ইরানের পাশাপাশি গাজায়ও থামছে না ইসরায়েলি হামলা

ত্রাণ নিতে এসে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর আক্রমণে আহত গাজার কিশোরছবি: বিবিসি

বিশ্ববাসীর নজর এখন ইরানের দিকে। ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান পাল্টাপাল্টি হামলার মধ্যে সংবাদমাধ্যমে গাজা নিয়ে আলোচনা কমে এসেছে। তবে ইসরায়েল সেখানে হামলা অব্যাহত রেখেছে। বিশেষ করে ত্রাণ সংগ্রহ করতে আসা মানুষের জীবন বিপন্ন হচ্ছে ইসরায়েলি হামলায়।

গাজার খান ইউনিসে ত্রাণ নিতে আসা মানুষ আক্রমণের শিকার হচ্ছে। এই আক্রমণ শুরু হয়েছে গত ২৬ মে থেকে। খাবার সংগ্রহ করতে আসা শত শত ক্ষুধার্ত মানুষ ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ হারিয়েছে।

গত মঙ্গলবার, ১৭ জুন ইসরায়েলি সেনারা গাজায় ত্রাণ নিতে আসা ফিলিস্তিনিদের ওপর হামলা চালিয়েছে। ট্যাংক, মেশিনগান ও ড্রোন ব্যবহার করে গুলি চালিয়ে অন্তত ৭০ জনকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। এতে আহত হয়েছে শতশত মানুষ।

মঙ্গলবার সকালে খান ইউনিসের দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান পূর্ব সড়কে ত্রাণপ্রার্থীরা জড়ো হয়েছিল। এ সময় তাদের ওপর ইসরায়েলি সেনারা গুলি চালায়। তিন সপ্তাহ আগে ইসরায়েল ও মার্কিন সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) এই অঞ্চলে খাদ্য বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে। তখন থেকেই এই ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড চলছে।

আল নাসের হাসপাতালের চিকিৎসকদের মতে, অনেক আহত ব্যক্তির অবস্থা গুরুতর। তাই মৃতের সংখ্যা বাড়তে পারে। আহতদের এই হাসপাতালেই চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ময়দা সংগ্রহ করতে এসে মঙ্গলবার প্রাণ হারিয়েছে অন্তত ৭০জন।
ছবি: আল-জাজিরা

গাজার সিভিল ডিফেন্সের মুখপাত্র মাহমুদ বাসাল জানিয়েছেন, ২০০ জনের বেশি মানুষ আহত হয়েছেন। তিনি বলেছেন, 'ইসরায়েলি ড্রোন নাগরিকদের ওপর গুলি চালায়। এর কয়েক মিনিট পর ইসরায়েলি ট্যাংক নাগরিকদের ওপর বেশ কয়েকটি শেল নিক্ষেপ করে। ফলে বিপুল সংখ্যক মানুষ শহীদ ও আহত হন।' এই মানুষগুলো ময়দা সংগ্রহের আশায় জড়ো হয়েছিল।

আল জাজিরার হানি মাহমুদ গাজা শহর থেকে করা প্রতিবেদনে জানিয়েছেন, প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, ইসরায়েলি ট্যাংক, ভারী মেশিনগান এবং ড্রোন হামলা ভিড়ের ওপর 'বৃষ্টির মতো' নেমে এসেছিল।

৭০ জনেরও বেশি মানুষের মৃত্যুর ঘটনায় এই দিনটি জিএইচএফ কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে সবচেয়ে ভয়াবহ দিন হিসেবে ধরা হচ্ছে। এর আগে সোমবার রাফা এলাকার দক্ষিণে খান ইউনিসে ৩৮ জন নিহত হয়েছিলেন।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২৬শে মে গাজায় জিএইচএফ তাদের কার্যক্রম শুরু করার পর থেকে ত্রাণ সংগ্রহ করতে গিয়ে ৩০০ জনের বেশি মানুষ নিহত এবং ২,০০০ এরও বেশি আহত হয়েছেন। আহতদের চিকিৎসার জন্য গাজার ৩৬টি হাসপাতালের মধ্যে বর্তমানে মাত্র ১৭টি আংশিক সচল আছে। এই হাসপাতালগুলোতে মোট প্রায় দেড় হাজার শয্যা আছে, যা যুদ্ধের আগের তুলনায় প্রায় ৪৫ শতাংশ কম।

নাসের হাসপাতালের সূত্র বলছে, হামলার শিকার অনেক ব্যক্তিকে 'শনাক্ত করা যায়নি'। কারণ হামলায় তাঁদের দেহ 'ছিঁড়ে টুকরো টুকরো' হয়ে গেছে।

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস এই ত্রাণকেন্দ্রগুলোতে ঘটা হত্যাকাণ্ডের জবাবদিহিতা চেয়েছেন।

ইসরায়েল গাজায় প্রায় তিন মাস ধরে খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের ওপর সম্পূর্ণ অবরোধ দিয়ে রেখেছিল, যা ২৩ লাখ গাজাবাসীর জন্য দুর্ভিক্ষের আশঙ্কা তৈরি করেছে। এই সময়ে ইসরায়েল অন্য কোনো সহায়তা গাজায় ঢুকতে দেয়নি। আংশিকভাবে এই অবরোধ তুলে নেওয়ার পর মে মাসের শেষে জিএইচএফ গাজায় সামান্য পরিমাণে খাদ্য সহায়তা বিতরণ শুরু করে, কিন্তু সেখানেই ত্রাণ নিতে এসে মানুষ নিহত হচ্ছেন।

আল-জাজিরা অবলম্বনে

আরও পড়ুন