দেশ স্বৈরাচারমুক্ত হওয়ার পর থেকেই সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে দেশের জন্য কিছু করার চেষ্টা করছে। কেউ রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের কাজ করছে, কেউ রাস্তা পরিষ্কার করছে, কেউ আবার ডাকাত দমন করছে। নিজের মতো করে দেশের সেবা করছে সবাই।
আমরাও ভাবছিলাম কীভাবে দেশের জন্য কিছু করতে পারি। এই কাজগুলো খুবই ভালো, কিন্তু এগুলো সব সময় করা সম্ভব নয়। আর এগুলো দীর্ঘস্থায়ী সমাধানও নয়। তাই আমরা ভেবেছি আরও সহজ, কার্যকর এবং দীর্ঘস্থায়ী কিছু করার উপায় আছে কি না।
আন্দোলনের সময় রাস্তার ডিভাইডার ও পাশের প্রচুর গাছপালা ভাঙা হয়। এতে যে ক্ষতি হয়েছে, তা পূরণের একমাত্র উপায় আবার গাছ লাগানো। তখন আমার বন্ধু শুভর মাথায় এল গাছ লাগানোর কথা। একটি গাছ যত দিন বাঁচে তত দিন পরিবেশ ও সবার উপকারে আসবে। তার এই চিন্তা আমাকে ও আর আমার বন্ধু বৈদূর্য্যকে জানায় শুভ। শুভর আইডিয়াটা ভালোই লাগল আমাদের। তখন আমরা গেলাম আমাদের মনিপুর উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের রসায়ন শিক্ষক বেলাল হোসেন স্যারের সঙ্গে আলোচনা করতে। এই থেকে শুরু হলো আমাদের গাছ লাগানো কর্মসূচি।
আলহামদুলিল্লাহ, আমরা মিরপুর-২ কিডনি ফাউন্ডেশনের সামনের ডিভাইডারে, ১০ নম্বর সুলতান ডাইনের বিপরীতে এবং কাজিয়াপাড়া বাসস্ট্যান্ডের সামনের ডিভাইডারে মোট ৭৫টি গাছ লাগিয়েছি।
আমি, শুভ, আর বৈদূর্য্য—তিনজন মিলে এই উদ্যোগের প্রধান হিসেবে কাজ করেছি। কোন গাছ লাগাব, কতগুলো গাছ লাগাব, ফান্ড আর অন্যান্য বিষয় নিয়ে অনেক চিন্তা করেছি। শুরুতে ভাবিনি এত জটিল হবে, তবু কোনোভাবে ম্যানেজ করছি।
আমাদের আরও সাত-আটজন বন্ধু বিভিন্ন বিষয়ে সাহায্য করেছে। আমরা সবাই ছিলাম মনিপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র। আশরাফুল গাছ সংগ্রহ করেছে। ফান্ড জোগাড় করেছে ফারাবী। শাকিল অনেক কাজে সঙ্গে ছিল। আরও অনেক বন্ধুরা বিভিন্ন কাজে সাহায্য করেছে। আর স্যারদের কথা তো বলা বাহুল্য! এখন পর্যন্ত তারা ফান্ড না দিলে এগুলো সম্ভব হতো না। বিশেষ করে, বেলাল স্যার শুরু থেকে এমন একটা সমর্থন দিয়েছেন, যা বোঝানো যাবে না। তাঁর কারণেই আমরা এত দূর আসতে পেরেছি।
এ ছাড়া আরও বিভিন্ন স্যার টাকা দিয়েছেন। এই নিয়ে আমরা দুই ধাপে গাছ লাগিয়েছি। প্রথম ধাপে লাগিয়েছি ১৫টি গাছ। এটা পরীক্ষামূলক ছিল। কারণ, আমরা আগে কখনো রাস্তায় গাছ লাগাইনি। তাই অভিজ্ঞতা নেওয়ার জন্য কম গাছ দিয়ে শুরু করেছিলাম। অনেক কিছু শিখতে পেরেছি ওই দিন। যেমন গাছ লাগানোর জন্য সঠিক সরঞ্জামের প্রয়োজন হয়, গাছগুলো কত দূরে দূরে লাগানো উচিত ইত্যাদি।
মাটি খুঁড়ে গোবর মেশানো, গাছকে বাঁশ দিয়ে বাঁধা, এ রকম নানা কাজের অভিজ্ঞতা হয়েছে। তবে ওই দিন খুব ভালো লাগছিল যে পড়াশোনার বাইরেও কিছু কাজের কাজ করছি। বন্ধুদের সঙ্গে কাজ করার মজাই আলাদা। যে জিনিস আমার সবচেয়ে ভালো লাগে, তা হলো ভালো কাজ করার জন্য যত মানুষের কাছে সাহায্য চেয়েছি, কেউ ফিরিয়ে দেয়নি, সবাই সাহায্য করেছে। আমাদের গাছ লাগাতে দেখে অনেক মানুষ প্রশংসা করেছে। অনেকে পানি, খাবারও দিয়েছে।
প্রথম ধাপে আমরা ১০-১২ জন বন্ধু মিলে কাজ করেছি। দ্বিতীয় ধাপে ৩০ জন ভলান্টিয়ারের সহযোগিতায় কাজ করেছি। সঙ্গে আমাদের স্যারেরাও ওই দিন সাহায্য করেছেন। প্রথম ধাপে যে সময় লেগেছিল, দ্বিতীয় ধাপে গাছ বেশি হওয়া সত্ত্বেও সবার সহযোগিতায় কাজটা সহজ এবং দ্রুত সম্পন্ন হয়েছে। এরপর সবাই একসঙ্গে কাচ্চি খেয়ে হাসিমুখে দিন শেষ করেছি।
আমাদের তৃতীয় ধাপ করার ইচ্ছা ছিল, কিন্তু এখন বন্যার কারণে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্য করা বেশি জরুরি। যদি সম্ভব হয় আবার গাছ লাগাব বা আরও ভালো কাজে অংশ নেব, ইনশা আল্লাহ।
লেখক : শিক্ষার্থী, দ্বাদশ শ্রেণি, ঢাকা কলেজ, ঢাকা