তীব্র শীতেও সুইডেনের শিশুরা কেন ঘরের বাইরে ঘুমায়

যে শিশুরা দিনের বেলায় ঘরের বাইরে ঘুমায়, তারা কম অসুখে ভোগে।ছবি: সুইডেন ডট এসই

তুষারে ঢেকে গেছে শহর। তাপমাত্রা শূন্য ডিগ্রি বা তারও নিচে। এমন বৈরী আবহাওয়ায় হয়তো কোনো এক মা কফি শপে নিচ্ছেন গরম কফির উষ্ণতা। কিন্তু তাঁর শিশুটি ঘুমিয়ে আছে কফি শপের বাইরে। এমন দৃশ্য দেখলে তুমি হয়তো চমকে উঠবে। কারণ, শিশুসন্তানকে কফি শপের বাইরে ঘুম পাড়িয়ে কোনো মা কফি শপে কফি খাচ্ছেন, অথবা শিশুটিকে বাইরে শুইয়ে দিয়ে নিজে ঘরের ভেতরে আরাম করে ঘুমাচ্ছেন কিংবা কাজে চলে গেছেন, এটা আমাদের দেশে বিরল বললেও কম বলা হবে। কিন্তু সুইডেনের অসংখ্য বাবা-মা তাঁদের দীর্ঘদিনের ঐতিহ্য অনুসরণ করে সারা বছর শিশুদের দিনের বেলার ঘুমটুকু ঘরের বাইরেই ঘুমাতে দেন। হোক সেটা ভয়ানক শীত কিংবা তুমুল বর্ষার কোনো দিন। শুধু সুইডেন নয়, উত্তর ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, যেমন ডেনমার্ক, ফিনল্যান্ড, আইসল্যান্ড, নরওয়েসহ আরও কিছু দেশে এই প্রথার প্রচলন দেখা যায়।

বাংলার মায়েদের বর্ণনায় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছেন, ‘যখন ঘুমায় থাকি/ জাগে রে কাহার আঁখি/আমার শিয়রে/ আহা কীসে হবে ঘুম!/ তাই কত ছড়া গানে/ ঘুম-পাড়ানিরে আনে/ বলে, “ঘুম! দিয়ে যা রে খুকু-চোখে চুম!”’ এই যদি হয় মায়ের স্বরূপ, তাহলে কেমন করে এই নর্ডিক দেশের মায়েরা ছোট শিশুদের ঘরের বাইরে রেখে নিজেরা আরাম করে কফি খান, দেন শান্তির ঘুম! তবে কি এর পেছনে এমন কোনো কারণ আছে, যা ৯৯ শতাংশের বেশি শিক্ষিত মানুষের দেশে এই প্রথা অটুট রেখেছে আজও? কারণ, মা তো মা-ই; হোক সেটা ইউরোপ কিংবা বাংলার।

বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, এর পেছনের মূল তত্ত্বটি হলো, বাচ্চারা যেন নির্মল বাতাসের সংস্পর্শে আসে। বেশ কয়েকজন বাবা-মায়ের উদ্ধৃতি দিয়ে এই প্রতিবেদনে বলা হয়, ঘরের চেয়ে ঘরের বাইরেই শিশুদের দিবানিদ্রা ভালো ও দীর্ঘতর হয়।

আরও পড়ুন

নরডিক দেশগুলোতে এই প্রাচীন প্রথার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধির আরও কারণ উঠে এসেছে কিছু সমীক্ষায়। অনেক বাবা-মা লক্ষ করেছেন, শিশুদের দিবানিদ্রা যদি ঘরের বাইরে হয়, তাহলে সেটা গভীর হয়। এতে তাদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। গায়ে রোদ লাগানোর ফলে ভিটামিন ডি-এর শূন্যতা দেখা দেয় না। তা ছাড়া শিশুদের নিয়ে কাজ করা একটি প্রতিষ্ঠান, চাইল্ডস প্লে তাদের ওয়েবসাইটে বলেছে, শিশুদের বাইরে ঘুমানোর কিছু সুবিধার মধ্যে একটি হলো, এটি শিশুর মস্তিষ্ককে সক্রিয় করে, তাদের সুখী, সুন্দর ও দীর্ঘস্থায়ী স্মৃতিশক্তি দেয়। আর এই সুবিধাগুলো শিশুদের মেধাবিকাশ দ্রুত করে, বাড়িয়ে তোলে শেখার আগ্রহ। ওয়েবসাইটটি আরও জানায়, যে শিশুরা দিনের বেলায় ঘরের বাইরে ঘুমায়, তারা কম অসুখে ভোগে।

প্রাকৃতিক পরিবেশে বিশুদ্ধ বাতাস আর সূর্যালোকে ২ থেকে ৫ বছরের শিশুর দিবানিদ্রা গড়ে দেয় সুস্বাস্থ্যের ভিত।
ছবি: চাইল্ড'স প্লে

ওয়েবসাইটটিতে শিশুদের ঘরের বাইরে ঘুমাতে দেওয়ার সময় বেশ কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ রাখতে বলা হয়েছে। যেমন শিশুর ঘুমানোর পরিবেশটি যেন আরামদায়ক হয়। ঝোড়ো বাতাস, তুষারপাত বা বৃষ্টি যেন শিশুটির ক্ষতির কারণ না হয়। আর এগুলো নিশ্চিত করতে পারলে প্রাকৃতিক পরিবেশে বিশুদ্ধ বাতাস আর সূর্যালোকে ২ থেকে ৫ বছরের শিশুর দিবানিদ্রা গড়ে দেয় সুস্বাস্থ্যের ভিত। 

সূত্র: বিবিসি

আরও পড়ুন