কীভাবে উসাইন বোল্টের কাছাকাছি গতিতে দৌড়ানো যায়

অলিম্পিকে দৌড়াচ্ছেন উসাইন বোল্টনিউইয়র্ক টাইমস

উসাইন বোল্টের নাম শুনেছ? পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগতির মানুষ। উসাইন বোল্ট যখন ১০০ মিটার রেসে দৌড়ান, তখন তাঁর গতি থাকে ঘণ্টায় প্রায় ৩৭ কিলোমিটার! গ্রামের রাস্তায় একটি গাড়ি সাধারণত এই গতিতে চলে। গাড়িতে বসে থাকলে হয়তো এই গতিকে খুব বেশি মনে হবে না। কিন্তু একজন মানুষের জন্য এটা অবিশ্বাস্য! পৃথিবীর খুব কম মানুষই এই গতিতে দৌড়াতে পারে। এক বা দুজন হবে।

কিন্তু কেন এমন হয়? কিছু মানুষ কীভাবে এত দ্রুত দৌড়াতে পারে? সবাই কেন পারে না? এর পেছনে কিছু কারণ আছে। কিছু জিনিস আমরা জন্মগতভাবে বাবা ও মায়ের জিন থেকে পাই। আবার কিছু জিনিস আমরা নিজেরাই চেষ্টা করে অর্জন করি। তুমি চেষ্টা করলেও তোমার দৌড়ের গতি বাড়াতে পারো! কীভাবে বাড়াবে? চলো, তা বোঝার চেষ্টা করি।

আমাদের শরীরে ৬০০টির বেশি মাংসপেশি আছে। এগুলো আমাদের দৌড়াতে, লাফাতে এবং নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। এই পেশিগুলো তৈরি হয় দুই ধরনের তন্তু বা ফাইবার দিয়ে। একটা হলো ‘ফাস্ট টুইচ’ বা দ্রুতগতির ফাইবার, আর অন্যটি ‘স্লো টুইচ’ বা ধীরগতির ফাইবার।

ফাস্ট টুইচ ফাইবারগুলো রেসিং কারের মতো। এরা খুব শক্তিশালী আর দ্রুত চলতে পারে। কিন্তু বেশিক্ষণ দৌড়াতে পারে না, ক্লান্ত হয়ে যায়। যারা স্প্রিন্টার বা অল্প দূরত্বের জন্য প্রতিযোগিতা করে, তাদের এই ফাইবার বেশি থাকে। তাই তারা খুব দ্রুত দৌড়াতে পারে।

আর স্লো টুইচ ফাইবারগুলো অনেকটা মালবাহী ট্রাকের মতো। এরা হয়তো খুব দ্রুত দৌড়াতে পারে না, কিন্তু অনেক বেশি সময় দৌড়াতে পারে। তারা সহজে ক্লান্ত হয় না। যারা ম্যারাথন দৌড়ায়, তাদের এই ফাইবার বেশি থাকে।

আরও পড়ুন

কিন্তু কার শরীরে কোন ধরনের ফাইবার বেশি থাকবে, তা কীভাবে ঠিক হয়? এর বেশির ভাগটাই জন্মগতভাবে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু চাইলে অনুশীলনের মাধ্যমে এই পেশিগুলোকে আরও শক্তিশালী করে তোলা যায়।

তবে আসল কাজটা কিন্তু পেশি করে না। এই দায়িত্ব মস্তিষ্কের! তুমি কীভাবে দৌড়াবে, তোমার পা কোথায় পড়বে, হাত কীভাবে নাড়াবে, কীভাবে শ্বাস নেবে—এই সবকিছুই মস্তিষ্ক ঠিক করে দেয়। তুমি অনুশীলনের মাধ্যমে তোমার শরীরকে সেরা কৌশলটা শিখিয়ে দিতে পারো। যেমন, সোজা হয়ে দৌড়ানো, হাতগুলোকে পায়ের উল্টোদিকে চালানো, পায়ের পাতার ওপর ভর দিয়ে দৌড়ানোর মতো ছোট ছোট কৌশলগুলো তোমাকে আরও দ্রুত হতে সাহায্য করবে।

এবার দৌড়ের বিষয়ে কিছু ভুল ধারণা ভেঙে দিই। কারণ, ওসব ভুল করলে তুমি দৌড়ে অন্তত সফল হতে পারবে না। যেমন অনেকে বলেন, অনুশীলনের সময় সর্বদা সর্বোচ্চ গতিতেই দৌড়াতে হবে। এটা একদম ভুল! দ্রুত দৌড়ানোর অনুশীলনের জন্য সব সময় শরীরের সব শক্তি দিয়ে দৌড়াতে হবে না। বরং অল্প সময়ের জন্য দ্রুত দৌড়ানোর পর একটু বিশ্রাম নিলে শরীর আবার শক্তি ফিরে পায় এবং পেশিগুলো আরও শক্তিশালী হয়।

আরও পড়ুন
ভালো দৌড়বিদ হতে হলে ছোটবেলা থেকে শুধু দৌড় নিয়েই থাকতে হবে

অনেকে বলেন, দ্রুত দৌড়াতে হলে অনেক ভারী জিনিস তুলতে হবে। এটাও ভুল! ভারী জিনিস তোলার বদলে এমন ব্যায়াম করা উচিত, যা দৌড়ানোর সময় কাজে লাগে। যেমন, প্ল্যাঙ্ক, লাঞ্জেস, দড়িলাফ বা জাম্প স্কোয়াট। এগুলো তোমার শরীরের ওজন ব্যবহার করেই পেশিকে শক্তিশালী করে তোলে।

কারও কারও ধারণা, ভালো দৌড়বিদ হতে হলে ছোটবেলা থেকে শুধু দৌড় নিয়েই থাকতে হবে। কথাটা মোটেই ঠিক নয়। ছোটবেলায় নানা রকম খেলাধুলা করলে শরীর আরও ভালোভাবে তৈরি হয়। যেমন ফুটবল খেললে তোমার দৌড়ানোর ক্ষমতা এবং দম ধরে রাখার ক্ষমতা বাড়বে। এতে তুমি আরও ভালোভাবে দৌড়াতে পারবে।

আরেকটা ভুল ধারণা হলো, প্রশিক্ষণ নেওয়া খুব বিরক্তিকর। এটা সবচেয়ে বড় ভুল ধারণা! প্রশিক্ষণকে তুমি নিজেই মজার বানিয়ে নিতে পারো। বন্ধুদের সঙ্গে দৌড় প্রতিযোগিতা করতে পারো, নানা রকম বাধা ডিঙানোর খেলা (অবস্ট্যাকল কোর্স) খেলতে পারো। দেখবে খেলতে খেলতেই তোমার গতি অনেক বেড়ে গেছে!

তাহলে বুঝতেই পারছ, দ্রুত দৌড়াতে হলে পরিশ্রম অবশ্যই লাগবে। আর জন্মগতভাবে কিছুটা সুবিধা পেলে তো মন্দ হয় না! সবচেয়ে বড় কথা হলো, পুরো ব্যাপারটাকে উপভোগ করো। হতে পারে, তুমিই একদিন উসাইন বোল্টের রেকর্ড ভেঙে দেবে!

সূত্র: দ্য কনভার্সেশন

আরও পড়ুন