খরগোশের মাথায় শিং কেন, কী বলছেন বিজ্ঞানীরা
খরগোশ বললেই চোখের সামনে ভেসে ওঠে নরম পশমের একটি নিরীহ প্রাণীর ছবি। যার লম্বা কান আর দ্রুত ছোটাছুটি করার স্বভাব আছে। কিন্তু কল্পনা করো তো, যদি সেই খরগোশের মাথায় গজিয়ে ওঠে শিং, কেমন দেখাবে? আমেরিকার কলোরাডো রাজ্যের পাহাড়ি অঞ্চলে এমন শিংওয়ালা খরগোশের দেখা মিলছে। কিন্তু কেন এই প্রাণীগুলোর মাথায় হঠাৎ এমন অদ্ভুত শিং দেখা যাচ্ছে?
শিংওয়ালা খরগোশের এই অস্বাভাবিক চেহারার কারণে ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোয় অনেকে এদেরকে ‘ফ্রাঙ্কেনস্টাইন খরগোশ’, ‘দানব খরগোশ’ কিংবা ‘জম্বি খরগোশ’–এর মতো নাম দিয়েছেন।
বিজ্ঞানীরা বলছেন, শিংয়ের মতো এই অদ্ভুত বৃদ্ধি আসলে একধরনের সাধারণ ভাইরাসের সংক্রমণ। এটি মূলত শোপ প্যাপিলোমাভাইরাস (Shope papillomavirus) নামে পরিচিত ভাইরাস, যা খরগোশকে আক্রান্ত করে। এই ভাইরাসের সংক্রমণের ফলে খরগোশের মুখ ও মাথায় শিংয়ের মতো টিউমার বা আঁচিল গজায়। এতে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। তবে অনেক সময় এই বৃদ্ধি এতটাই বড় হয়ে যায় যে খরগোশের পক্ষে খাবার খাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে। শেষ পর্যন্ত এদের মৃত্যুর কারণ হতে পারে।
মজার ব্যাপার হলো, এই খরগোশগুলো কিন্তু নতুন নয়। প্রায় ১০০ বছর আগে থেকেই এ ভাইরাসটি সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা জানেন। শত শত বছর আগে এই শিং দেখে উত্তর আমেরিকার মানুষ নানা গল্প ও লোককথা তৈরি করেছিলেন। বিখ্যাত পৌরাণিক প্রাণী ‘জ্যাকালোপ’ (Jackalope)–এর গল্পের পেছনে হয়তো এই শিংওয়ালা খরগোশই ছিল।
আশ্চর্যের বিষয় হলো, এই খরগোশের রোগটি মানুষের কাজেও লেগেছে। এ ভাইরাসটি গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা জানতে পেরেছিলেন, ভাইরাস কীভাবে ক্যানসারের জন্ম দিতে পারে। মানুষের যেমন এইচপিভি (HPV) ভাইরাস জরায়ুর ক্যানসারের কারণ হয়, এই খরগোশের ভাইরাস থেকে পাওয়া জ্ঞান একইভাবে গবেষণায় সাহায্য করেছে।
ভাইরাল হওয়া ছবিগুলোয় যে খরগোশগুলো দেখা যাচ্ছে, এদের মধ্যে থাকা ভাইরাসটির নামকরণ করা হয়েছে নিউইয়র্ক সিটির রকফেলার ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. রিচার্ড ই শোপের নামে। ১৯৩০–এর দশকে তিনিই প্রথম এই রোগ আবিষ্কার করেছিলেন।
ডেনভার থেকে প্রায় ১০৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডোর ফোর্ট কলিন্সে সম্প্রতি এমন খরগোশ দেখা যাওয়ার পর থেকেই এটি মানুষের মনোযোগ আকর্ষণ করতে শুরু করে। সেখানকার বাসিন্দারা এই খরগোশগুলোর ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছেন। যার ফলে খবরটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়েছে।
কলোরাডো পার্কস অ্যান্ড ওয়াইল্ডলাইফের মুখপাত্র কারা ভ্যান হুস এ বিষয়ে বলেন, ‘তাঁদের সংস্থা এই খরগোশগুলো সম্পর্কে অনেক ফোন পাচ্ছে। তবে সংক্রামিত খরগোশ দেখা অস্বাভাবিক কিছু নয়। বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে যখন মাছি সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। কারণ, এই পোকাগুলোই ভাইরাস ছড়ায়।’ তিনি আরও বলেন, ‘এই ভাইরাস খরগোশ থেকে খরগোশে ছড়াতে পারলেও মানুষ বা পোষা প্রাণীসহ অন্য কোনো প্রজাতির মধ্যে ছড়াতে পারে না।’
ভাইরাসের কারণে যে বৃদ্ধিগুলো হয়, সেগুলো প্রাথমিকভাবে আঁচিলের মতো হলেও লম্বা হলে দেখতে শিংয়ের মতো লাগে। তবে এই বৃদ্ধিগুলো খরগোশের কোনো ক্ষতি করে না, যদি না তা এদের চোখ বা মুখের ওপর হয় এবং খাওয়ার ক্ষেত্রে বাধা না দেয়। কারা ভ্যান হুস বলেন, ‘খরগোশের রোগ প্রতিরোধক্ষমতা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সক্ষম। একবার তা করতে পারলে শিংগুলো নিজে থেকেই পড়ে যাবে।’
সূত্র: সিএনএন, এবিসি নিউজ, নিউইয়র্ক পোস্ট