কী বিচিত্র এই আইসক্রিম

মডেল: বাঁ থেকে সাগুফতা, ওহি পেছনে আফরাহ, আদিবাছবি: সুমন ইউসুফ

সিন্ধু নদের তীরে বিশাল ছাউনি।

মশাল জ্বেলে পুরো ছাউনিটাই আলোকিত করে রাখা হয়েছে। যুদ্ধ চলছে, সর্বোচ্চ সতর্কাবস্থা। বিশেষ করে এখন জিতি-জিতি ভাব। এ রকম সময়েই শত্রুপক্ষ মরিয়া হয়ে রাজার ছাউনিতে আক্রমণ করার চেষ্টা করে।

যুদ্ধ চলছে বিখ্যাত আলেকজান্ডার দ্য গ্রেট আর পাঞ্জাব অঞ্চলের এক রাজা পুরুর মধ্যে। ৩২৬ খ্রিষ্টপূর্বের কথা। আলেকজান্ডারের ধারণা ছিল যে এই রাজা সহজেই হার মেনে নেবেন। কিন্তু পুরু প্রত্যাশার চেয়ে বেশি বীরত্ব দেখিয়েছেন। এমন চললে এই যুদ্ধে আলেকজান্ডারের হারের সম্ভাবনাও আছে।

আলেকজান্ডার চিন্তিত মুখে সামনে থাকা আইসক্রিমের পাথরবাটি তুলে নিলেন। আইসক্রিম বলতে, ফুলের মধুর সঙ্গে বরফ মেশানো আর টুকটাক আনারদানা। যুদ্ধের সময়, এখন এই জিনিস জোগাড় করা খুবই ঝামেলার। নিতান্তই বাধ্য হয়ে আলেকজান্ডার সৈনিক পাঠিয়ে অনেক ঝামেলা করে আনিয়েছেন। আইসক্রিমটা ছাড়া তিনি থাকতেই পারেন না।

হঠাৎ ঢাকের আওয়াজ। পাহাড়ের ওপর লুকিয়ে থাকা পাহারাদার বাজিয়েছে। তার মানে এক ক্রোশ দূর থেকে কেউ আসছে। আলেকজান্ডার আইসক্রিমের বাটি নামিয়ে রাখলেন। ছাউনিতে সবাই ধনুকের ছিলার মতো প্রস্তুত।

কিছুক্ষণ পর আরেকটা ঢাকের বাড়ি। আলেকজান্ডারের শরীর একটু ঢিলে হলো। এবারের ঢাকের বাড়ির অর্থ, আগন্তুক আধা ক্রোশ দূর আছে এবং সে শত্রুপক্ষের কেউ নয়। শত্রু হলে ঢাকের বাড়ি অনবরত পড়তেই থাকত। আর এদিক থেকে শুরু হতো বিষমাখানো তিরের বৃষ্টি।

আলেকজান্ডার আবার আইসক্রিমের বাটি হাতে নিয়েছেন। তাঁর সামনে দাঁড়িয়ে আছেন সেলুকাস। আলেকজান্ডারের এক পারিষদ। সেলুকাস সুখবর নিয়ে এসেছেন। পাঞ্জাবের একাংশের রাজা পুরু পরাজিত ও বন্দী। সেই সঙ্গে একটা খারাপ খবরও এনেছেন। আলেকজান্ডারের সৈন্যরা পাঞ্জাব জিতে আর এগুতে চায় না। আলেকজান্ডারের আরও বেশ খানিকটা এগিয়ে গঙ্গারিডি নামের জায়গাটা দেখার খুব শখ ছিল। বেশ সবুজ নাকি জায়গাটা। কিন্তু একে তো নদী-নালা-কাদার দেশ, তার ওপর শক্তিশালী নন্দ সাম্রাজ্য! বিশেষ করে ওই গঙ্গারিডি অঞ্চলের হস্তীবাহিনীর খুব কুখ্যাতি। যুদ্ধক্ষেত্রে তারাই নাকি প্রতিপক্ষের সৈন্যদের পিষে ফেলে! আলেকজান্ডারের সৈন্যরা এখন নিজের ভিটা মেসিডোনিয়ায় ফিরে যেতে চায়। আলেকজান্ডার মন খারাপ করলেন না। কারণ, রাজা পুরুর কাছ থেকে অদ্ভুত এক যন্ত্র হস্তগত করেছে তাঁর সৈন্যরা, সেটা এখন আলেকজান্ডারের সামনে। এটা দিয়ে নাকি যেকোনো জায়গায়, যেকোনো সময় যাওয়া যায়।

