মজার সব আবিষ্কার করে যারা পেলেন ইগ নোবেল
বিজ্ঞানের জগতে স্থূলতা কমানো নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই গবেষণা চলছে। এমন পরিস্থিতিতে একদল গবেষক একটি চরম পদ্ধতি প্রস্তাব করে রসায়ন বিভাগে ইগ নোবেল পুরস্কার জিতে নিয়েছেন। তাঁদের মতে, পলিটেট্রাফ্লুরোইথিলিন (PTFE) বা সহজ কথায় টেফলনের গুঁড়ো খাবারে মিশিয়ে খেলে তা ক্যালরি ছাড়াই পেট ভরাবে।
টেফলন থাকে রান্নাঘরের নন স্টিকি সস প্যানে। টেফলনের কারণে রান্নার সময় কড়াইয়ে খাবার লেগে যায় না। এই বস্তু কোনো খাবারের মধ্যেই পড়ে না। তবে এক গবেষক আবিষ্কার করেছেন, খাবারের চারভাগের একভাগ যদি টেফলন খাওয়া হয়, তবে ক্যালরি শরীরে প্রবেশ করবে না, আবার পেটও ভরবে। এই ধারণাটি খুব অদ্ভুত। আমেরিকার খাদ্য ও ওষুধ কর্তৃপক্ষও (FDA) এই ধারণার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি।
এমন অদ্ভুত সব গবেষণার জন্য একটি মজার পুরস্কার দেওয়ার চল আছে। প্রতিবছর অক্টোবর মাসে নোবেল পুরস্কার ঘোষণা করা হয়। সেপ্টেম্বর মাসে সিরিয়াস মুডে জল্পনা-কল্পনা চলে, কারা এবার নোবেল পুরস্কার জিতবেন। ঠিক এই সময়ে মাঠে হাজির হয় ইগ নোবেল। একে তুমি প্রতি নোবেল বা ফানি নোবেল বলতে পারো। কারণ এটি প্রথমে মানুষকে হাসায় আর পরে ভাবায়। এটিই ইগ নোবেল পুরস্কার। সব অদ্ভুত ও মজার গবেষণার জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়। এর সঙ্গে নোবেল কমিটির কোনো সম্পর্ক নেই। এবার চলো দেখি, এই বছর আর কোন মজার আবিষ্কার ইগ নোবেল কমিটির নজর কেড়েছে।
জীববিজ্ঞানে একটি সহজ কিন্তু দারুণ আবিষ্কারের জন্য পুরস্কার জিতেছেন ডাক্তার টোমাকি কোজিমার দল। তাঁরা পরীক্ষা করে দেখেছেন, গরুর গায়ে জেব্রার মতো ডোরাকাটা দাগ আঁকলে মাছি এদের অনেক কম কামড়ায়। এই আবিষ্কারটি করে তিনি বলেছেন, 'আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না, আমার মনে হয়েছিল আমি স্বপ্ন দেখছি।'
আমাদের দৈনন্দিন জীবনও উঠে এসেছে এবারের ইগ নোবেলজয়ী গবেষণাগুলোয়। যেমন, শিশুচিকিৎসা বিভাগে পুরস্কারপ্রাপ্ত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, মায়েরা রসুন খেলে শিশুরা তাদের মায়ের দুধ বেশি পান করে।
মনোবিজ্ঞান বিভাগে পুরস্কার পেয়েছে এমন একটি গবেষণা, যেখানে দেখা গেছে, মানুষকে বুদ্ধিমান বললে তারা আরও বেশি আত্মপ্রেমী হয়ে ওঠে।
শান্তি পুরস্কার জিতেছে সেই গবেষণা, যা প্রমাণ করে যে এক পেগ ভদকা পান করলে বিদেশি ভাষায় কথা বলার আত্মবিশ্বাস বেড়ে যায়।
আবিষ্কারের এই ধারায় উঠে এসেছে এক অদ্ভুত জুতার র্যাকের গল্প। ভারতীয় গবেষকেরা এমন একটি জুতার র্যাক তৈরি করে প্রকৌশল বিভাগে পুরস্কার জিতেছেন, যা দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। কিন্তু এই প্রক্রিয়াটি এতটাই শক্তিশালী যে, ব্যাকটেরিয়া মারার পাশাপাশি এটি জুতাও পুড়িয়ে ফেলে।
পদার্থবিজ্ঞানে পুরস্কার জিতেছে ইতালীয় একদল গবেষক, যারা পাস্তা সস কেন দলা পাকিয়ে যায়, তার পেছনের কারণ খুঁজে বের করেছেন। রান্নাঘরের এই সাধারণ সমস্যার বৈজ্ঞানিক সমাধান বেশ চমকপ্রদ।
সাহিত্যে মরণোত্তর পুরস্কার দেওয়া হয়েছে প্রয়াত ডাক্তার উইলিয়াম বিনকে। কারণ তিনি টানা ৩৫ বছর ধরে নিজের নখ ও পায়ের নখের বৃদ্ধির হার লিখে রেখেছিলেন। তাঁর ছেলে বেনেট বলেন, 'আমার বাবা এটা পেলে খুব খুশি হতেন এবং বলতেন, অবশেষে স্বীকৃতি মিলল!'
আরেকটি অদ্ভুত গবেষণা দেখিয়েছে ইথানল খেলে বাদুড়ের ওড়ার এবং পথ খোঁজার ক্ষমতা কমে যায়। এটি থেকে গবেষকেরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন যে, অতিরিক্ত পাকা ফল খেয়ে নেশাগ্রস্ত হলে বাদুড়েরা দুর্ঘটনায় পড়তে পারে।
এই সব অদ্ভুত আবিষ্কারের পেছনে আছে সত্যিকারের গবেষণা। ইগ নোবেল পুরস্কার অবশ্য বলে, এই গবেষণা দেখে আগে হাসো, তারপর ভাবো।