সৌরজগতের গ্রহগুলো তৈরি হলো কীভাবে
প্রায় সাড়ে চার শ কোটি বছর আগের কথা। তখন আমাদের সৌরজগতে কোনো গ্রহ বা উপগ্রহ ছিল না। ছিল শুধু গ্যাস আর ধুলার এক বিশাল মেঘ। সেই মেঘ থেকেই প্রথমে জন্ম নিল আমাদের সূর্য! সূর্য তৈরি হওয়ার পর বাকি গ্যাস আর ধুলাবালু মিলে সূর্যের চারপাশে একটা চ্যাপটা চাকতির মতো তৈরি হলো। আর সেই চাকতির ভেতরই শুরু হলো আসল খেলা! ছোট ছোট ধূলিকণা একে অপরের সঙ্গে আটকে যেতে লাগল। অনেকটা বরফ দিয়ে বল বানানোর মতো।
আমাদের দেশ যেহেতু গ্রীষ্মমণ্ডলীয়, তাই এখানে বরফ জমে থাকে না। কিন্তু যেসব দেশে বরফ জমে থাকে, সেখানে শিশুরা খেলার ছলে বরফ দিয়ে বল বানায়। আমাদের সৌরজগতেও এভাবেই কোটি কোটি বছর ধরে ছোট ছোট কণা জুড়ে জুড়ে প্রথমে নুড়ি পাথর, তারপর বড় পাথর এবং শেষে তৈরি হলো আমাদের গ্রহগুলো।
এখন প্রশ্ন হলো, কোন গ্রহ প্রথমে তৈরি হলো? সৌরজগতে সবচেয়ে আগে তৈরি হয়েছে সূর্য। তখন সূর্যের কাছাকাছি জায়গাটা ছিল বেশ গরম। সূর্য থেকে দূরের জায়গাগুলো ছিল ঠান্ডা। তবে মাঝখানে এমন একটা জায়গা ছিল, যেখানে বরফ জমত না। মানে ওই জায়গার পর থেকে বরফ জমা শুরু হতো। বিজ্ঞানীরা এখন এই জায়গাকে বলেন ‘আইস লাইন’ বা বরফের রেখা। এটা ছিল মঙ্গল আর বৃহস্পতি গ্রহের মাঝখানে। তাই এই লাইনের ভেতরের গ্রহগুলো পাথুরে আর বাইরেরগুলো গ্যাসীয় ও বরুফে।
এই বরফ রেখার বাইরের দিকে যেখানে অনেক বরফ, গ্যাস আর ধুলা ছিল, সেখানে তৈরি হলো বড় গ্রহগুলো। মানে বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস আর নেপচুনের কথা বলছি। বরুফে হওয়ার কারণে ওই গ্রহগুলো খুব দ্রুত বড় হয়েছে।
আর বরফ রেখার ভেতরের দিকে, যেখানে শুধু পাথর আর ধাতু ছিল, সেখানে অনেক সময় নিয়ে তৈরি হলো আমাদের পৃথিবী, মঙ্গল, শুক্র আর বুধ।
এবার প্রশ্ন হলো, কোন গ্রহ সবচেয়ে বড়? সূর্য তৈরির মাত্র কয়েক মিলিয়ন বছরের মধ্যেই তৈরি হয়েছিল বৃহস্পতি আর শনি। তাই ওদের তুমি সৌরজগতের ‘বড় ভাই’ বলতে পারো। তারপর প্রায় এক কোটি বছরের মধ্যে জন্মায় ইউরেনাস আর নেপচুন। আর সবার শেষে, প্রায় দশ কোটি বছর পর তৈরি হয়েছে আমাদের পৃথিবী আর এর বাকি সঙ্গীরা।
গ্রহগুলো জন্মানোর পর থেকে কিন্তু নিজেদের জায়গায় চুপচাপ বসে থাকেনি। ওরা এদিক-ওদিক ঘুরতে শুরু করে। বৃহস্পতি হয়ে ওঠে সৌরজগতের রক্ষাকর্তা। বৃহস্পতি নিজ শক্তিতে কিছু গ্রহাণুকে সূর্যের দিকে ঠেলে দিল। আর কিছু গ্রহাণুকে ঠেলে সৌরজগতের বাইরেই বের করে দিল। এসবের মধ্য দিয়ে আমাদের পৃথিবী এসে পড়ল এমন একটি জায়গায়, যেখানে না থাকলে পৃথিবীতে প্রাণ টিকে থাকতে পারত না। এমন জায়গাকে বিজ্ঞানের ভাষায় বলে ‘গোল্ডিলকস জোন’।
গোল্ডিলকস জোন মানে এমন একটি জায়গা, যেখানটা বেশি গরম না আবার জমে বরফও হয়ে যায় না। মানে যেখানে তরল থাকতে পারে। পৃথিবী হলো সৌরজগতের এমন একটি গ্রহ যেখানে সূর্যের তাপের কারণে পানি বাষ্প হয়ে যায় না, আবার সূর্য থেকে বেশি দূরে হওয়ায় পানি বরফও হয় না। যেমন বুধ গ্রহ সূর্যের বেশি কাছে থাকায়, ওখানকার তাপমাত্রা অনেক বেশি। সেখানে কোনো নভোযান গেলেও পুরে ছাই হয়ে যাবে। আবার সৌরজগতের সবচেয়ে দূরের গ্রহ নেপচুন বরফে ঢাকা। ওখানেও জীবন ধারণের সম্ভাবনা একদম কম।
সৌরজগতে পাথুরে গ্রহগুলো রয়েছে সবার আগে। বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গল হলো পাথুরে গ্রহ। এরপর রয়েছে গ্যাসীয় দানব বৃহস্পতি আর শনি গ্রহ। আর সব শেষে রয়েছে বরফে ঢাকা ইউরেনাস ও নেপচুন। আরও দূরে আছে প্লুটো ও সেরেসের মতো বামন গ্রহ।
সূত্র: দ্য কনভার্সেশনের ‘কিউরিয়াস কিডস’ অবলম্বনে