স্টারলিংক ইন্টারনেটে কী সুবিধা
বাংলাদেশেও এখন ব্যবহার করা যাচ্ছে স্টারলিংকের ইন্টারনেট। গত ২০ মে, মঙ্গলবার বাংলাদেশের ব্যবহারকারীদের জন্য দুটি প্যাকেজ চালু করে স্টারলিংক। একটা স্টারলিংক রেসিডেন্স এবং অন্যটা রেসিডেন্স লাইট। রেসিডেন্স প্যাকেজেটি ছোট পরিবারে জন্য। এটা ব্যবহার করতে প্রতিমাসে খরচ হবে ৪ হাজার ২০০ টাকা। আর বড় পরিবারের আনলিমিটেড স্পিড ও ডাটার রেসিডেন্স লাইটের প্যাকেজটির জন্য খরচ হবে মাসে ৬ হাজার টাকা। তবে স্টারলিংকের সেটআপ কিনতে এককালীন খরচ হবে ৪৭ হাজার টাকা। অন্যান্য ইন্টারনেট সেবা থেকে স্টারলিংক কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও বিশ্বব্যাপি এর জনপ্রিয়তা অনেক বেশি। স্টারলিংক এতো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কেন তা জানতে হলে আগে জানতে হবে স্টারলিংক ইন্টারনেট কাজ করে কীভাবে।
প্রত্যন্ত অঞ্চলে কম খরচে ইন্টারনেট সরবরাহের জন্য ইলন মাস্কের মালিকানাধীন স্পেসএক্স পরিচালিত স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবাদাতা প্রকল্প স্টারলিংক। এ প্রকল্পের আওতায় মহাকাশে প্রায় সাড়ে আট হাজার কৃত্রিম উপগ্রহ বা স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। মোট সাড়ে ৪২ হাজার স্যাটেলাইট পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে তাঁদের। পৃথিবীর নিম্ন কক্ষপথে, অর্থাৎ ভূ-পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১১ শ কিলোমিটার ওপর থেকে এগুলো পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে ইন্টারনেট বিশাল এক নেটওয়ার্ক তৈরি করেছে। একটি স্টারলিংক স্যাটেলাইটের আয়ুষ্কাল প্রায় পাঁচ বছর। উপযুক্ত যন্ত্রাংশ কিংবা হাতের স্মার্টফোন ব্যবহার করে এর মাধ্যমে খুব সহজেই ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়।
স্টারলিংকের মাধ্যমে দুর্গম অঞ্চল কিংবা প্রাকৃতিক দুর্যোগময় পরিস্থিতিতে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবা পাওয়া সম্ভব। মূলত এই সুবিধার জন্য এত জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে স্টারলিংক। আরেক দিক থেকেও স্টারলিংক সেরা, সেটা হলো আনলিমিটেড স্পিড ও ডাটা। স্যাটেলাইটনির্ভর এ ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক সাধারণ ব্রডব্যান্ডের মতো তারের ওপর এবং মোবাইল নেটওয়ার্কের মতো ছোট ছোট টাওয়ারের মতো অবকাঠামোর ওপর নির্ভরশীল নয়। এ কারণে এর গতি তুলনামূলক বেশি। ব্রডব্যান্ডের ইন্টারনেটের সার্ভার বা এক্সচেঞ্জ পয়েন্টগুলো বন্ধ করে দিলে ব্যক্তিপর্যায়ে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যায়। তবে স্টারলিংকের ইন্টারনেট চাইলেও কেউ বন্ধ করতে পারবে না।
স্টারলিংক বর্তমানে ১০০টিরও বেশি দেশে ব্যবহার করা হচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকা ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। তবে বাংলাদেশের আগে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভুটানে স্টারলিংকের সেবা চালু হয়। স্টারলিংক ইন্টারনেটে সংযোগ দেওয়াই খুবই সহজ। গ্রাহক অনলাইনে অর্ডার করলেই পেয়ে যাবে স্টারলিংকের বক্স। নির্দেশনা দেখে খুব সহজে সংযোগ করা যাবে বাসাবাড়িতে।
যদিও স্টারলিংকের পরিষেবা ব্যয়বহুল, তবুও গ্রাহকদের জন্য একটি নির্ভরযোগ্য এবং উচ্চমানের দ্রুতগতির ইন্টারনেট সেবার বিকল্প তৈরি করতে পারে। পাশাপাশি, যেসব অঞ্চলে ফাইবার অপটিক কেবল বা অন্যান্য দ্রুতগতির ইন্টারনেট অবকাঠামো এখনও গড়ে ওঠেনি, সেসব এলাকায় স্টারলিংক ইন্টারনেট পরিষেবা প্রদানকারী কোম্পানিগুলোর জন্য ব্যবসার সম্প্রসারণের একটি নতুন সুযোগ উন্মোচন করবে। এছাড়াও, বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা (এনজিও), ফ্রিল্যান্সার এবং নতুন উদ্যোক্তারা স্টারলিংকের মাধ্যমে বছরব্যাপী স্থিতিশীল এবং উচ্চগতির ইন্টারনেটের সুবিধা পাবেন। যা তাদের কর্মদক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করবে।
সূত্র: স্টারলিংক, বিজ্ঞানচিন্তা