ঘড়ির কাঁটা বাঁ থেকে ডানে ঘোরে কেন
কয়টা বাজে, কথাটা কেউ জিজ্ঞাসা করলেই চোখ চলে যায় ঘড়ির দিকে। যে ঘড়িটি ব্যাটারি শেষ না হওয়া পর্যন্ত অবিরাম চলতে থাকে। ছোট, মাঝারি ও বড় কাঁটাগুলো ঘুরতে থাকে নিজ নিজ সময়ে। কিন্তু পৃথিবীর সব ঘড়ির কাঁটা কেন অবিরত বাঁ থেকে ডানেই ঘোরে? প্রশ্ন আসতেই পারে, ঘড়ির কাঁটাগুলো উল্টো দিকে ঘোরে না কেন।
এই প্রশ্নের উত্তর জানতে আমাদের অনেকটা পেছনে ফিরে যেতে হবে। মানুষ সময়ের হিসাব রাখার প্রয়োজন অনুভব করেছিল বহু আগে। আনুমানিক ১৫০০ খ্রিষ্টপূর্বাব্দে ব্যাবিলনে প্রথম সূর্যঘড়ির ব্যবহার শুরু হয়। বলে রাখা ভালো, সূর্যঘড়ি হলো একটি প্রাচীন যন্ত্র, যা সূর্যের আলো ও আকাশে সূর্যের অবস্থান ব্যবহারে দিনের সময় নির্দেশ করে। এটিকে এখনকার ঘড়ির পূর্বপুরুষও বলা যেতে পারে। সূর্যঘড়ি শুধু দিনের বেলাই ব্যবহার করা যেত; ছিল আরও কিছু সীমাবদ্ধতা। তাই সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর বিকল্প উদ্ভাবনের প্রয়োজন দেখা দেয়। সেখান থেকেই আমরা এখনকার যান্ত্রিক কাঁটাঘড়ি পেয়েছি।
সূর্যঘড়ি দেখতে সাধারণত একটি সমতল প্লেটের মতো। যার ওপর সময়ের দাগ বা সংখ্যা আঁকা থাকে। এই প্লেটের মধ্যে বাঁ পাশে একটি সরু লাঠি বা ত্রিভুজাকার ফলক খাড়াভাবে বসানো থাকে, যাকে নোমন (Gnomon) বলে। যখন সূর্যের আলো এই নোমনের ওপর পড়ে, তখন এর একটি ছায়া তৈরি হয়, যা প্লেটের ওপর দিয়ে সরে যায় এবং সেই ছায়া সময়ের দাগ বা সংখ্যায় পড়ে দিনের সঠিক সময় নির্দেশ করে। এভাবে সময় দেখা হয় সূর্যঘড়িতে।
তুমি চাইলেও সূর্যঘড়ি বানাতে পারবে। প্রথমে একটি ফাঁকা জায়গায় শুধু একটি লাঠি পুঁতে দিতে হবে। এরপর লাঠির চারদিকে বৃত্তাকারে ঘণ্টার চিহ্ন এঁকে দিলেই একটি কার্যকরী সূর্যঘড়ি তৈরি হবে। পূর্ব দিকে সূর্য উঠলে লাঠির ছায়া লম্বভাবে বৃত্তাকার ঘড়িতে পড়বে। এরপর সূর্য তার স্থান বদলানোর সঙ্গে সঙ্গে লাঠির ছায়াও ঘুরতে থাকবে। ঠিক যেন এখনকার কাঁটাযুক্ত ঘড়ির মতোই। লাঠির ছায়া কোথায় আছে, সেটা দেখেই খুব সহজে সময় বলে দেওয়া সম্ভব এখন কয়টা বাজে।
এবার আসি আসল প্রশ্নে। আমরা সবাই জানি, পৃথিবীর নিজ অক্ষের ওপর ঘূর্ণনের কারণে দিন–রাত হয়। কিন্তু এ ঘূর্ণনটি উত্তর গোলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে ঘটে। মানে, উত্তর গোলার্ধে দাঁড়িয়ে যখন আমরা সূর্যের দিকে তাকাই, তখন আমাদের চোখে সূর্যকে আকাশপথে ঘড়ির কাঁটার দিকে ঘুরতে দেখা যায়। অর্থাৎ পূর্ব থেকে দক্ষিণ হয়ে পশ্চিম দিকে যায়। আর এ কারণেই সূর্যঘড়িতে লাঠির ছায়াটি বাঁ দিক থেকে ডান দিকে সরে যেতে থাকে। এই থেকেই এখনো ঘড়ির কাঁটা বাঁ দিক থেকে ডান ঘোরে।
ঘড়ি সম্ভবত প্রথম উদ্ভাবিত হয়েছিল উত্তর গোলার্ধের কোনো দেশেই। দক্ষিণ গোলার্ধে সূর্যের গতিপথ উল্টো। দক্ষিণ গোলার্ধের কোনো দেশে ঘড়ি আবিষ্কার হলে সূর্যঘড়ির ছায়া ডান থেকে বাঁ দিকে সরত। তাহলে আজকের ঘড়িগুলোও উল্টো দিকে ঘুরত। সুতরাং আমাদের পরিচিত ঘড়ির কাঁটার ঘূর্ণনের দিকটি মূলত উত্তর গোলার্ধের ভৌগোলিক অবস্থান ও সূর্যের আপাত গতিপথের ওপর ভিত্তি করেই নির্ধারিত হয়েছে। মিসর কিছু বিষুবরেখার উত্তরে অবস্থিত। আর তোমরা যদি কেউ প্রাচীন সূর্যঘড়ি দেখতে চাও, তবে যেত পারো ঢাকার বলধা গার্ডেনে।