আলেকজান্ডার বললেন, ‘সেলুকাস, আমি এই মুহূর্তে দুটো ঘোষণা করতে চাই।

‘এক, পুরুর রাজাকে ছেড়ে দিয়ে তাঁর রাজত্ব ফিরিয়ে দেওয়া হোক। বীরত্বের সম্মান রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। তবে, কোষাগারটা ফেরত দিয়ো না।

‘দুই, এই যন্ত্র করে চলো আমরা বাংলা মুলুকে যাই। তুমি আর আমি। বাকিরা সব মেসিডোনিয়ায় ফিরে যাক।’

সেলুকাস দুটো ঘোষণাতেই হতভম্ব। কোনোমতে উত্তর দিলেন, ‘আপনার হুকুম দাসের কাছে শিরোধার্য।’

ওদিকে আইসক্রিম খাওয়ার তৃপ্তিতে আলেকজান্ডার যেন ঘোরের ভেতর চলে গেছেন। কোনোমতে বললেন, ‘সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এ দেশ!’

১৯৪৭ সাল। ব্রিটিশরা ভারত-পাকিস্তান নামের দুটো দেশ ভাগ করে এই অঞ্চল ছেড়েছে। ১৯০ বছর পর স্বাধীনতা পেয়ে উপমহাদেশের মানুষেরাও কেমন যেন হকচকিয়ে গেছে। দেশান্তর, দাঙ্গা যেমন আছে, আবার ফিরিঙ্গিমুক্ত একটা দেশ পাওয়ার আনন্দও আছে।

ঠিক এমন একটা অবস্থায় আলেকজান্ডার আর সেলুকাস নামলেন ঢাকা শহরে। রাজা পুরুর ওই অদ্ভুত যন্ত্রে চড়েই। প্রাদেশিক রাজধানী ঢাকার মেরামতও তখন চলছে জোরেশোরে।

এই অঞ্চলের মানুষ তখনো প্রচুর ইউরোপিয়ান দেখে অভ্যস্ত। কাজেই আলেকজান্ডারকে দেখে তাদের কোনো হেলদোল হলো না। কিন্তু আলেকজান্ডারের হলো। সাধের গঙ্গারিডিতে পা রেখেছেন, এই খুশিতে একটা আইসক্রিম না হলে চলে? মৃদুস্বরে ডাকলেন, সেলুকাস...

সেলুকাস তালেবর মানুষ। তিনি এর মধ্যেই আইসক্রিমের খোঁজখবর নিয়ে ফেলেছেন। চাইলেই হাতের কাছে আইসক্রিম পাওয়া যায় না সত্যি, কিন্তু দুই-তিন পাড়া পরপর আইসক্রিমের দোকান পাওয়া যায়। তেমনই একটা আইসক্রিমের দোকানে দাঁড়ালেন তাঁরা। চামড়ার মশকে বরফের চাঙরি ভরে ডান্ডা দিয়ে গুঁড়া গুঁড়া করা হচ্ছে। তারপর কলাপাতার ঠোঙায় ভরে ঢালা হচ্ছে সিরাপ।

মডেল: ওহি
ছবি: সুমন ইউসুফ

আজীবন বরফ মেশানো মধু খেয়ে অভ্যস্ত আলেকজান্ডার তাতে কামড় বসিয়ে বিহ্বল হলেন। হৃদয় থেকে কে যেন বলল, ওই কিরে, ওই কিরে, আইসক্রিম! আইসক্রিম!

