প্রতিদিন ৩ হাজার পা হাঁটলে কমতে পারে ভুলে যাওয়ার রোগ
বয়স বাড়ছে, সঙ্গে বাড়ছে স্মৃতিভ্রম বা ভুলে যাওয়ার রোগ। ভুলে যাওয়া এই রোগকে বলে আলঝেইমার। বয়স বাড়লে অনেকে ভাবেন, এই বুঝি সব ভুলতে শুরু করলাম! অনেকের ধারণা, এই ভয়ংকর রোগ ঠেকাতে বুঝি জটিল চিকিৎসা দরকার হয়!
কিন্তু সম্প্রতি গবেষকেরা জানিয়েছেন, ভুলে যাওয়া রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য প্রতিদিন মাত্র তিন হাজার পা হাঁটতে পারেন। আগেও অনেক গবেষণায় বলা হয়েছে, হাঁটলে মস্তিষ্ক ভালো থাকে। কিন্তু সেই গবেষণাগুলোর বেশির ভাগই ছিল মানুষের মুখের কথার ওপর বিশ্বাস করে। মানে কে কতটা হেঁটেছেন এবং তাঁর কতটা মনে আছে, এর ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু এবার যুক্তরাষ্ট্রের হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা আর মুখের কথায় ভরসা করেননি।
হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষকেরা ৫০ থেকে ৯০ বছর বয়সী ২৯৬ জন সুস্থ মস্তিষ্কের বয়স্ক মানুষকে এক সপ্তাহ ধরে একটি বিশেষ স্টেপ-ট্র্যাকার যন্ত্র পরিয়ে দেন। ফলে কে ঠিক কত পা হাঁটছেন, তার একটা নিখুঁত ও সত্যিকারের হিসাব পাওয়া গেছে।
ভুলে যাওয়া রোগের জন্য মূলত প্রোটিনকে দায়ী করা হয়। বিটা-অ্যামাইলয়েড ও টাউকে ধরা হয় ভিলেন হিসেবে। এসব প্রোটিন মস্তিষ্কে জট পাকিয়ে আমাদের স্নায়ুকোষগুলো মেরে ফেলে। গবেষকেরা গবেষণার শুরুতেই অংশগ্রহণকারীদের মস্তিষ্কের ছবি নিয়ে পরীক্ষা করেন, যাতে তাঁদের মস্তিষ্কে এই ক্ষতিকর প্রোটিনগুলোর মাত্রা কতটুকু, তা জানা যায়।
এরপর ৩ থেকে ১৪ বছর ধরে গবেষকেরা প্রতিবছর তাঁদের স্মৃতিশক্তি পরীক্ষা করতে থাকেন। মানে কাউকে হয়তো ৩ বছর পরীক্ষা করা হয়, আবার কাউকে ১০ বা ১৪ বছর। গবেষকদের এই ফলাফল ছিল চমকে দেওয়ার মতো! তাঁরা দেখলেন, যেসব অংশগ্রহণকারীর মস্তিষ্কে আগে থেকেই ক্ষতিকর বিটা-অ্যামাইলয়েড জমার ঝুঁকি বেশি ছিল, তাঁরা যদি প্রতিদিন মাত্র ৩ থেকে ৫ হাজার পা হাঁটেন, তাঁদের মস্তিষ্কে এই টাউ প্রোটিন জমার গতি অবিশ্বাস্যভাবে কমে গেছে! যদিও হাঁটাচলা বিটা-অ্যামাইলয়েড জমার ওপর তেমন কোনো প্রভাব ফেলেনি।
ভাবতে পারেন, এই আবিষ্কার কেন গুরুত্বপূর্ণ? কারণ, লন্ডনের কুইন মেরি ইউনিভার্সিটির চার্লস মার্শাল বলছেন, আলঝেইমারের উপসর্গ তৈরির জন্য অ্যামাইলয়েড-বেটার চেয়ে এই টাউ প্রোটিনই বেশি দায়ী। আর হাঁটাচলা ঠিক সেই টাউ প্রোটিনের ছড়িয়ে পড়াকেই ধীর করে দিচ্ছে!
শুধু তা–ই নয়, এই হাঁটার অভ্যাসটি তাঁদের স্মৃতিশক্তি হ্রাসের গতিকেও প্রায় ৪০ শতাংশ কমিয়ে দিয়েছে। তবে যাঁরা ৩ হাজারে পরিবর্তে প্রতিদিন ৫ হাজার থেকে সাড়ে ৭ হাজার পা হেঁটেছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে এই গতি কমেছে আরও বেশি, প্রায় ৫৪ শতাংশ! তবে মজার ব্যাপার হলো, দৈনিক সাড়ে ৭ হাজারের বেশি হাঁটলে বাড়তি তেমন কোনো সুবিধা পাওয়া যায় না। অর্থাৎ একটা নির্দিষ্ট সীমার পর এই উপকারিতা আর বাড়ে না।
কিন্তু এই সামান্য হাঁটাচলা কীভাবে মস্তিষ্কের ভেতরে এত বড় ভালো কাজ করে ফেলল? গবেষকেরা এর সঠিক কারণ অনুসন্ধান করেননি। তবে তাঁদের ধারণা, এই ক্ষতিকর প্রোটিনগুলো মস্তিষ্কে যে প্রদাহ তৈরি করে, শারীরিক পরিশ্রম হয়তো সেই প্রদাহ কমায়। অথবা এটি মস্তিষ্কে রক্তসঞ্চালন বাড়িয়ে কোষগুলোকে সুরক্ষা দিতে পারে।
তবে বিজ্ঞানীরা খুব সততার সঙ্গে একটি সতর্কবার্তাও দিয়েছেন। এই গবেষণা প্রমাণ করে না যে পাঁচ হাজার পা হাঁটলেই আপনার ভুলে যাওয়ার রোগ হবে না। এমনও হতে পারে যে যাঁদের মস্তিষ্কে এরই মধ্যে সমস্যা শুরু হয়েছে, তাঁদের ব্যায়াম করার ক্ষমতা বা ইচ্ছাশক্তিই হয়তো কমে গেছে। তাই তাঁরা কম হাঁটছেন এবং তাঁদের রোগও দ্রুত বাড়ছে। তা ছাড়া শুধু হাঁটলেই হয়তো পুরোপুরি ভুলে যাওয়া রোগ কমবে না, কিন্তু উপকারিতা পাবেন। পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়ামের হাজারো উপকারিতা আছে। এটি এমন একটি অভ্যাস, যা শুরু করতে কোনো খরচ হয় না এবং এর কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও নেই। তাই নিয়মিত হাঁটুন ও সুস্থ থাকুন।
সূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট