মেঘ থেকে বৃষ্টি জলপ্রপাতের মতো না পরে ফোঁটায় ফোঁটায় পরে কেন

মেঘ আসলে খুব ছোট ছোট জলীয় কণা বা বরফের দানার বিশাল সমষ্টি। বাছাটিলা, সদর, সিলেট, ২৪ এপ্রিলছবি: আনিস মাহমুদ

আকাশে ভেসে থাকা একটি মেঘের ওজন প্রায় দশ লাখ টন পর্যন্ত হতে পারে। সাধারণত, একটি মেঘের আয়তন প্রায় এক কিউবিক কিলোমিটার হয়। আর এর ঘনত্ব প্রতি ঘনমিটারে প্রায় ১.০০৩ কেজি। যার ঘনত্ব চারপাশের বাতাসের ঘনত্বের চেয়ে প্রায় ০.৪ শতাংশ কম। এ কারণেই এত ভারী হওয়া সত্ত্বেও মেঘগুলো আমাদের মাথার ওপর ভেসে থাকে। তবে প্রশ্ন হলো, দশ লাখ টনের মতো বিপুল পানি ধারণ করা মেঘ থেকে কেন বৃষ্টি জলপ্রপাতের মতো একসঙ্গে নিচে না এসে ছোট ছোট ফোঁটায় ঝরে পড়ে? বিশাল জলপ্রপাতের মতো বৃষ্টি হলে কী হতো?

আমরা ছোটবেলা থেকে জেনেছি পানিচক্রের কথা। পানি এর বিভিন্ন অবস্থায় পৃথিবী এবং বায়ুমণ্ডলের মধ্যে অবিরাম চলাচল করে। যেহেতু পানির এই চলাচল চক্রাকার ও বারবার হয়ে থাকে, তাই একে পানিচক্র বলা হয়। পানিচক্রে যখন পানি ভূপৃষ্ঠ থেকে বায়ুমণ্ডলে গিয়ে মেঘে পরিণত হয় তখন বৃষ্টি হওয়া পর্যন্ত আকাশে থাকে।

আরও পড়ুন

মেঘ আসলে খুব ছোট ছোট জলীয় কণা বা বরফের দানার বিশাল সমষ্টি। এগুলো এত হালকা যে সহজেই বাতাসে ভেসে থাকতে পারে। যখন এই ছোট জলীয় কণাগুলো একে অপরের সঙ্গে ধাক্কা খায়, তখন সেগুলো একসঙ্গে মিশে গিয়ে আরও বড় ফোঁটা তৈরি করে। ফোঁটাগুলো যখন যথেষ্ট ভারী হয়ে যায়, তখন বাতাস আর সেগুলোকে ধরে রাখতে পারে না। তখন মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে এই ভারী পানির কণাগুলো মেঘ থেকে নিচে নেমে আসে। এভাবেই শুরু হয় বৃষ্টিপাত।

মাধ্যাকর্ষণ শক্তির টানে এই ভারী পানির কণাগুলো মেঘ থেকে নিচে নেমে আসে

মেঘ থেকে বৃষ্টি একসঙ্গে না পরে ফোঁটায় পড়ার জন্য দায়ী সারফেস টেনশন বা পৃষ্ঠটান এবং এয়ার রেসিস্টেন্স বা বাতাসের বাধা। পৃষ্ঠটান হলো তরল পদার্থের একটি বিশেষ ধর্ম। তরল পদার্থের অণুগুলো একে অপরকে আকর্ষণ করার ফলে এর পৃষ্ঠে বা ওপরের স্তরে একটি টান তৈরি হয়। এই টানের কারণে তরল সব সময় এর পৃষ্ঠের ক্ষেত্রফলকে যতটা সম্ভব ছোট রাখার চেষ্টা করে।

যেকোনো তরল পদার্থ এর পৃষ্ঠটানের কারণে সবসময় সবচেয়ে কম আয়তনের আকৃতি ধারণ করতে চায়। গোলকাকার হলেই কোনো তরল সবচেয়ে কম আয়তনের আকার ধারণ করতে পারে। বৃষ্টির ফোঁটা যখন পড়তে থাকে, তখন এটি প্রায় ওজনহীন অবস্থায় থাকে। ফলে পৃষ্ঠটানের কারণে ফোঁটাগুলো গোল হয়ে যায়।

আরও পড়ুন

অবশ্য, বৃষ্টির গতি যখন বাড়ে, তখন এর ওপর বাতাসের চাপও বেড়ে যায়। এ কারণে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো একটু লম্বাটে গোল হয়ে যায়। কিছুটা মোমবাতির শিখার মতো আকার ধারণ করে। যখন একটি বৃষ্টির ফোঁটা বড় হতে থাকে, তখন এক পর্যায়ে এর উপর অভিকর্ষ বলের আকর্ষণ এবং বায়ুর বাধা সমান হয়ে যায়। এই অবস্থায় ফোঁটার গতি আর বাড়ে না, এটি একটি নির্দিষ্ট গতিতে নিচে পড়তে থাকে। একে টার্মিনাল ভেলোসিটি বলা হয়।

যদি বৃষ্টির ফোঁটা অতিরিক্ত বড় হয়ে যায়, তখন নিচের দিকের বায়ুর বাধা এতটাই শক্তিশালী হয়ে যায় যে সেটি ফোঁটার ওপরের অংশকে চ্যাপ্টা করে দেয়। ফলে ফোঁটাটি ভেঙে আরও ছোট ছোট টুকরায় বিভক্ত হয়ে যায়। এই কারণেই একটি বিশাল জলপ্রপাতের মতো বৃষ্টির ধারা তৈরি হতে পারে না। বায়ুর বাধার কারণে পানির বড় ফোঁটাগুলো বারবার ভেঙে ছোট ফোঁটায় পরিণত হয়।

জলপ্রপাত হলো নদীর একটি বিশাল জলধারা। যা ওপর থেকে নিচে পড়ে। এখানে জলের পুরো ভরটি একটি অবিচ্ছিন্ন প্রবাহ হিসেবে অভিকর্ষের টানে নিচে নামতে থাকে। অন্যদিকে, বৃষ্টি শুরুই হয় বায়ুমণ্ডলের অনেক উঁচুতে থাকা ছোট ছোট জলীয় কণা থেকে। এই কণাগুলো নিচে পড়ার সময় প্রচুর বায়ুর মধ্য দিয়ে আসে, যা এদের ভাঙতে ও ছোট ছোট ফোঁটায় পরিণত করে।

সূত্র: নাসা গ্লোবাল প্রেসিপিটেশন মেজারমেন্ট মিশন, সায়েন্স এবিসি 

আরও পড়ুন