একটা শেষ করে দিতে বললেন আরেকটা। সেলুকাস মৃদুস্বরে বললেন, ‘আরেকটা না খাওয়াই ভালো, রাজা। ওদের বরফের জলটা খুব একটা সুবিধার নয়। আপনার রাজকীয় পেটে ঝামেলা হতে পারে।’

তারপর ভয়ে ভয়ে তাকালেন আলেকজান্ডারের দিকে। নিশ্চয়ই একটা বকা খাবেন। কিন্তু তাকিয়ে দেখেন, আলেকজান্ডার চোখ-মুখ কুঁচকে পেট খামচে ধরেছেন। এর মধ্যেই তাহলে কাজ শুরু হয়ে গেছে! সেলুকাস তাড়াতাড়ি রাজাকে নিয়ে ছুটলেন পুরুর ওই যন্ত্রের দিকে। আগে একটা ভালো সরাইখানা খুঁজে উঠতে হবে তাতে।

চকবাজার।

সম্ভ্রান্ত এক ব্যবসায়ীর বাসায় আলেকজান্ডারের দাওয়াত। অনেক খুঁজে সেলুকাস এই দাওয়াত জোগাড় করেছেন। কাঠের চারকোনা বাক্সে হাতল ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বরফ গুঁড়া করা হচ্ছে। তবে এই পানি বিশুদ্ধ। গুঁড়া বরফে রেখে জমাট বাঁধানো হবে মোগল আমল থেকে প্রচলিত মালাই কুলফি। এই জিনিস জমাট বাঁধতে সময় প্রয়োজন। ভালো আইসক্রিম খেতে আলেকজান্ডার সেই সময় দিতে রাজি। তারপর পোর্সেলিনের বাটিতে করে যখন আইসক্রিম পরিবেশন করা হলো, আলেকজান্ডার সেটা মুখে দিয়ে অনিন্দ্য এক স্বাদ পেলেন। মুখ ঘুরিয়ে বললেন, ‘বুঝলে সেলুকাস, পুরুকে হারানোটা খুব একটা কাজের কাজ হয়েছে। নইলে এই যন্ত্রও পেতাম না, এই মজার কুলফিও খাওয়া হতো না।’

সেলুকাস জবাব দিলেন না। পুরুর যন্ত্রে তিনি একটা চ্যাটজিপিটি মেশিন পেয়েছেন। ফ্রি ভার্সনটা। সেখানে চ্যাটজিপিটি বলেছে, ষাটের দশকের শুরুতে চলে যেতে। দেশের প্রথম বাণিজ্যিক আইসক্রিম ফ্যাক্টরি বেবি আইসক্রিম তত দিনে নাকি চালু হয়ে গেছে। সেলুকাস চ্যাটজিপিটির সঙ্গে চ্যাট করায় ব্যস্ত। আদৌ কি সেই সময়ে যাওয়া যাবে? যুদ্ধটুদ্ধ নেই তো তখন। সেলুকাস একটু সিরিয়াস। বঙ্গদেশের ভালো ভালো আইসক্রিম খাওয়ানোর ওপরই নির্ভর করছে তার পরবর্তী ইনক্রিমেন্টটা হবে কি না...

