখা গিয়েছিল। ৭১ বছর পর ২০২৪ সালে দেখা যাচ্ছে। আবার দেখা যাবে ২০৯৫ সালে। আর ১৯৮৬ সালে হ্যালির ধূমকেতু শেষবারের মতো দেখা যায়। আবার ৭৫ বছর পর খালি চোখে ২০৬১ সালে দেখা যাবে হ্যালির ধূমকেতু।