সূর্যের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসছে ধূমকেতু, কবে দেখা যাবে

থ্রিআই/ অ্যাটলাসছবি: নাসা

সম্প্রতি সূর্যের খুব কাছ দিয়ে ঘুরে গেছে এক রহস্যময় ধূমকেতু। নাম থ্রিআই/ অ্যাটলাস (3I/ATLAS)। এটি এখনো সৌরজগতে আছে, সূর্যের ঠিক আড়ালে। তাই পৃথিবী থেকে আপাতত দেখা না গেলেও, খুব শিগগির ভোরের আকাশে টেলিস্কোপে ধরা দেবে এই ধূমকেতু। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এই ধূমকেতুর গতিপথ, গঠন এবং বয়স নিয়ে চমকপ্রদ তথ্য জানিয়েছেন।

আন্তনাক্ষত্রিক এই ধূমকেতু সূর্যের প্রায় ২০ দশমিক ৩ কোটি কিলোমিটার দূর দিয়ে অতিক্রম করেছে। জ্যোতির্বিজ্ঞানের হিসাবে এ দূরত্ব খুব বেশি নয়। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির জ্যোতির্বিজ্ঞানী ড্যারিল সেলিগম্যান জানিয়েছেন, কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই ধূমকেতুটি সূর্যের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসবে।

নাসার তথ্য অনুযায়ী, ১১ নভেম্বর থেকে টেলিস্কোপে ভোরের আকাশে দেখা যেতে পারে থ্রিআই/ অ্যাটলাসকে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এর গতিবিধি পর্যবেক্ষণের সুযোগ পাবেন আরও কয়েক মাস। কারণ, এরপর ধূমকেতুটি ধীরে ধীরে সৌরজগৎ ছাড়িয়ে বাইরের মহাশূন্যের দিকে চলে যাবে।

পৃথিবীর কাছাকাছি আসবে কখন

ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সি (ইএসএ) বলেছে, এই ধূমকেতু ১৯ ডিসেম্বর পৃথিবীর সবচেয়ে কাছে আসবে। তবে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। তখনো এটি পৃথিবী থেকে প্রায় ২৭ কোটি কিলোমিটার দূরে থাকবে। তাই আমাদের গ্রহের জন্য এটি কোনো বিপদের কারণ হবে না।

থ্রিআই/ অ্যাটলাস কয়েকটি কারণে বিশেষ। একটি কারণ হলো, আমাদের সৌরজগৎ দিয়ে অতিক্রম করা পরিচিত আন্তনাক্ষত্রিক বস্তুর মধ্যে এটি তৃতীয়। গত ১ জুলাই এটি আবিষ্কৃত হওয়ার পর থেকেই জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা এটিকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন। পর্যবেক্ষণর ফলে নতুন নতুন তথ্য জানা যাচ্ছে, যেটা সৌরজগতের ভেতরের ধূমকেতুগুলো থেকে আলাদা। সহজেই পার্থক্য বোঝা যাচ্ছে।

আরও পড়ুন

ধূমকেতুটি কী দিয়ে তৈরি

ধূমকেতুকে বলা হয় মহাকাশের ‘নোংরা বরফের গোলা’। সৌরজগৎ গঠনের সময়কার অবশিষ্ট উপাদানগুলো মিলে এটি তৈরি হয় বলে এমন নাম। প্রতিটি ধূমকেতুতেই একটি কঠিন কেন্দ্র বা নিউক্লিয়াস থাকে; যা গঠিত হয় বরফ, ধূলিকণা ও পাথর দিয়ে। যখন ধূমকেতু সূর্যের কাছাকাছি আসে, তখন সূর্যের তাপে সেগুলো থেকে গ্যাস এবং ধূলিকণা বেরিয়ে যেতে শুরু করে। যাকে আমরা বলি ধূমকেতুর ‘লেজ’।

নাসার স্পেয়ারএক্স ধূমকেতুটি পর্যবেক্ষণ করেছে
ছবি: নাসা

সূর্যের কাছাকাছি আসার কারণে এই ধূমকেতু থেকে যে উপাদানগুলো বের হচ্ছে, তা থেকেই এর জন্মস্থান এবং এর গঠন নিয়ে ধারণা পাওয়া যাবে। সূর্যের কাছে থাকার সময় ধূমকেতুর কেন্দ্র নিয়ে ভালোভাবে জানা যায়। এর রাসায়নিক গঠন বিশ্লেষণ করে প্রথম দিকে এর উপাদান কী ছিল, তা জানা সম্ভব।

আরও পড়ুন

হাবল টেলিস্কোপ, জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ, নাসার স্পেয়ারএক্সসহ একাধিক শক্তিশালী যন্ত্র ও মিশন ব্যবহার করে বিজ্ঞানীরা থ্রিআই/ অ্যাটলাসকে জানার চেষ্টা করছেন। এরই মধ্যে কিছু তথ্য জানা গেছে। যেমন স্পেয়ারএক্স এবং জেমস ওয়েব টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, ধূমকেতুটি সূর্যের কাছাকাছি আসার সময় এটি থেকে কার্বন ডাই-অক্সাইড, জলীয় বাষ্প, কার্বন মনোক্সাইড এবং কার্বনিল সালফাইড নির্গত হচ্ছে। কার্বন ডাই-অক্সাইড খুব সহজেই কঠিন অবস্থা থেকে গ্যাসে রূপান্তরিত হয়। এই তথ্য থেকে অনুমান করা হয়, ধূমকেতুটি এর আগে আমাদের সূর্যের কাছে আসার আগে অন্য কোনো নক্ষত্রের এত কাছে আসেনি।

বিশেষজ্ঞদের প্রাথমিক অনুমান, এই আন্তনাক্ষত্রিক ধূমকেতুর বয়স প্রায় ৩ বিলিয়ন থেকে ১১ বিলিয়ন বছর। এর সঙ্গে আমাদের সৌরজগতের তুলনা করা যায়। আমাদের সৌরজগতের বয়স প্রায় ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন বছর।

আরও পড়ুন

পর্যবেক্ষণ বন্ধ হচ্ছে না

অক্টোবর মাসে পৃথিবীতে থাকা স্থল টেলিস্কোপ দিয়ে এটিকে না দেখা গেলেও আকাশে থাকা মিশনগুলো থেকে এটিকে পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পাঞ্চ, সোহোর মতো মহাকাশ মিশনগুলো এটিকে দেখতে পাচ্ছে। এটি গত ৩ অক্টোবর মঙ্গল গ্রহের সবচেয়ে কাছে এসেছিল। দূরত্ব ছিল ৩ কোটি কিলোমিটার।

ইউরোপীয় স্পেস এজেন্সির বিজ্ঞানীরাও এটিকে পর্যবেক্ষণ করছেন। মঙ্গলের কক্ষপথে থাকা এক্সোমার্স ট্রেস গ্যাস অরবিটারের ক্যামেরা এই ধূমকেতুকে একটি ঝাপসা সাদা বিন্দু হিসেবে দেখতে সক্ষম হয়েছে। আরও কিছু মিশন থেকে এটিকে পর্যবেক্ষণ করা হবে। যদিও এই তথ্য পৃথিবীতে পৌঁছাতে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।

এটিকে পর্যবেক্ষণ করার জন্য আরও কয়েক মাস সময় আছে। এই সময়ের মধ্যে আমরা সম্ভবত মহাকাশবিজ্ঞানের নতুন তথ্য জানতে পারব।

সূত্র: সিএনএন

আরও পড়ুন