আলেকজান্ডার অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। আইসক্রিমের কত জাত! চারকোনা আইসক্রিম, কোন শেপের আইসক্রিম, গোল আইসক্রিম। আর কী অবাক জিনিস, পেছনে একটা কাঠিও লাগানো। বাটিতে করে খাওয়ার ঝামেলা নেই। তিনি মোড়ক খুলেই একটা মুখে দিলেন আর সেলুকাসের দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়ালেন।

সেলুকাসও পাল্টা মাথা নাড়ালেন। কী জন্য মাথা নাড়ানো, সেলুকাস ধরতে পারেননি। তাঁর ধরার দরকারও নেই। তাঁর দরকার ইনক্রিমেন্ট। রাজা যেভাবে মাথা নাড়ালেন, কাজ মনে হয় হয়ে গেছে।

‘বুঝলে সেলুকাস, এই বেবি আইসক্রিম কিন্তু ভালোই। কিন্তু সকালে এক দাম, বিকেলে অর্ধেক দামের কারণটা ঠিক ধরতে পারলাম না।’

কারণটা সেলুকাস জানেন। চ্যাটজিপিটিকে জিজ্ঞাসা করে জেনেছেন। চারপাশে ফোম বসানো যে আইসক্রিমের বাক্স হাতে করে নিয়ে আইসক্রিমওয়ালারা ঘোরে, বিকেল পর্যন্ত তাতে আইসক্রিম জমাট থাকে। বিকেলের পরই তাতে গলা গলা ভাব চলে আসে। সে সময় আইসক্রিমওয়ালারা কোনোমতে অর্ধেক দামে, পারলে আরও কমে সব বেচে দিয়ে বাসায় যায়। কিন্তু রাজাকে এ কথা বলে দিলে সেলুকাস আর কিসের পারিষদ! তিনি মুখ কাঁচুমাচু করে বললেন, ‘রাজা, এই সবকিছু আপনাকে সম্মান জানানোর জন্য। সকালে যে দাম রাখে, বিকেলে আপনার মানসম্মানের কথা চিন্তা করেই দাম কমিয়ে ফেলে।’

আলেকজান্ডার আবার মাথা নাড়লেন। বেবি আইসক্রিম, নামটা মনে রাখতে হবে। মেসিডোনিয়ায় ফিরে গিয়ে এদের ভালো একটা ইনাম পাঠাতে হবে।

মডেল: আফরাহ্
ছবি: সুমন ইউসুফ

এ সময় আলেকজান্ডার আরও কিছু বিচিত্র আইসক্রিম খাওয়ার অভিজ্ঞতা পেলেন। স্যাকারিন দেওয়া পাইপ আইসক্রিম, দাঁত দিয়ে মোড়কটা হালকা ফুটো করে চুষে চুষে খেতে হয়। বা, ধৈর্যে না কুলালে কড়মড় করে চিবিয়েও খেয়ে ফেলা যায়। রাস্তায় আরেক ধরনের আইসক্রিমের ফেরিওয়ালা পাওয়া যায়। এরা খুব কম সময় থাকে। এদের কাছেই পাওয়া যায় নারকেলি আইসক্রিম, কলা দেওয়া আইসক্রিম। আলেকজান্ডারের এখন এমনি এমনি কলা খেতে ভাল্লাগে না। অল্প একটু কলা মেশানো আইসক্রিমে কলার অংশটা খেয়ে তিনি গুপ্তধন আবিষ্কারের মতো সুখ পান। একদিন সেলুকাসের সঙ্গে কথা বলার সময় হাতে ধরা কলা আইসক্রিমের নিচের অংশের কলার টুকরাটা গলে ‘থুপ’ করে নিচে পড়ে গেল। আলেকজান্ডারের খুব ইচ্ছা করছিল, সেটা মাটি থেকে তুলে আবার মুখে দিতে। পারলেন না। রাজরাজড়াদের সবকিছু করা মানায় না।

সেদিনটা আফসোসের চোটে আলেকজান্ডার অনেকক্ষণ ঘুমাতে পারেননি।

নব্বই দশকের শুরু। সেলুকাস একটু চিন্তিত বোধ করছেন। আলেকজান্ডারের সঙ্গে ভালো করে কথা বলা যাচ্ছে না। ইগলু, পোলার কোম্পানি বাজারে এসেছে আগেই। তাদের কাপ আইসক্রিম আবিষ্কার করে আলেকজান্ডার মহামুগ্ধ। একদিন তো বলেই ফেললেন, ‘বুঝলে সেলুকাস, তোমার কাজকর্ম আমার পছন্দ হচ্ছে। কোত্থেকে বের করে ফেলছ আইসক্রিম নিয়ে এত তথ্য! গুপ্তচর-টুপ্তচর ব্যবহার করছ নাকি?’

