কিশোর-কিশোরীদের মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ওপর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব বাড়ছে। এ বিষয়টি নিয়ে বাবা-মা, শিক্ষক, ডাক্তার এবং নীতিনির্ধারকদের মধ্যে উদ্বেগ ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে, আমেরিকার প্রায় অর্ধেক কিশোর-কিশোরী বিশ্বাস করে যে সোশ্যাল মিডিয়া তাদের এবং তাদের সমবয়সী বন্ধুদের ওপর খারাপ প্রভাব ফেলেছে। এর ফলস্বরূপ, প্রায় একই সংখ্যক কিশোর-কিশোরী বিভিন্ন কারণে তাদের সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার কমিয়ে দিয়েছে।
এই তথ্যগুলো জানা গেছে পিউ রিসার্চ সেন্টারের একটি প্রতিবেদন থেকে, যা গত ২২ এপ্রিল প্রকাশিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র-ভিত্তিক এই জনমত জরিপ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানটি আমেরিকার কিশোর-কিশোরী এবং তাদের মা-বাবার সোশ্যাল মিডিয়া ও স্মার্টফোন ব্যবহারের মনোভাব জানতে এই গবেষণাটি করে। এর মাধ্যমে গবেষকরা বুঝতে পেরেছেন, কিশোর-কিশোরীরা কীভাবে নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারকে দেখছে। এর আগে, গত বছরের ডিসেম্বরে পিউ-এর করা আরেকটি গবেষণায় দেখা গিয়েছিল, আমেরিকার প্রায় অর্ধেক কিশোর-কিশোরী প্রায় সারাক্ষণ অনলাইনে থাকে।
গবেষণায় দেখা গেছে, কিশোর-কিশোরীরা তাদের নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। ৪৫ শতাংশ জানিয়েছে তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক বেশি সময় ব্যয় করে।
গবেষকরা বলছেন, এই গবেষণাপত্র বাবা-মায়ের আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ায় কাজে আসবে। পাশাপাশি, তাঁরা এটাও চান যেন কিশোর-কিশোরীমায়েরা ও নীতি নির্ধারকেরা সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর কাছে তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্য সুররা তাদের প্ল্যাটফর্মে বেশি সময় না কাটায়।
বিশ্বের নানা দেশে কিশোর-কিশোরীদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের জন্য বেশ কয়েকটি আইন ইতিমধ্যে চালু করেছে সেইসব দেশের সরকার। অস্ট্রেলিয়াতে ১৬ বছরের কম বয়সী কিশোর-কিশোরীদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার নিষিদ্ধ করে বিশ্বে প্রথম একটি আইন পাশ করা হয়। এমনকি উটাহ গভর্নর এমন একটি বিলে স্বাক্ষর করেছেন, যেখানে অ্যাপ স্টোর ব্যবহার করতে ব্যবহারকারীর আগে বয়স যাচাই করতে হবে। সেই তথ্য অ্যাপ ডেভেলপারদের সঙ্গে শেয়ার করতে বলা হয়েছে, যাতে কিশোর-কিশোরীদের অনলাইনে অনুপযুক্ত কনটেন্ট দেখা থেকে বাঁচানো যায়।
গবেষণাটি পরিচালনার জন্য, পিউ গত বছর সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে ১৩ থেকে ১৭ বছর বয়সী ১ হাজার ৩৯১ জন কিশোর-কিশোরী এবং তাদের অভিভাবকদের ওপর একটি জরিপ চালায়। গবেষণায় অংশ নেওয়া কিশোরদের মধ্যে ৪৮ শতাংশ মনে করে, সোশ্যাল মিডিয়া তাদের এবং তাদের বয়সী অন্যদের ওপর বেশিরভাগই নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। ২০২২ সালে পিউ যখন ভিন্ন একটি জরিপ করে তখন একই প্রশ্নের উত্তর ছিল তখন ছিল ৩২ শতাংশ। বর্তমানে মাত্র ১১ শতাংশ কিশোর-কিশোরী মনে করে যে সোশ্যাল মিডিয়া তাদের সমবয়সীদের জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ইতিবাচক ভূমিকা রাখে। তবে, মাত্র ১৪ শতাংশ কিশোর-কিশোরী মনে করে যে সোশ্যাল মিডিয়া তাদের নিজেদের ওপর বেশিরভাগই নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। যদিও এই সংখ্যা ২০২২ সালে ৯ শতাংশ থেকে বৃদ্ধি পেয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, এই গবেষণাপত্র বাবা-মায়ের আরও জোরালো পদক্ষেপ নেওয়ায় কাজে আসবে। পাশাপাশি, তাঁরা এটাও চান যেন কিশোর-কিশোরীমায়েরা ও নীতি নির্ধারকেরা সোশ্যাল মিডিয়া কোম্পানিগুলোর কাছে তরুণ প্রজন্মের মানসিক স্বাস্থ্য সুররা তাদের প্ল্যাটফর্মে বেশি সময় না কাটায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, কিশোর-কিশোরীরা তাদের নিজেদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারের আগের থেকে অনেক বেশি সচেতন হয়েছে। ৪৫ শতাংশ জানিয়েছে তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক বেশি সময় ব্যয় করে। এই সংখ্যা ২০২২ সালে ছিল ৩৬ শতাংশ। আর ৪৪ শতাংশ কিশোর বলেছে তারা সোশ্যাল মিডিয়া ও তাদের স্মার্টফোনে ব্যয় করা সময় কমিয়েছে।
প্রতিবেদনে এক কিশোর লিখেছে, ‘সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার আমার বয়সী ছেলে-মেয়েদের মধ্যে হতাশার প্রধান কারণ। কেন না বেশিরভাগই সোশ্যাল মিডিয়ায় অপরিচিত ব্যক্তিদের মতামত বা কমেন্টে অনেক বেশি প্রভাবিত। এমনকি অনেকে এই ধরনের কমেন্টের কারণে মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে। প্রতিবেদনটিতে আরও জানান হয়, সোশ্যাল মিডিয়ার প্রভাব লিঙ্গ ও জাতিভেদে কিছুটা ভিন্ন হয়। কিশোরী মেয়েরা কিশোর ছেলেদের তুলনায় কিছুটা বেশি প্রভাবিত সোশ্যাল মিডিয়া দ্বারা। সোশ্যাল মিডিয়ার কারণে তাদের নিয়মিত ঘুম, পড়ালেখা, মানসিক স্বাস্থ্য এবং আত্মবিশ্বাসকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। গবেষকরা বলছেন, এখনই উপযুক্ত সময় সোশ্যাল মিডিয়ার অতিরিক্ত ব্যবহার সম্পর্কে সবাইকে সচেতন করা এবং নীতি নির্ধারকদের এর ক্ষতিকর দিকগুলো বিবেচনা করে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া।