ফলের রাজা আম কেন?

একদল বিজ্ঞানীর গবেষণায় জানা গেছে, আমের বয়স প্রায় পাঁচ হাজার বছরের পুরোনো। আর এর জন্ম নাকি এই বাংলাদেশেই। যদিও এখন থেকে পাঁচ হাজার বছর আগে বিশ্বে বাংলাদেশ নামের কোনো দেশ ছিল না, তবে সে সময় ভারতবর্ষের যে অঞ্চলে আম জন্মাত, সেটা পড়েছে বাংলাদেশের অংশে। গবেষকদের মতে, আমগাছের জন্ম ভারতের উত্তরাংশ, খানিকটা বাংলাদেশে ও মিয়ানমারে।

সারা বিশ্বে আম জনপ্রিয়, আবার অনেক দেশেই এটি জাতীয় ফল। ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যতই চিন্তার ভিন্নতা থাকুক না কেন, দুটি দেশের জাতীয় ফল আম। আবার ফিলিপাইনের জাতীয় ফলও আম।

এই উপমহাদেশ বিশ্বকে কেবল আমই দেয়নি, দিয়েছে এর নামটাও। উপমহাদেশ ছাড়া বিশ্বের প্রায় বেশির ভাগ দেশে আমের নাম ম্যাঙ্গো। এই নাম মূলত ইংরেজদের দেওয়া। ইংরেজরা আবার এই নাম নিয়েছে পর্তুগিজ শব্দ মাঙ্গা থেকে। পর্তুগিজ এই শব্দ এসেছে দক্ষিণ ভারতীয় মালয়ালম শব্দ মাআঙ্গা অথবা দক্ষিণ ভারতীয় শব্দ মাঙ্গাই থেকে। আবার কারও মতে, এটা তামিল শব্দ মানকাইয়ের পর্তুগিজ রূপ।

সারা বিশ্বে কত প্রজাতির আম আছে, এই নিয়ে অনেক বিতর্ক রয়েছে। একদল গবেষক মনে করেন, পৃথিবীতে প্রায় ১ হাজার ৫০০ প্রজাতির আম রয়েছে। আরেক দল হাজারখানেক প্রজাতির আমের কথা বলেন। তবে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগের গবেষণা ও সংগ্রহশালায় সারা বিশ্বের প্রায় ৫০০ প্রজাতির আমের নমুনা রয়েছে।

বাংলাদেশে বহু প্রজাতির আম আছে। যদিও এই বিষয়ে এখনো বিস্তারিত গবেষণা হয়নি, তারপরও অনেক গবেষক মনে করেন, বাংলাদেশে ২৫০ থেকে ৩০০–এর কাছাকাছি প্রজাতির আম রয়েছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে জনপ্রিয় আমের মধ্যে রয়েছে ল্যাংড়া, গোপালভোগ, হিমসাগর, মিছরিভোগ, ক্ষীরশাপাতি, ফজলি ইত্যাদি।

নতুন প্রজাতির আমের মধ্যে আম্রপালি, মল্লিকা, রানীপছন্দ ও হাঁড়িভাঙা আম খুবই জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।

এ ছাড়া এমন অনেক আম রয়েছে, যেগুলোর নাম অতটা প্রচলিত নয়। যেমন কৃষ্ণভোগ, লক্ষ্মণভোগ, মোহনভোগ, কুয়াপাহাড়ি, বোম্বাই, লতাপাহাড়ি, কোহিতুর ইত্যাদি।

জাকার্তা নামটা শুনলেই মনে হবে, এটা তো ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী। আবার সায়গন নামটার সঙ্গে ভিয়েতনামের এক শহরের নামের যোগ রয়েছে, বর্তমানে যা হো চি মিন সিটি নামে পরিচিত। কিন্তু আম যাঁরা ভালোবাসেন, তাঁরা জানেন এ দুটি হচ্ছে আমের দুটি প্রজাতির নাম। জাকার্তা আম যেমন ইন্দোনেশিয়ায় পাওয়া যায় না, তেমনি আবার সায়গন আমও ভিয়েতনামে পাওয়া যায় না। এই দুটি আম পাওয়া যায় আমেরিকায়। অ্যান্ডারসন (আমেরিকা), আনোয়ার রাতোল (পাকিস্তান), ফজলি (বাংলাদেশ), ডানকান, এডওয়ার্ড ফোর্ড, গ্রে (আমেরিকা), গ্লেন (ইতালি) গ্রাহাম (ত্রিনিদাদ) জিন অ্যালেন (আমেরিকা) জুলি (ক্যারিবীয় অঞ্চল) অস্টিন (স্পেন), মল্লিকা (বাংলাদেশ, নেপাল) এগুলো বাক্সবন্দীতে লেখা সেসব দেশের ব্যক্তির নাম নয়, এগুলো হচ্ছে এসব দেশের আমের প্রজাতির নাম।

পারভিন নাম শুনলে মনে হতে পারে যে এটা বাংলাদেশ, ভারত বা পাকিস্তানের কোনো মেয়ের নাম। এটা আসলে একটা আমেরও নাম। এই আম কেবল আমেরিকাতেই পাওয়া যায়।

কোকোনাট ক্রিম নারকেলের কোনো ক্রিম নয়, এটা আমেরিকার এক আমের নাম। আমেরিকায়, এমারাল্ড ও রুবি আমের দুটি প্রজাতির আম আছে। আমেরিকাতেই এক প্রজাতির আম পাওয়া যায়, যার নাম আইসক্রিম।