উত্তেজনায় সেলুকাসের দম বন্ধ হয়ে আসছিল। এখনই ইনক্রিমেন্টের কথা বলে দেবেন নাকি রাজা? তাহলেই মিশন সাকসেসফুল!

আলেকজান্ডার এ বিষয়ে কথা আর বাড়াননি। বরং কয়েক দিন পর থেকে তিনি মত্ত হয়ে উঠেছেন চকবার নিয়ে। কী তেলেসমাতি এই আইসক্রিমে! চোখে দেখলে মনে হয় কালচে একটা আইসক্রিম, কামড় দিলেই কড়মড় করে ওপরের ক্রাঞ্চি অংশটা ভেঙে যায়। আর তখনই মুখে গিয়ে পড়ে একেবারে সফেদ নরম ক্রিমের অংশটা। আলেকজান্ডার যতই চেষ্টা করেন ভদ্র–সভ্যভাবে খাওয়ার, ততই আইসক্রিমটা তাঁর হাত-কনুই বেয়ে বেয়ে পড়ে একটা যাচ্ছেতাই অবস্থা। মেসিডোনিয়ার অভিজাত মহলে তার এখনকার অবস্থা দেখলে সবাই মুখ টিপে হাসবে।

এর একটা সমাধান বের করেছেন সেলুকাস। কাচের একটা গ্লাস দিয়েছেন চকবারের সঙ্গে। এখন আর হাতে গলে যাওয়ার ভয় নেই। আলেকজান্ডার আনমনা হয়ে চকবার খান, গলে গেলে সেটা গ্লাসের ভেতরে গিয়ে পড়ে। মাঝেমধ্যে গ্লাসের তরল চকলেটে চুমুক দেন রাজা। ফাটাফাটি একটা ব্যাপার।

সেলুকাসকে ধন্যবাদ দেওয়ার জন্য ডাকলেন আলেকজান্ডার। কিন্তু সাড়া পেলেন না কোনো। মেজাজটা আবার খারাপ হলো একটু। ডাকলে হাতের কাছে পাওয়া যাবে না, তাহলে পারিষদ করে লাভটা কী এই ব্যাটাকে? ভাবছিলেন এবার ইনক্রিমেন্টটা দিয়েই দেবেন, থাক। দেওয়া যাবে না এখন। একটু দাবড়ানির ওপর থাক।

মডেল: আদিবা

সেলুকাস এদিকে মহাব্যস্ত। চ্যাটজিপিটি তাঁকে ভালো ঘোরানো ঘোরাচ্ছে। বারবারই সে সেলুকাসকে জানাচ্ছে, এ সময় বেশ কিছু ফ্লেভারড আইসক্রিমের চল শুরু হয়েছে। বিভিন্ন ফলের ফ্লেভার দিয়ে বানানো। আমের ফ্লেভার আছে, কলার ফ্লেভার আছে, অন্যান্য ফ্লেভারও আছে।

এ পর্যন্ত সব ঠিকঠাক। কিন্তু কোথায় পাওয়া যাবে, সে প্রশ্নের উত্তর দেয় না। জিজ্ঞেস করলেই বলে, ‘এ জন্য তোমাকে চ্যাটজিপিটির পেইড ভার্সন কিনতে হবে!’

