তাপমাত্রা ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা বেশি হলে শিশুরা কম শেখে, গবেষণার তথ্য
বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে গরমের দিনে খুব গরম পড়ে। তাপের কারণে এখানে জীবনযাত্রা ব্যাহত হয়। ছোট-বড় সবার শরীর-মন আক্রান্ত হয়। গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের ওপর গরমের প্রভাব বেশি।
শিশুরা গরমের কারণে কম শেখে। গরমের প্রভাবে শিশুরা কম শব্দ, অক্ষর ও সংখ্যা মনে রাখতে পারে। অতিরিক্ত তাপ শুধু শরীর নয়, মস্তিষ্কের বিকাশ ও শেখার ক্ষমতার ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলে।
ইউনিসেফের তথ্য ব্যবহার করে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, কোনো এলাকার মাসিক সর্বোচ্চ গড় তাপমাত্রা যখন প্রায় ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হয়, তখন ৩ থেকে ৪ বছর বয়সী শিশুদের পড়া, লেখা ও সংখ্যা শেখার অগ্রগতি ২ দশমিক ৮ থেকে ১২ দশমিক ২ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। এর তুলনায় অপেক্ষাকৃত ঠান্ডা অঞ্চলে, যেখানে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকে, সেখানে শিশুদের শেখার অগ্রগতি ভালো।
নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটির গবেষক হোর্হে কুআর্তাস বলেছেন, এ তথ্য প্রথমবারের মতো দেখাচ্ছে, অতিরিক্ত গরম শুধু শারীরিক ক্ষতি করে না, ছোটদের বিকাশকেও প্রভাবিত করে। তিনি ও তাঁর সহকর্মীরা জর্জিয়া, গাম্বিয়া, মাদাগাস্কার, মালাউই, সিয়েরা লিওন ও ফিলিস্তিনের মোট ১৯ হাজার ৬০০ শিশুর ওপর ইউনিসেফের জরিপ বিশ্লেষণ করেছেন। সেখানে অক্ষর চিনতে পারা, সহজ শব্দ পড়া এবং ১ থেকে ১০ পর্যন্ত সংখ্যা চেনার ক্ষমতা যাচাই করা হয়। এরপর দারিদ্র্য, মায়ের শিক্ষা, এলাকার মূল তাপমাত্রা—এসব বিবেচনায় রেখে জলবায়ুর তথ্যের সঙ্গে তুলনা করা হয়।
গবেষণা বলছে, ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা থেকে ক্ষতির প্রভাব দেখা যায়। আরও বেশি তাপে শিশুদের সামাজিক, আবেগীয় ও শারীরিক বিকাশও ব্যাহত হতে পারে। এমনকি গর্ভাবস্থার প্রথম তিন মাসে তাপমাত্রা যদি গড়ে ৩৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে, তবে সন্তানের স্বাভাবিক বিকাশের সম্ভাবনা ৫ দশমিক ৬ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।
দারিদ্র্য, পরিষ্কার পানির অভাব, শহরে বসবাস ও বাড়িতে ঠান্ডা রাখার ব্যবস্থা না থাকা—এসব ক্ষেত্রে ক্ষতির ঝুঁকি আরও বাড়ে। গবেষক কুআর্তাস বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব যারা আগে থেকেই অসুবিধায় আছে, তাদের জন্য হুমকি বাড়িয়ে তোলে।
তবে লন্ডন স্কুল অব হাইজিন অ্যান্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের গবেষক জুলিয়া পেস্কারিনি মনে করেন, সহিংসতা বা রাজনৈতিক অস্থিরতার মতো কারণও শিশুদের বিকাশে বাধা দিতে পারে। কোন পরিস্থিতিতে কোন শিশু বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়, তা আরও গবেষণায় জানা দরকার। সে অনুযায়ী ভবিষ্যতে শিশুদের সুরক্ষা ও অভিযোজনের পরিকল্পনা করা যাবে বলে তিনি মনে করেন।
শিশুর শেখার ভিত্তি ছোটবেলায় তৈরি হয়। শুরুতে পিছিয়ে পড়লে পরে সেটিই বড় ব্যবধানে রূপ নিতে পারে। অল্প সংখ্যা জানা মানে পরে অঙ্কে দুর্বলতা তৈরি হয়। অক্ষর না চিনলে পড়ায় ধীরগতি দেখা যায়। তাই গরমের দিনে সুপেয় পানি, ঠান্ডা পরিবেশ, বিশ্রামের সুযোগ ও শিশুদের স্বস্তিদায়ক পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।
সূত্র: নিউ সায়েন্টিস্ট