বাংলাদেশে মরিচ এল কোথা থেকে

এই পদ্ধতি অনুসারে মরিচে ক্যাপসিসিন নামের এক উপাদান যত বেশি হবে, সেটার ঝালের পরিমাণ তত বেশি হবে।প্রতীকী ছবি: স্প্ল্যাশ নিউজ

আমরা কখনও কল্পনা করতে পারি না যে আমাদের খাবারে মরিচ নেই। কাঁচা অথবা শুকনা, বাটা অথবা গুঁড়া মরিচ, মরিচ না হলে আমাদের রান্নায় স্বাদ মেলে না। অথচ এখন থেকে প্রায় পাঁচশ বছর আগে আমাদের বাংলাদেশের খাবারে মরিচ বলে কিছু ছিল না।

তাহলে দুটো প্রশ্ন? মরিচ এল কোথা থেকে? আর মরিচ না থাকলে আমরা রান্নায় ঝাল স্বাদ আনার জন্য কী ব্যবহার করতাম?

প্রথম প্রশ্নটির উত্তর হলো মরিচ এসেছে দক্ষিণ আমেরিকা থেকে। এর মানে কলম্বাসের আমেরিকা যাওয়ার জলপথ আবিষ্কারের আগে বিশ্বে মরিচ ছাড়াই সব রান্না হতো।

ক্রিস্টফার কলম্বাস
ছবি:

তাহলে সে সময় বাংলাদেশিরা কি ঝাল খাবার খেতে পেতো না? অবশ্যই খেতো। তবে আমাদের পূর্বপুরুষেরা সেই ঝাল খাবার রান্না করতেন গোল মরিচ দিয়ে।

তো এ থেকে আমরা জানলাম, মরিচ হচ্ছে ঝাল এক ধরনের সবজি। যার জন্ম দক্ষিণ আমেরিকার মেক্সিকো, পেরু ও বলিভিয়ায়। মরিচের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়ার ইতিহাস প্রায় ৭৫০০ বছর পুরোনো।

আরও পড়ুন

কলম্বাসের লোকজন মরিচকে চিলি পেপার বলে ডাকতো, কারণ ইউরোপের লোকেরা ঝাল বলতে বুঝত গোল মরিচের ঝালকে। গোল মরিচ ইংরেজিতে পেপার। তাই এই নাম। স্প্যানিশরা মরিচ ইউরোপে নিয়ে এল। ঝালের স্বাদ পেলো ইতালিয়ানরা। এরপর মরিচের ঝাল চিনল ফরাসিরা। আর আমরা মরিচ খেতে শিখেছি পর্তুগিজদের কাছ থেকে।

কাঁচা মরিচ
ফাইল ছবি

১৯১২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের এক ফার্মাসিস্ট উইলবার লিঙ্কন স্কোভিল মরিচের ঝাল মাপার এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেন। এই পদ্ধতি অনুসারে মরিচে ক্যাপসিসিন নামের এক উপাদান যত বেশি হবে, সেটার ঝালের পরিমাণ তত বেশি হবে। মূলত মরিচে সঞ্চিত ঝালের তীব্রতা এতে বোঝা যায়।

উইলবার স্কোভিল সে সময় পার্ক ডেভিস নামের এক ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিতে কাজ করছিলেন। তিনি ঝাল নিয়ে গবেষণা করে বের করেন, সব মরিচে ঝাল সমান না।

আরও পড়ুন

ঝালের মাত্রার এই পরীক্ষা তিনি চালিয়েছিলেন খাদ্য রসিকদের নিয়ে। আর এর নাম দিয়েছিলেন স্কোভিল অরগানোলেপেটিক টেস্ট। এখন এটি কেবল স্কোভিল টেস্ট নামে পরিচিত। মরিচের ঝালের মাত্রার পরিমাপকে বলা হয় এসএইচইউ মানে স্কোভিল হিট ইউনিট। এতে ক্যাপসিসিনের মাত্রা পরিমাপ করা হয়। ক্যাপসিসিন হচ্ছে মরিচে ঝালের প্রধান উপাদান।

বর্তমানে ঝাল মাপার আরেকটি টেস্ট ব্যবহার করা হয়। এটার নাম এইচপিএলসি। সাধারণত একটা ঝাল মরিচের সব জায়গায় সমান ঝাল থাকে না। সেজন্য এইচপিএলসি তে মরিচের বিভিন্ন অংশের ঝালের মাত্রা বের করে হয়। তারপর সেটাকে গড় করে মরিচের ঝাল নির্ধারণ করা হয়।

স্কোভিল হিট ইউনিট অনুযায়ী বিশ্বের সবচেয়ে ঝাল মরিচের নাম পেপার এক্স। এর স্কোভিল ইিট ইউনিট ২,৬৯,৩০০০। আমাদের দেশে নাগা বা বোম্বাই মরিচের ঝালের স্কোভিল ইউনিট ১,০০০,০০০। আমরা সাধারণত যে সব মরিচ খাই সেগুলোর গড় স্কোভিল ইিট ইউনিট ২৫০০ থেকে ৫০,০০০ পর্যন্ত হতে পারে।

স্কোভিল আরেকটি জিনিস আবিস্কার করেছিলেন। সেটা হলো ঝালে যদি মুখ পুড়ে যায় তাহলে কী খেলে ঝাল কমে আসবে? উত্তর হলো দুধ।

আরও পড়ুন