চিঠি পাঠাতে যেতে হয় সমুদ্রের ৩৩ ফুট নিচে
ডাকে চিঠি পাঠানোর বিষয়টি মোটামুটি জাদুঘরে চলে গেছে। চিঠি পাঠাতে হলে অনেকগুলো ধাপ পার করতে হয়। কাগজে চিঠি লিখে খামে ভরে পোস্ট বক্সে ফেলতে হবে। সেখান থেকে চিঠি সংগ্রহ করে পোস্টম্যান পোস্ট অফিসে নিয়ে যাবেন। সেখান থেকে পাঠানো হবে প্রাপকের ঠিকানায়। এসব করতে বেশ সময় লাগে।
চিঠি পাঠানোর বদলে এখন তোমার হাতে নানা উপায় আছে। তুমি চাইলেই কাউকে টেক্সট বা ইমেল করতে পারো। সেন্ট বাটনে টিপ দিলেই মেসেজটা চলে যায়। তবু কিছু মানুষ আছে, যারা পুরোনো দিনের চিঠি পাঠানোর পদ্ধতিকে ভালোবাসে। চট করে মেসেজ লেখার বদলে যত্ন করে হাতে চিঠি লেখে। তারপর ডাকযোগে চিঠিটা পাঠিয়ে দেয়। কিছু মানুষ এভাবে চিঠি পাঠায়। কিশোর আলোর পাঠক কিশোর আলোতে নিয়মিত চিঠি লেখে। সাধারণত এই চিঠিগুলো আসে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে।
চিঠি পাঠানোর জন্য পুরোনো দিনে রাস্তার মোড়ে মোড়ে দেখা যেত পোস্টবক্স। মানুষ বক্সে চিঠি ফেলে আসত। সেখান থেকে পোস্ট অফিসের লোক এসে চিঠিটা নিয়ে যেত। এখন তুমি তোমার পুরো এলাকা খুযে হয়তো একটিও পোস্ট বক্স পাবে না। জাদুঘরে খুঁজলে পেতে পারো।
তবে বিচিত্র একটি পোস্টবক্স আছে জাপানের সুসামি শহরে। রাস্তার মোড়ের বদলে এ শহরের চিঠির বক্সটা আছে সমুদ্রের নিচে। চিঠি পোস্ট করতে হয় পানির নিচে ডুব দিয়ে।
জাপানের ওয়াকায়ামা প্রদেশের ছোট্ট একটি মাছ ধরার শহর সুসামি। এখানে প্রায় ৩,৭০০ মানুষ বাস করে। এখানকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিষয় সমুদ্রের নিচে থাকা একটি পোস্টবক্স। এখানে পর্যটকরা পানিরোধী পোস্টকার্ড পানির নিচে থাকা একটি লাল রঙের বাক্সে রাখেন। যা পরে সংগ্রহ করে প্রাপকের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ঠিক সাধারণ ডাকের মতো। সাধারণ ডকের সঙ্গে এর সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো এই পোস্টবক্সটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৩৩ ফুট নিচে অবস্থিত।
তুমি যদি এখান থেকে চিঠি পোস্ট করতে চাও, তবে শুরুতে তোমাকে যেতে হবে এখানকার একটি ডাইভ শপে। এই শপে তুমি পানি পানিরোধী পোস্টকার্ড। এখান থেকে পোস্ট কার্ড কিনে তোমাকে পার্মানেন্ট মার্কার দিয়ে লিখতে হবে। এটি এমন মার্কার, যা দিয়ে লিখলে লেখা মুছবে না। পানি লাগলেও সহজে মুছে যাবে না। তুমি যাকে খুশি চিঠি লিখতে পারবে। এরপর তোমাকে পানির নিচে ডুব দিয়ে পোস্টবক্সে পোস্টকার্ডটি ফেলতে হবে। এ জন্য তোমাকে পরতে হবে ডুবুরির পোষাক।
৪০ বছর ধরে ডাকঘরে কাজ করা মাতসুমোতো একটি ভিডিওতে বলেছিলেনন, ‘আমি ভেবেছিলাম, ডুবুরিরা যদি সমুদ্রের নিচ থেকে চিঠি পাঠাতে পারে, তাহলে বেশ মজা হবে।’
তাঁর এই আইডিয়াটি দারুণ কাজে আসে। এটি একটি রেকর্ডও তৈরি করেছিল। এই লাল পোস্টবক্সটি গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বিশ্বের সবচেয়ে গভীরতম ডুবো পোস্টবক্স হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছিল। খবরটা ছড়িয়ে পড়তেই আরও ডুবুরিরা এটি দেখতে আসতে শুরু করে।
প্রতি বছর এই পোস্টবক্স থেকে ১ হাজার থেকে ১৫০০ চিঠি পর্যন্ত চিঠি পোস্ট করা হয়। নাকানিশির মতে, ‘আমি মনে করি, ডুবো পোস্টবক্সটি সুসামির পর্যটনের জন্য একটি সত্যিকারের সম্পদ।’
বর্তমানে এই পোস্টবক্সটি সমুদ্রের নিচে থাকা অন্যান্য পোস্টবক্সের একটি নেটওয়ার্কের অংশ। যেমন, ২০০৩ সালে ভানুয়াতুর ডাকবিভাগ ডুবো পোস্ট অফিস চালু করে। ২০১৫ সালে মালয়েশিয়া ১৩১ ফুট নিচে ডুবো পোস্টবক্স উদ্বোধন করেছে। এটি বিশ্বের সবচেয়ে গভীরতম ডুবো পোস্টবক্স হিসেবে রেকর্ড ভেঙেছে।
সূত্র: ওয়ার্ল্ড অ্যাটলাস