তুমি কি ভূমিকম্পের ভয় পাচ্ছ

ভূমিকম্প শব্দটা শুনলে অনেকেরই ভয় লাগে। কিন্তু ভয় পাওয়ার দরকার নেই। সত্য তথ্য জানলে ভয় অনেক কমে যায়।

ড্রপ-কভার-হোল্ড অন পদ্ধতি

১. কেন ভূমিকম্পে ভয় পাওয়ার দরকার নেই

ধরো, আমাদের পরিবার–পরিজন কেউই ভূমিকম্পে মারা যায়নি। বাদশাহ আকবর বা শাহজাহান বা রবার্ট ক্লাইভ বা সিরাজউদ্দৌলা ভূমিকম্পে মারা যাননি।

প্রবাবিলিটি কী বলে?

বাংলাদেশে ভূমিকম্পে মৃত্যুর ঘটনা খুবই বিরল। কিন্তু অন্য কারণে প্রতিবছর অনেক মানুষ মারা যায়, যেমন—

• সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় ২৪ থেকে ২৫ হাজার মানুষ

• সাপের কামড়ে মারা যায় প্রায় ৭ হাজার ৫০০ জন।

• পানিতে ডুবে মারা যাচ্ছে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ। এর মধ্যে ১৪ হাজার শিশু, অর্থাৎ ৭৫ শতাংশের বেশি। সবচেয়ে ঝুঁকিতে থাকে ১ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুরা

• কই মাছ গলায় আটকে মৃত্যুর ঘটনা খুবই বিরল, তবু বাংলাদেশ ও আশপাশের অঞ্চলে এ রকম কয়েকটি সত্য ঘটনা খবরের কাগজে পাওয়া গেছে।

এই পরিসংখ্যানগুলো বলে যে সড়ক দুর্ঘটনা, ডুবে যাওয়া, সাপের কামড়—এসবই আমাদের দেশে মৃত্যুর বড় কারণ। ভূমিকম্পে মৃত্যু হওয়ার আশঙ্কা তুলনামূলকভাবে খুব কম, প্রায় শূন্যের কাছাকাছি।

আরও পড়ুন

২. পুরোনো ভবনগুলো কী প্রমাণ করে

ঢাকার এবং দেশের বহু পুরোনো ভবন শত বছর ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বড় ভূমিকম্পও এগুলোকে ফেলতে পারেনি।

• লালবাগ কেল্লার পরীবিবির মাজার প্রায় ৩৫০ বছরের পুরোনো

• আহসান মঞ্জিল ১৮৮৮ সালের ঘূর্ণিঝড়ে ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ১৮৯৭ সালের বড় ভূমিকম্পে শুধু নহবতখানা ভেঙে পড়ে, পুরো প্রাসাদ রয়ে যায়

• কার্জন হল, হাইকোর্ট ভবন, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বঙ্গভবন শত বছরের বেশি সময় ধরে নিরাপদ

• হার্ডিঞ্জ ব্রিজ এক শতাব্দীর বেশি সময় ধরে ব্যবহৃত

• রংপুর জিলা স্কুলের পুরোনো ভবন প্রায় ১৫০ বছরের পুরোনো, এখনো দাঁড়িয়ে আছে

এগুলো দেখায় যে ভূমিকম্প এলেই ভবন ভেঙে পড়বে—এটা সত্য নয়। ভালো নকশা, শক্ত নির্মাণ আর নিয়ম মানলেই ভবন টিকে থাকে।

ভূমিকম্প হলে কী করবে

১. শান্ত থাকবে

২. ঘরে থাকলে শক্ত টেবিল বা বিছানার নিচে আশ্রয় নেবে

৩. দৌড়াবে না

৪. সিঁড়ি বা লিফটে যাবে না

৫. মাথা, ঘাড়, হাত বা বই বা বালিশ দিয়ে ঢেকে রাখবে

৬. জানালা বা কাচ থেকে দূরে থাকবে

৭. ভূমিকম্প শেষ হলে ঘর থেকে বেরিয়ে এমন ফাঁকা মাঠে গিয়ে দাঁড়াবে, যেখানে গাছ, ইলেকট্রিক পোল বা দেয়াল নেই।

আরও পড়ুন

কর্তৃপক্ষের করণীয়

১. নগর–পরিকল্পনা কঠোরভাবে বাস্তবায়ন

২. বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (বিএনবিসি) মানা বাধ্যতামূলক করা

৩. নাজুক ভবন চিহ্নিত করে রেট্রোফিটিং বা মেরামত

৪. স্কুল–অফিসে মহড়া চালু রাখা

বাড়িওয়ালাদের দায়িত্ব

১. লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রকৌশলীর নকশা অনুযায়ী ভবন নির্মাণ

২. সঠিক রড, সিমেন্ট, কংক্রিট ব্যবহার করা

৩. পুরোনো ভবনে ফাটল বা নড়চড় দেখলে পরীক্ষা ও মেরামত করা

ভয় নয়

ভয় নয়। জ্ঞান, প্রস্তুতি আর নিয়ম মেনে চলাই নিরাপত্তা। ভূমিকম্পকে ভয় নয়, বুঝে–শিখে প্রস্তুত থাকলে তবেই আমরা নিরাপদ।

তবে তুমি যদি বেশি আতংকে থাকো, তবে বড়দের পরামর্শ নাও। প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞদের সহযোগিতা নিতে পারো।

আরও পড়ুন