কোনো মানে হয়? এটুকু তথ্যের জন্য পয়সা দিতে হবে চ্যাটজিপিটিকে? সেলুকাস আবার গলায় মধু ঢেলে চেষ্টা করেন চ্যাটজিপিটিকে প্রশ্ন করতে, ‘অতি প্রিয় চ্যাটজিপিটি, বলো না, কোথায় পাব ফ্রুট ফ্লেভারের আইসক্রিম?’ চ্যাটজিপিটি ঘোরায়...ঘোরায়...আর টেনশনে সেলুকাসের মাথা ঘোরায়। তাহলে কি শেষ রক্ষা হবে না?

ভয়ে ভয়ে সেলুকাস রাজার দিকে তাকান। সম্রাট তত দিনে সফটির প্রেমে পড়েছেন। গাউছিয়ার সামনে দাঁড়িয়ে সফটি খেতে খেতে তিনি সেলুকাসের দিকে গরম চোখে তাকান। সেলুকাস মনে মনে বলেন, পৃথিবীতে নেই কোনো বিশুদ্ধ চাকরি...

২০২৫ সাল।

সেলুকাস ঠিক তাল রাখতে পারছেন না। আলেকজান্ডার রাজা মানুষ। রাজার মতো গাম্ভীর্য নিয়ে চলবেন। তা না করে গত পরশু টার্কিশ আইসক্রিমের সার্ভারের সঙ্গে নেচে নেচে আইসক্রিম নিয়েছেন। সার্ভার তাঁকে তিনবার ঘোল খাইয়েছে। একবার খপ করে আইসক্রিম ধরতে গিয়ে আলেকজান্ডার কোনের বিস্কুট ভেঙে ফেলেছেন। তাতেই খুশি হয়ে রাজার কী খিলখিল করে হাসি!

একজন রাজার সঙ্গে উপযুক্ত আচরণ না করার কারণে সার্ভারের মাথাটা ঘচাং করে ফেলে দেওয়া উচিত ছিল। আলেকজান্ডার তার কিছুই করেননি। ভালো আইসক্রিম পেলে বোধবুদ্ধি হারিয়ে ফেলবেন, এ কেমন কথা!

শুধু টার্কিশ আইসক্রিম নয়, আলেকজান্ডার ভিকারুন্নিসার বেইলি রোড শাখার সামনে দাঁড়িয়ে গোলা আইসক্রিম খেয়েছেন, ইগলু, পোলার, স্যাভয়–জাএনজি-লাভেলো-কোয়ালিটি-ব্লুপ-বেলিসিমো-মি আমোর যত কোম্পানি পেয়েছেন, চেটেপুটে আইসক্রিম খেয়েছেন। আবার আইসক্রিম পারলারে গিয়ে বিদেশি আইসক্রিম চাখতেও ভোলেননি।

একটা শেল অ্যান্ড কোর খেতে খেতে কী মনে করে ডাকলেন সেলুকাসকে।

সেলুকাস একটু বিরক্ত হয়েই এলেন হেলতে–দুলতে। আবার কী হুকুম করবেন কে জানে!

‘এত এত জাতের আইসক্রিম খাওয়ালে, তোমার ওপর বেশ খুশি আমি। যাও, তোমাকে ইনক্রিমেন্ট দেওয়া হলো।’

নিজের কানকে বিশ্বাস হচ্ছে না সেলুকাসের। সত্যি শুনলেন নাকি? এখনই কি ফোন করবেন মেসিডোনিয়ায় বেলাকে? মাসের পর মাস যে রিহার্সেল দিয়ে রেখেছিলেন গানটা, সেটা কি শুনিয়েই দেবেন এবার? নিজের অজান্তেই গুনগুনিয়ে উঠলেন গলায়, ‘ইনক্রিমেন্টটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছ...’

সেলুকাসের ঘোর ভাঙল আলেকজান্ডারের ঘোর লাগা গলায়, কত মজার মজার আইসক্রিম! সত্যিই সেলুকাস, কী বিচিত্র এ দেশ!

আরও পড়ুন