বোমা আর ড্রোনের শব্দ ছাড়া গাজাবাসীর প্রথম রাত
দুই বছর পর ফিলিস্তিনের গাজাবাসী এমন এক রাতের অভিজ্ঞতা পেল, যা এত দিন ছিল অধরা। দুই বছর ধরে কল্পনা করা যায়নি এমন রাত পার করেছে তারা। গাজার বিভিন্ন এলাকায় গতকাল রাতে ইসরায়েলি ড্রোন ও বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়নি। নিস্তব্ধ এক রাত পার করেছে গাজাবাসী।
আল জাজিরার প্রতিবেদক হিন্দ খুদারি এই বিরল মুহূর্তটি বর্ণনা করেছেন এভাবে, 'আজ রাতে গাজার ওপর যা উড়ছে, তা শুধুই আশা। কোনো ড্রোন নেই। কোনো বোমা নেই। আকাশ কমলা রঙের হয়ে ওঠেনি। নীরবতা এই অঞ্চলে এমন এক বিরল শব্দ, যা প্রায় অদ্ভুত মনে হয়।' তিনি আরও জানান, গত কয়েক মাসে এমন রাত প্রথম এল, যেখানে কোনো বিমান হামলা হয়নি বা ধ্বংস হয়ে যাওয়া রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স দ্রুত ছুটে যায়নি।
একজন ফিলিস্তিনি নাগরিক আল জাজিরাকে বলেন, 'আজ ড্রোনগুলো থেমে গেছে, আর সেই ভুমম ভুমম শব্দ নেই। আমরা নিরাপদ, আমাদের সন্তানেরা নিরাপদ। আমরা শান্তিতে আমাদের ছেলে-মেয়েদের সঙ্গে একত্র হতে পেরেছি, এটা খুবই ভালো লাগছে।'
গাজার দক্ষিণে আছে বেশ কিছু অস্থায়ী শিবির। যেখানে খুব অল্প জায়গায় বহু মানুষ ভিড় করে আছে। এই অস্থায়ী শিবিরগুলোতে আছে বারবার বাস্তুচ্যুত হওয়া পরিবারগুলো। তারা অবশেষে এক মুহূর্তের শান্তি খুঁজে পেয়েছে।
আরেক নারী আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, 'গত দুই বছরে আমরা এত কষ্ট করেছি, যা কিছু দেখেছি, সব কিছু সত্ত্বেও আমি এই যুদ্ধবিরতিতে খুশি।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের ভেতরের ভয় দূর হয়ে গেছে। এখন আমরা আমাদের প্রিয়জনদের, পরিবারকে, প্রতিবেশী ও বন্ধুদের দেখতে পাচ্ছি, যারা এখনও বেঁচে আছে। লড়াই থামার পর থেকে আমি সত্যিই খুশি। আজ আমি বাজারে গিয়েছিলাম। আমার বোনের সাথে দেখা করেছি, তাকে আমি গত দুই বছরে একবারও দেখিনি। তাকে দেখতে পেয়ে আমার হৃদয় প্রকৃত আনন্দ ভরে উঠেছে।'
গাজার আকাশে দীর্ঘ দুই বছর পর নেমে এসেছে এই নীরবতা বা শান্তি। এটি এই অঞ্চলের মানুষের জন্য কেবল যুদ্ধের বিরতি নয়, এটি হলো বেঁচে থাকা এবং প্রিয়জনদের সঙ্গে আবারও মিলিত হওয়ার আশা। দুই বছরের যুদ্ধ আপাতত শেষ বলে মনে হচ্ছে। এই নীরব রাত পেরিয়ে গাজাবাসী হয়তো নতুন এক সকাল পেতে যাচ্ছে।
সূত্র: আল জাজিরা ইংলিশ